Advertisement
১৭ মে ২০২৪

অসহযোগিতায় থমকে লক্ষ্যভেদের স্বপ্নপূরণ

তিরন্দাজি ওদের কাছে নতুন নয়। ডুয়ার্সের আদিবাসী মহল্লায় তির ধনুক ব্যবহার স্বভাবজাত। সুপ্রিয়া মাহাতো, রোহন পাকড়া, জয়শ্রী রায়, সুশান্ত, নবনীতা তা-র মতো কয়েক জন সেই সুবাদে কেউ পাড়ার প্রতিযোগিতায় প্রথম, আবার কেউ বিদ্যালয় স্তরে বা জেলা স্তরে তিরন্দাজিতে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

অনুশীলনে জয়শ্রী এবং সুপ্রিয়া (ডান দিকে)।নিজস্ব চিত্র।

অনুশীলনে জয়শ্রী এবং সুপ্রিয়া (ডান দিকে)।নিজস্ব চিত্র।

অনিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩০
Share: Save:

তিরন্দাজি ওদের কাছে নতুন নয়। ডুয়ার্সের আদিবাসী মহল্লায় তির ধনুক ব্যবহার স্বভাবজাত। সুপ্রিয়া মাহাতো, রোহন পাকড়া, জয়শ্রী রায়, সুশান্ত, নবনীতা তা-র মতো কয়েক জন সেই সুবাদে কেউ পাড়ার প্রতিযোগিতায় প্রথম, আবার কেউ বিদ্যালয় স্তরে বা জেলা স্তরে তিরন্দাজিতে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তবে জেলা স্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়ার পরে রাজ্য স্তরে অংশ নিতে কী কী করতে হবে বা কোথায় যেতে হবে, সে সব ঠিক মতো জানা না থাকায় রাজ্য স্তরে অংশ নেওয়া হয়ে ওঠেনি অনেকেরই। তাই জয়শ্রী, সুপ্রিয়া, সুশান্তদের লক্ষ্যভেদের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ছে বারবার।

জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির আমগুড়িতে এলে জয়শ্রীর বাড়িটা যে কেউ দেখিয়ে দেবে। রামমোহন হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী জয়শ্রী ২০০৮-এ জেলা আন্তঃস্কুল ক্রীড়ায় তিরন্দাজিতে প্রথম হয়। ২০১৩-এ আন্তঃবিদ্যালয় ক্রীড়ায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। জেলা স্তরে সফল হলেও রাজ্য স্তরে যেতে পারেননি ময়নাগুড়ি কলেজের প্রথম বর্ষের এই ছাত্রী। নিকোনো উঠোনে দুটো খড়ের গাদা। স্কুল থেকে ফিরে বাঁশের তৈরি দেশি তির নিয়ে খড়ের গাদায় চাঁদমারি তৈরি করে অনুশীলন করত মেয়েটা। ২০১০-১১-এ পাইকা জোনাল, জেলা স্তরের প্রতিযোগিতায় অন্যের তির ব্যবহার করতে হয় তাকে। সেখানে প্রতিযোগীরা বাঁশের তিরধনুক ব্যবহার করতে পারেন না। সে বার জেলা থেকে রাজ্য স্তরে তিরন্দাজিতে একমাত্র প্রতিনিধি জয়শ্রী পঞ্চম স্থান দখল করে। রাজ্য স্তরে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে তাঁকে কাঠের তৈরি ধনুক কেনার কথা ভাবতে বাধ্য হয়েছিল। এ ছাড়াও, সাফল্য এসেছিল ২০১৩-এ, জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ আয়োজিত তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায়।

জয়শ্রীর কথায়, “আন্তঃ বিদ্যালয় ক্রীড়া থেকে দৌড়, লংজাম্প বা হাই জাম্পের মতো খেলাগুলিতে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানাধিকারীদের রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় পাঠানো হয়। কিন্তু তিরন্দাজিতে প্রথম বা দ্বিতীয় হলে রাজ্য স্তরে যাওয়ার সে সুযোগ আছে, আমাদের মতো অনেকেই তা পান না। স্কুল ক্রীড়া সংস্থার তরফে তিরন্দাজিতে সাফল্য পেয়েছে এ ধরনের পড়ুয়াদের সুযোগ সুবিধে করে দিলে ভাল হয়।”

ডামডিম গজেন্দ্র বিদ্যামন্দির হাই স্কুলের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুপ্রিয়া মাহালি ২০০৯-এ জেলা স্তরে প্রথম হয়ে এক বার রাজ্য স্তরে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০১৩-২০১৪ সালে জেলা স্তরে প্রথম হয়েও সুপ্রিয়া রাজ্য স্তরে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। চা পর্যটন উত্‌সবে পরপর তিন বছর তিরন্দাজিতে প্রথম স্থান দখল করেছে সুপ্রিয়া। ওর এই কৃতিত্ব দেখে স্থানীয় ক্লাবগুলি তাদের হয়ে খেলার জন্য ইতিমধ্যে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে। দিনে দু’ঘণ্টা অনুশীলন করেন সুপ্রিয়া। লক্ষ্য তার কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণ। সুপ্রিয়া বলেছেন, “রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগদান করার ব্যাপারে স্কুলে গিয়ে বহু বার যোগাযোগ করেছি। স্কুল থেকে কেউ বলতে পারেনি।” এক সময়ে নিজস্ব ধনুক বা তির ছিল না তাঁর। স্কুলের পঠনপাঠনের সময়ের মধ্যেই অনুশীলন করতে হত। দু’মাস আগে শারীরশিক্ষার শিক্ষক আশিসকুমার টুডুর আর্থিক সহযোগিতায় কাঠের ধনুক কেনে সুপ্রিয়া। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে স্কুলে আর অনুশীলনের সুযোগ মিলবে না।

কী বলছেন প্রশিক্ষক আশিসবাবু? তিনি বলেন, “শুধু সুপ্রিয়া নয়? স্কুলে আরও ছ’সাত জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে যারা জেলা স্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় হয়ে রাজ্য স্তরে এখনও যেতে পারেনি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টি বহু বার ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল ফর স্কুল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস-কে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি। তাঁরা ‘দেখছি আর দেখব’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।” তিনি বলেছেন, “স্কুলের কৃতী ছেলেমেয়েরা আমার কাছে জানতে চায় এর পর তারা কী করবে? আমি উত্তর দিতে পারি না।”

যাদের বিরুদ্ধে উঠতি প্রতিভাদের অসহযোগিতার নালিশ, সেই ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল ফর স্কুল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস-এর সম্পাদক অলক সরকার বলেছেন, “জেলা স্তরে বড় সাফল্য না পেলে আমরা তিরন্দাজিতে পাঠাই না। তবে তিরন্দাজির মান উন্নয়নের জন্য আমরা জেলাশাসকের কাছে সরঞ্জামের জন্য আর্জি জানিয়েছি। কোচিং ক্যাম্প চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anita dutta non-cooperation archery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE