Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বধূ ও নাবালিকাকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা পুণ্ডিবাড়িতে

বাড়িতে ঢুকে এক গৃহবধূ ও তার নাবালিকা মেয়েকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগকে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। শনিবার রাতে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুণ্ডিবাড়ির মধ্য কালারায়ের কুঠি এলাকায় ওই ঘটনা ঘটেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৩:১৮
Share: Save:

বাড়িতে ঢুকে এক গৃহবধূ ও তার নাবালিকা মেয়েকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগকে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। শনিবার রাতে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুণ্ডিবাড়ির মধ্য কালারায়ের কুঠি এলাকায় ওই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, ওই বধূর নাম নূরবানুর বিবি। তাঁর মেয়ের নাম ফতেমা খাতুন। নূরবানুরের গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান হয়েছে। ফতেমার গলা, কাঁধ ও হাতে কোপানো হয়। নূরবানুরকে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জখম ফতেমা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একই এলাকার বাসিন্দা মুজফ্ফর সৈয়দকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনার রাতে এলাকার বাসিন্দারা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। এমনকী ওই ব্যক্তির বাড়িতেও একদল বাসিন্দা চড়াও হন। রাতেই পুলিশ গিয়ে তাকে পুণ্ডিবাড়ি ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ধর্ষণের উদেশ্য নিয়েই গভীর রাতে ওই ব্যক্তি নূরবানুরের ঘরে ঢুকেছিল। পুলিশ অবশ্য ওই ঘটনায় খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে। তবে পুলিশ কেন ওই ঘটনায় ধর্ষণের চেষ্টার মামলা রুজু করেনি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের অবশ্য দাবি, অভিযোগে ধর্ষণের চেষ্টার ব্যাপারে কোনও কথাই বলা হয়নি।

কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে তদন্ত হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, টাকার ধারের লেনদেন নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে গোলমালের সূত্রপাত। তবে অত রাতে অভিযুক্ত কেন সেখানে যান, অন্য কারণ ছিল কি না দেখা হচ্ছে। ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছি।”

পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, মধ্য কালারায়ের কুঠির বাসিন্দা ওই বধূর স্বামী লতিফ মিঁয়া দিনমজুরের কাজের সূত্রে ভুটানে থাকেন। শনিবার রাতে মহিলা ঘরে তার পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে ফতেমা সহ তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে ছিলেন। তাদের নাম লতিফা, লায়লা ও লাভলি খাতুন। বাকি দুই সন্তানদের মধ্যে নীলুফা খাতুন ও নূর আলম এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। রাত বারোটা নাগাদ টিনের গেটের শব্দ শুনে ঘুম ভাঙে নূরবানুর। দরজা খুলে তিনি বাইরে বেরোন। কাউকে না দেখে পাটশোলার বেড়া ও কাঠের লড়ঝড়ে দরজা দেওয়া ঘরে ঘুমোতে যান তিনি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই দরজা ভেঙে এক ব্যক্তি ঘরে ঢুকে পড়েন। নূরবানুরের সঙ্গে ওই ব্যক্তির ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। ঘুম ভেঙে তা দেখে মাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় ফতেমা। সে সময়ই প্রথমে নূরবানুরের গলায় ও পরে ফতেমার হাত, গলা, কাঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই ব্যক্তি কোপাতে শুরু করেন। রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে লুটিয়ে পড়েন তাঁরা। তাদের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসতেই অভিযুক্ত দৌড়ে পালিয়ে গা ঢাকা দেন বলে অভিযোগ।

রবিবার দুপুরে কোচবিহার জেলা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন নূরবানুর। ঠিক মতো কথা বলতে পারছিলেননা তিনি। কোনও ক্রমে তিনি বলেন, “ওই রাতে দরজা ভেঙে সে ঘরে ঢুকে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুজফ্ফর। খারাপ কোনও উদ্দেশ্য নিয়েই সে ঘরে ঢুকেছিল বলেই মনে হচ্ছে। মেয়ে জেগে উঠতেই আমাদের ঘরে থাকা দা দিয়েই সে কোপাতে শুরু করে।” ওই মহিলার এক আত্মীয়া জেলেখা বিবি বলেন, “ওদের হতদরিদ্র সংসারে লুঠ করার মতো কোনও দামি জিনিস নেই। শান্ত স্বভাবের ওই বধূকে ধর্ষণের উদ্দেশ্য নিয়েই মাঝ রাতে ওই ব্যক্তি ঘরে ঢুকেছিল বলে আমাদেরও ধারণা গাঢ় হয়েছে।”

ঘটনার তদন্তে পুলিশ রবিবার বিকেলে ওই গ্রামে যায়। বাসিন্দাদের অনেকেই ধৃতের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কথা জানান। এমনকী কেন এখনও হামলায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়নি, সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। স্থানীয় বাসিন্দা ফরিমা বিবি বলেন, “চিৎকার শুনে বেরিয়ে ওই ঘটনা দেখে শিউরে উঠেছি। আমরাও আতঙ্কে রয়েছি।”

তা ছাড়া টাকা ধার নিলেও অত রাতে ওই ব্যক্তি কেন মহিলার বাড়িতে যাবেন সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

wife girl Pundibari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE