Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বাধা পেরিয়ে সফল দৃষ্টিহীন কমলা

জন্ম থেকেই দু’চোখে দেখতে পান না ময়নাগুড়ির দিয়ারবাড়ি এলাকার মেয়ে কমলা রায়। মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল হাতে পেয়ে সে খুশি। ব্রেইল হরফে পড়াশোনা করে ২৯৮ পেয়ে পাশ করেছেন কমলা। রামকৃষ্ণ সারদামণি বিদ্যাপীঠের ওই দৃষ্টিহীন ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করায় খুশি শিক্ষিকারাও। ‘রাইটার’ নিয়ে পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল তাঁকে।

পরিজনের সঙ্গে কমলা। নিজস্ব চিত্র।

পরিজনের সঙ্গে কমলা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০৩:০৪
Share: Save:

জন্ম থেকেই দু’চোখে দেখতে পান না ময়নাগুড়ির দিয়ারবাড়ি এলাকার মেয়ে কমলা রায়। মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল হাতে পেয়ে সে খুশি। ব্রেইল হরফে পড়াশোনা করে ২৯৮ পেয়ে পাশ করেছেন কমলা। রামকৃষ্ণ সারদামণি বিদ্যাপীঠের ওই দৃষ্টিহীন ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করায় খুশি শিক্ষিকারাও।

‘রাইটার’ নিয়ে পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল তাঁকে। তা নিয়েও সমস্যা কম নয়। কে রাইটার হবেন কমলার। শেষে স্কুলেরই দশম শ্রেণির ছাত্রী পূরবী সামন্ত রাইটার হয়। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিকের পড়াশোনার মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। তাই প্রশ্ন বুঝে বলা বা লেখার সময় সমস্যা হয় বলেই শিক্ষিকারাও মনে করছেন। না হলে ফল আরও কিছুটা ভাল হতে পারত বলে তাঁরা দাবি করেন।

মাধ্যমিকেও এই স্কুল থেকে পড়াশোনা করে পাশ করেছেন কমলা। তখন প্রতিবন্ধীদের প্রতিষ্ঠান ‘প্রেরণা’তে থাকতেন। মাধ্যমিক পাশের পর সেখানে থাকার ব্যবস্থা নেই। স্কুলেরই শিক্ষিকা ববিতা দত্ত, সুচিত্রা সরকাররা এগিয়ে আসেন। দেশবন্ধু পাড়ায় সুচিত্রা সরকারের বাড়িতেই থাকতেন কমলা এবং তাঁর মা খরবালা দেবী। সুচিত্রাদেবী গাড়ি করে স্কুলে আসার সময় কমলাকেও নিয়ে আসতেন। কমলার বাবা গেরগেরু রায় দিনমজুরি করেন। মেয়ের পড়াশোনার জন্য খরচ সামান্য কিছু দিতে পারেন। তবে কমলাকে মাধ্যমিকের ফলাফলের পর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের একটি শাখা। তারা ৪৫ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিল কমলার পড়াশোনার জন্য।

কমলা বাংলায় পেয়েছেন ৬০, ইংরেজিতে ৬১, শিক্ষায় ৬২, ইতিহাসে ৬৮ রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ৪৭। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী সুমিতা দাস, সারদা মণ্ডলরাও পড়াশোনায় কমলাকে সাহায্য করেছে। তারা মাঝ্যেমধ্যেই কমলাকে পড়িয়ে আসতেন। এক সময় গান শিখত কমলা। স্কুলের সকলেই তাঁর গানেরও প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতে রেলে চাকরি করতে চান। উচ্চ মাধ্যমিকের পর এখন পড়াশোনার কী হবে? স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী মল্লিক বলেন, ‘‘কলকাতায় রামকৃষ্ণ সারদামণি মিশন, বিবেকানন্দ ভবনে যাতে ও পড়াশোনা করতে পারে সে জন্য স্কুলের শিক্ষিকারাই যোগাযোগ করছেন। আমরা আশা করছি একটা ব্যবস্থা হবে।’’ কমলার মা জানান, স্কুলের শিক্ষিকা, ছাত্রীদের কাছ থেকে সাহায্য না পেলে এতদূর পড়তেই পারত না মেয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

HS Result Visually impaired Student HS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE