অসম থেকে নেপালে পাচারের সময় ধরা পড়ল কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ১২ কেজি হাতির দাঁত। দু’জনকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় রাজস্ব দফতর (ডিআরআই)এর গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার অরুণাচল প্রদেশ থেকে শিলিগুড়ি আসা একটি বেসরকারি বাসে তল্লাশি চালিয়ে ওই দু’জনকে ধরা হয়। শুক্রবার ধৃতদের শিলিগুড়ি এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পুলিশ হেফাজতের রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। গোয়েন্দারা জানান, ধৃতদের কাছ থেকে তিন টুকরো দাঁত মিলেছে। জোড়া দিলে যা প্রায় ৩ ফুটের মত লম্বা। চওড়া ৩৩ মিমি। উদ্ধার করা দাঁত কোনও পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হাতির বলেই গোয়েন্দাদের অনুমান।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম সইফুল ইসলাম এবং সন্তোষ প্রধান। সইফুল ওই বাসের চালক। তার বাড়ি অসমের লখিমপুরে। সেখান থেকে দুটি ব্যাগে হাতির দাঁতগুলি বাসে তোলা হয়েছিল। সন্তোষ শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ির বাসিন্দা। একটি পরিবহণ সংস্থা সন্তোষ কাজ করে। আন্তর্জাতিক বাজারে উদ্ধার হওয়া হাতির দাঁতের মূল্য প্রায় ১ কোটি ১২ লক্ষ টাকা বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
ডিআরআই এর আইনজীবী রতন বণিক বলেন, ‘‘উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বরাবর চোরাশিকারি এবং পাচারকারীরা সক্রিয়। ধৃতরা সেই রকম কোনও চক্রের সদস্য বলে জানা গিয়েছে। আর কারা কারা ঘটনার পিছনে রয়েছে তা গোয়েন্দারা দেখছেন।’’
আরও পড়ুন: সরব মোদী বললেন, তাঁর পরীক্ষা উনিশে
উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলেও সক্রিয় চোরাশিকারি এবং পাচারকারীরা । শিলিগুড়িকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করেই ওই ব্যবসা চলছে। কিছুদিন আগেও বৈকুন্ঠপুর বন বিভাগের অফিসাররা চিতাবাঘের চামড়া ও হাতির দাঁত উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছিল নেপালের এক স্কুলশিক্ষক ও এক হোটেলমালিককে। কালিম্পঙের গরুবাথান থেকেও চোরাশিকারি সন্দেহে গ্রেফতার দুই মণিপুরী যুবকের কাছে অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেলও মিলেছে। এর আগে জলদাপাড়ার জঙ্গল থেকে গন্ডারের শৃঙ্গ-সহ ৮ জনকে সিআইডি গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত হয় একে-৪৭ রাইফেল। ২০০৫ সালে কোচবিহারের বক্সিরহাট, ২০১৩ সালে জলদাপাড়া এবং ২০১৭ সালে ফালাকাটা এলাকা থেকে হাতির দাঁত-সহ দুষ্কৃতীদের ধরা হয়।
গোয়েন্দারা জানান, অসমের কাজিরাঙা ছাড়াও ওরাঙ জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন সময়ে একাধিক হাতি ও গন্ডার শিকারের ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধার করা দাঁত তেমন কোনও এলাকা থেকেই আনা হয়েছে। বাসটি অরুণাচলের পাশিঘাট থেকে শিলিগুড়ি আসছিল।
বুধবার সকালে লখিমপুরে বাসটি দাঁড়ায়। যাত্রীরা ওঠানামা করছিলেন। চালক সইফুল ও সন্তোষও নেমে পড়েন। একদল লোকের কাছ থেকে তারা দু’টি ব্যাগ নেন বলে জানিয়েছেন বাসের যাত্রীরা। মালপত্রের সঙ্গেই সেটি বাসে তুলে তারা শিলিগুড়ির উদ্দেশে রওনা হন। বৃহস্পতিবার সকালে মাল্লাগুড়িতে এসে পৌঁছয় বাসটি। সেখানে গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। দিনভর তাদের জেরা করে নেপালে দাঁত পাচারের উদ্দেশ্যও পরিষ্কার হয়। ডিআরআই-র এক কর্তা বলেন, ‘‘আরও কয়েকজনের নাম মিলেছে। এরাই দাঁতটি নিতে আসত। ব্যাগ বদলের জন্য টেলিফোন নম্বর ছাড়াও বিশেষ কোড দেওয়া হয়েছিল অভিযুক্তদের।’’