Advertisement
২২ মে ২০২৪

হলদিবাড়িতে গরু আটক নিয়ে বিবাদে বন্ধ চাষ

বিএসএফের আটক করা গরু নিয়ে ঝামেলা শুরু। অভিযোগ, ও পারের কিছু মানুষের দাবি, গরু ফেরত দিতে হবে। না হলে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে কাউকে কাজ করতে দেওয়া হবে না। সেই হুমকির জন্য কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ভারতীয়দের চাষবাদ বন্ধ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিবাড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৭:৫৯
Share: Save:

বিএসএফের আটক করা গরু নিয়ে ঝামেলা শুরু। অভিযোগ, ও পারের কিছু মানুষের দাবি, গরু ফেরত দিতে হবে। না হলে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে কাউকে কাজ করতে দেওয়া হবে না। সেই হুমকির জন্য কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ভারতীয়দের চাষবাদ বন্ধ। চা বাগানগুলির পাতা তোলা যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএসএফের আধিকারিকরা। কোনও সুরাহা হয়নি। এলাকা ঘুরে গেছেন বিধায়ক, সাংসদ সকলেই। সমস্যা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন সীমান্ত সংলগ্ন চারটি গ্রামের বাসিন্দারা।

ঘটনার সূত্রপাত বেশ কিছু দিন আগে। দক্ষিণ বেরুবাড়ির সীমান্তবর্তী বারুইপাড়ার বিএসএফের ক্ষুদিরাম ক্যাম্পের সদস্যরা কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে তিনটি গরু আটক করেন। বিএসএফের সন্দেহ, গরুগুলি পাচার করা হয়েছিল। সীমান্তের ও পারের বাসিন্দারা কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে এসে বিএসএফের কাছে আবেদন করে যে, তিনটি গরু তাদের। গরুগুলি ফিরিয়ে দিতে হবে। বিএসএফ ফেরত দেয়নি বলে অভিযোগ। বদলা হিসেবে ও পারের বাসিন্দারা পরে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে যে সমস্ত ভারতীয় গরু চরাতে নিয়ে যায়, তার মধ্যে থেকে দু’টিকে আটক করে।

সীমান্তের ও পারের লোকজন এখানেই থেমে থাকেনি। তারা হুমকি দেয় যে, কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে যারাই চাষ করতে যাবে, তাদের ধরে নিয়ে যাবে। গরু ছাগল যা পাবে তাই নিয়ে নেবে। হুমকির তোয়াক্কা না করে কয়েকজন চাষ করতে গিয়েছিল। তাদের ও পারের বাসিন্দারা লোকজন লাঠি এবং ধারাল অস্ত্র নিয়ে তাড়া করেন। তাঁরা প্রাণ হাতে করে পালান।

তারপর থেকেই দক্ষিণ বেরুবাড়ির সীমান্তবর্তী বারুইপাড়া, ঝাপটতলা, ছিটশাকাতি, বক্সিপাড়া এবং বিন্নাগুড়ি গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এই গ্রামের বাসিন্দাদের প্রায় সব ক’টি পরিবারের কাঁটা তারের বেড়ার ওপারে জমি আছে। জমির পরিমাণ এক হাজার বিঘা। সেখানে বর্ষাকালীন সব্জি চাষ করেন। কেউ পাট চাষ করেছেন। কেউ পাটের পর ধান লাগান। ছোট ছোট চাবাগান আছে ৬৮টা। ভরা বর্ষায় পাতা বেড়ে যাচ্ছে। কেউ গিয়ে তুলতে পারছেন না।

ঝাপটতলা গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ আজিজের ১০ বিঘার এবং বিন্নাগুড়ি গ্রামের নব রায়ের ৬ বিঘার চাবাগান আছে। তারা বলেন, “এখন চা পাতার ভরা মরসুম। গাছের পাতা গাছেই নষ্ট হচ্ছে। পাতা তোলা যাচ্ছে না। পাতা তুলতে গেলেই ওরা তেড়ে আসছে।” বারুইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ দাসের চা বাগান ছাড়াও রয়েছে চাষের ১০ বিঘা জমি। একই গ্রামের ধীরেন দাসের ছ’বিঘা জমি আছে। সেখানে অল্প জমিতে পটল, ঢ্যাঁড়শ লাগিয়েছেন। বাকিটা ধানি জমি। তুলতে যেতে পারছেন না। ধান বোনার জন্য জমি তৈরি করতে পারছেন না। ওদের পটল ভেন্ডি বাংলাদেশিরা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এপার থেকে তাকিয়ে দেখছেন।

সমস্যার কথা তারা বিএসএফকে জানিয়েছেন। ঝাপটতলা ক্যাম্পে বিএসএফের আধিকারিকদের সঙ্গে স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দক্ষিণ বেরুবাড়ির বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধানের প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সদস্য বিমল দাস এবং প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান সারদাপ্রসাদ দাস। তাঁরা দুজনেই বলেন, “আমরা বর্ডার গার্ডের সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং করে সমস্যা মেটানোর কথা বলেছি। সভায় এই প্রস্তাবও করা হয় যে তিনটি গরু ফেরত দিয়ে দুটি গরু ফেরত নিয়ে সমস্যা মেটান। বিএসএফ সব কিছু শুনে গিয়েছে। কোনও সমস্যার সমাধান করেনি।” বিএসএফের বারুইপাড়া সংলগ্ন ক্ষুদিরাম ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার আর কে সিংহ বলেন, “এখানে কোনও সমস্যা হয়নি। সমস্যা মেটানোর কিছু নেই।”

সমস্যা না মেটায় এলাকার বাসিন্দাদের ডাকে গ্রামগুলিতে আসেন সংসদ এবং বিধায়ক। সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন বলেন, “আমি বিএসএফের কাছে প্রকৃত ঘটনা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কেন সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এখনও কোনও উত্তর আসেনি।” বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা বলেন, “বিএসএফই ঝামেলাটা পাকিয়েছে। আমি বিএসএফের কাছে যাইনি। এলাকার বাসিন্দাদের সই সংগ্রহ করা হচ্ছে। তারপর আমরা জেলাশাসকের কাছে গণসাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়ে সমস্যা সমাধানের দাবি জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BSF Cow
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE