Advertisement
E-Paper

অপুষ্টি থেকেই রোগ, বললেন চিকিৎসকেরা

দেড় বছরের শিবলালের কপালে হাত দিতে চমকে উঠলেন চিকিৎসক বললেন, “গা পুড়ে যাচ্ছে। জ্বর কবে থেকে?” মা হিরামণি ছেলেকে সামলে নিয়ে জানান, “তিন দিন থেকে খুব কাশি। কিছু খেতে চায় না।” রুগ্ণ দুই হাতে কালো ছোপ দাগ দেখে চিকিৎসক শিশুর গেঞ্জি খুলতে বললেন। মা ছেলেকে খালি গা করলেন। পিঠে ও পেটে আরও দাগ দেখে চিকিৎসক কিছু ওষুধ লিখতে বসে বলতে থাকেন, “কী ওষুধ দেব ভাবছি!”

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০১:৫২
রায়পুর চা বাগানে চিকিৎসকেরা। ছবি: সন্দীপ পাল।

রায়পুর চা বাগানে চিকিৎসকেরা। ছবি: সন্দীপ পাল।

দেড় বছরের শিবলালের কপালে হাত দিতে চমকে উঠলেন চিকিৎসক বললেন, “গা পুড়ে যাচ্ছে। জ্বর কবে থেকে?”

মা হিরামণি ছেলেকে সামলে নিয়ে জানান, “তিন দিন থেকে খুব কাশি। কিছু খেতে চায় না।”

রুগ্ণ দুই হাতে কালো ছোপ দাগ দেখে চিকিৎসক শিশুর গেঞ্জি খুলতে বললেন। মা ছেলেকে খালি গা করলেন। পিঠে ও পেটে আরও দাগ দেখে চিকিৎসক কিছু ওষুধ লিখতে বসে বলতে থাকেন, “কী ওষুধ দেব ভাবছি!”

শুধু শিবলাল একা নন। মঙ্গলবার রায়পুর চা বাগানে সকাল এগারোটা থেকে লাইন দিয়ে থাকা মায়ের কোলে রুগ্ণ শিশুদের দেখে উদ্বিগ্ন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। একই ভাবে মায়েদের ফ্যাকাসে মুখ দেখে ওষুধ লেখার কথা ভুলে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ খুঁটিয়ে জানতে চেয়েছেন, ভাতের সঙ্গে কী খান তাঁরা।

রবিবার বাগানে এসে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অপুষ্টিতে মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করলেও এদিন বেলা তিনটে পর্যন্ত প্রায় একশো শ্রমিক ও শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে চিকিৎসকরা জানান, বাগানের মা ও শিশুরা উদ্বেগজনক ভাবে অপুষ্টিতে ভুগছেন। ভিটামিনের অভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে রাতকানা রোগ। মায়েদের অবস্থা আরও শোচনীয়। তাঁরা রক্তাল্পতাজনিত নানা রোগে ভুগছেন। বাগান থেকে ফিরে দলটি মেডিক্যাল কলেজ কর্তাদের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে রিপোর্ট জমা দেবেন।

এ দিন সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছয় সদস্যের মেডিক্যাল টিম বাগানে যায়। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ওষুধ দেন তাঁরা। ওই দলেই ছিলেন শিশু বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ দত্ত, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নন্দিতা বিশ্বাস, চিকিৎসক বিশ্বদীপ বসু মজুমদার এবং তিন জন স্বাস্থ্যকর্মী। অভিজিৎবাবু জানান, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় শিশুদের চামড়ায় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটছে, তারা বিভিন্ন রোগে কাহিল হয়ে পড়েছে। কেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে? চিকিৎসকের উত্তর, “অপুষ্টি জনিত কারণে।”

জলপাইগুড়ির বন্ধ রায়পুর চা বাগানে পরিদর্শনে চিকিৎসক দল। ছবি: সন্দীপ পাল

কেন অপুষ্টিতে ভুগবে না শিবলালের মতো শিশুরা?

ওষুধ নেওয়ার পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মা হিরামণি জানান, বাড়িতে খাবার বলতে নুন দিয়ে দুই বেলা ভাত। সেটাও পেট ভরে জোটে না। শিশুকে ভাত বেটে জলে গুলে দুধের মতো খাওয়ান। তাই যখন চিকিৎসক জানান, ছেলের জ্বর-কাশি না কমলে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে হবে, তখন চুপ করে থাকেন তাঁরা। প্রিয়াঙ্কা মুণ্ডার এক বছরের ছেলে নন্দী কয়েকদিন থেকে জ্বরে ভুগছে। ওষুধ খেয়ে কিছু হচ্ছে না। ছেলের শরীরে কালো ছোপ দাগে ভরেছে। একই প্রশ্ন তাঁদের, পয়সা কোথায় যে, ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে মেডিক্যালে নিয়ে যাবেন?

বাগানের পরিত্যক্ত হাসপাতালে ওই অস্থায়ী শিবিরে ভিড় উপচে পরে। বিশ্বদীপর ঘরে হাতে পায়ে থিকথিকে ঘা নিয়ে হাজির বুধুয়া মুণ্ডা, বিক্রম এতয়ার মতো অনেকে। ভিড় ঠেলে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ২৪ বছরের যুবক রাজেশ ওঁরাও জানান, তিনি রাতে কিছুই চোখে দেখেন না। একই সমস্যা নিয়ে হাজির ৩০ বছরের নন্দা মুণ্ডাও। রোগীদের পরীক্ষার ফাঁকে চিকিৎসক বলেন, “স্রেফ অপুষ্টির জন্য ওঁরা নানা রোগে ভুগছেন। ভিটামিনের অভাব রয়েছে। কয়েকজন রাতকানা রোগী পেয়েছি। রক্তাল্পতা সহ আরও কিছু কারণে চামড়ার রোগ বেড়েছে।” তিনি জানান, বেশ কিছু রোগী তাঁরা পেয়েছেন, যাঁদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো জরুরি। অনেককে রক্ত দিতেও হতে পারে বলে জানান তাঁরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ফিরে গিয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। কারণ, কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে সমস্যা বাড়বে। চিকিৎসা করতে এসে এ দিন একই অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলেন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ নন্দিতাদেবীও। তিনি জানান, মায়েদের অবস্থা ভাল নয়। রক্তাল্পতায় কাহিল তাঁরা। মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “সমস্যাটি তাঁদের নজরে এসেছে। হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

malnutrition jalpaiguri biswajyoti bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy