খেলাধুলোর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য জলপাইগুড়ি শহরের ১৩টি ক্লাবকে সরকারি অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছে রাজ্যের যুব দফতর। তার মধ্যে ৭টি ক্লাবের জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদন নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। আগামী চার মাসের মধ্যে জলপাইগুড়ি পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। আগামী মে-জুন মাসের মধ্যে পুরসভার ভোট হওয়ার কথা। বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভার ভোটের আগে শহরের কয়েকটি ক্লাবকে সরকারি অনুদান পাইয়ে দিতেই, শাসক দলের নির্দেশেই এই ঘটনা ঘটেছে।
রাজ্যের যুব দফতরের তরফে প্রতি বছরই বিভিন্ন ক্লাবকে খেলাধূলার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেয়। এ বছর সেই তালিকায় শহরের ১৩টি ক্লাবের নাম রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, যার মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক ক্লাবই জেলা স্তরের কোনও খেলার সঙ্গে যুক্ত নেই। এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছে, জেলা ক্রীড়া সংস্থা স্বীকৃত শহরের অনান্য ক্লাবগুলি। সারা বছর বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, তারা কেন সরকারি অনুদান পাবে না, সে প্রশ্ন তুলেছে ক্লাবগুলি। প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরসভার তরফে ক্লাবের নামের তালিকা তৈরি করে যুব দফতরে জমা দেওয়া হয়। সেই মতোই প্রাপকদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ বিষয়ে অবশ্য সরকারি কোনও আধিকারিক মন্তব্য করতে চাননি। জেলা যুব আধিকারিক পিটি ভুটিয়াকে এ দিন ফোন করা হলে, তিনি প্রশ্ন শুনে মন্তব্য করতে চাননি।
বৃহস্পতিবারই ক্লাবের তালিকা জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের হাতে পৌঁছেছে। তালিকা পৌঁছনোর পরেই শহরের ক্রীড়া মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, গত বছরে পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু সহ একাধিক কাউন্সিলর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। পুরসভার ক্ষমতা তৃণমূলের হাতে যাওয়ার পরেই, এ বছর কোন ক্লাব অনুদান পাবে তার তালিকা তৈরি করে প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়। আগামী পুরভোটের সময় শহরের বিভিন্ন এলাকার ক্লাবের সদস্যদের প্রভাবিত করতেই সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। পুরসভার বিভিন্ন কাউন্সিলর যে সব ক্লাবগুলির সঙ্গে যুক্ত তাঁদের তালিকায় রাখা হয়েছে।
পুরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান মোহন বসুর দাবি, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই বিরোধীরা এই অভিযোগ করেছে। গত চৌত্রিশ বছরে বাম আমলে শহরের খেলার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সেই পরিবেশ পুনরুদ্ধার করতেই এই উদ্যোগ। এ নিয়ে বিরোধীরাই রাজনীতি করছে।”
এ দিন তালিকা প্রকাশের পরেই বিভিন্ন ক্লাবের তরফে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব অঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যে ক্লাবগুলি সারাবছর কষ্ট করে খেলাধূলোর আয়োজন করে, তাদের অনেকেই বঞ্চিত বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।” শহরের প্রথম সারির একটি ক্লাবের কর্তা বলেন, “এমন কয়েকটি ক্লাব অনুদান পেয়েছে, যেখানে তাস ছাড়া অন্য কোনও খেলা হয় না। অথচ বছরভর কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, অ্যাথলেটিক খেলেও আমরা অনুদান পেলাম না।”
জলপাইগুড়ি শহর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি তথা ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত অভিযোগ করে বলেন, “সরকারি অনুদান পাইয়ে দিয়ে তৃণমূল ভোটে জিততে পারবে কিনা সন্দেহ তবে যে ক্লাবগুলি খেলাধূলা করে তারা বঞ্চিত হল।” ডিওয়াইএফের সদর জোনাল কমিটির সম্পাদক দীপশুভ্র সান্যালের অভিযোগ, “বিভিন্ন ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। যে ক্লাবগুলি অনুদান পেয়েছে, তার তালিকা সংগ্রহ করা হবে। প্রয়োজন হলে আমরা আইনের দ্বারস্থ হব।”
যদিও, পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বাবুর পাল্টা বক্তব্য, “অনেক ছোট ক্লাবকেও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনুদান পেয়েছে। উন্নয়নের কাজে ভীত হয়েই বিরোধীরা অপপ্রচার করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy