Advertisement
E-Paper

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বাবা-মায়ের

নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া থেকে রোজ লোকাল বাসে শিলিগুড়ি আসার জন্য নির্ধারিত বাস স্টপে আসে ওরা। অনেকের সঙ্গেই পরিবারের লোকজন থাকেন। ওদের কেউ চোখে ঠিকমতো দেখতে পায় না, কেউ আবার হাঁটাচলা করতে পারে না। কারও শোনায় গলদ রয়েছে। কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে কারও।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০১:৪১

নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া থেকে রোজ লোকাল বাসে শিলিগুড়ি আসার জন্য নির্ধারিত বাস স্টপে আসে ওরা। অনেকের সঙ্গেই পরিবারের লোকজন থাকেন। ওদের কেউ চোখে ঠিকমতো দেখতে পায় না, কেউ আবার হাঁটাচলা করতে পারে না। কারও শোনায় গলদ রয়েছে। কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে কারও। দশটা তরুণ তরুণীদের মতোই ওরা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটানোর জন্য প্রতিদিন স্কুলে যায়, পড়াশুনো করে। চেনার চেষ্টা করে অন্যদের মতো সমাজের চারদিকটা।

কিন্তু অনেক সময় বাসে উঠতে না দেওয়া, জোর করে নামিয়ে দেওয়া, ভাড়ায় ছাড় না দেওয়া, আলাদা আসন না রাখার মতো ঘটনায় জেরবার হতে হয় তাদের। শুধু বাস নয়, রেলের নির্ধারিত কামরা বা সরকারি দফতর, হাসপাতালে গিয়ে তাদের হেনস্থা হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। অথচ এহেন ‘জীবনে’র লড়াইয়ে সরকারি নিয়মে আইন মেনে অনেক কিছুই পাওয়ার কথা ওই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু, কিশোর বা তরুণীদের। যা দার্জিলিং জেলায় একেবারেই ঠিকঠাক মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

তাই এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পরিবারের লোক, বাবা-মা সাংগঠনিক ভাবে সে সমস্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা আদায় করার জন্য এ বার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ‘শিলিগুড়ি পেরেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ডিসাবেলড’ নামে ওই সংগঠন সম্প্রতি একটি বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, দার্জিলিং জেলা-সহ গোটা উত্তরবঙ্গের ছবিটা এমনই। দক্ষিণবঙ্গের শহরগুলিতে সমস্যাটা অনেকটাই কম বলে এক দশকের বেশি পুরানো ওই সংগঠনটির সদস্যরা দাবি করেছেন।

সংগঠনের সম্পাদক জুঁই ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “প্রতিনিয়তই আমাদের ছেলেমেয়ের নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে বাস, রেলে সমস্যা হচ্ছে। শিলিগুড়ির মহকুমার নানা প্রান্তে লোকাল বাসে অনেক সময়ই ওদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্ধারিত আসন নেই। রেলের নির্ধারিত কামরা দখল হয়ে থাকছে। মেডিক্যাল কলেজে সার্টিফিকেট আনতে গেলে ঘোরানো হচ্ছে। অথচ সরকারি নিয়মে এমন হওয়ার কথা নয়।” তিনি বলেন, “এ সবই জেলা প্রশাসন এবং জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের দেখার কথা। অথচ তা ঠিকঠাক হচ্ছে না। আমরা জেলাশাসক-সহ সংশ্লিষ্ট সকলপক্ষকে চিঠি দেব। কাজ না হলে কলকাতায় উপরমহলে বিষয়টি জানানো হবে।”

সরকারি ভাবে মূলত সাত ধরনের প্রতিবন্ধী চিহ্নিত করা হয়েছে। দৃষ্টিহীন, কমদৃষ্টি, কুষ্ঠ এ শ্রবণজনিত সমস্যা, লোকো মোটর ডিসেবিলিট, মানসিক অসুস্থতা ও মানসিক প্রতিবন্ধী। ১৯৯৫ সালের ‘পেরসন উইথ ডিসাবিলিটি আইন অনুসারে চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ছাড়াও রোজকার দিনলিপিতে নির্দিষ্ট সরকারি সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে বাস, ট্রেন এবং বিমানে চলাফেরার ক্ষেত্রের ওই চাহিদা সম্পন্নদের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা। থাকবে নির্দিষ্টি আসন, কম ভাড়া। তেমনিই সরকারি দফতরে যাতায়াতে আলাদা র্যাম্প, শৌচাগারও থাকার কথা। যা এই অঞ্চলে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সংগঠনের সদস্যরা জানান, শিলিগুড়ি শহরের শালুগাড়া, জ্যোতিনগর, সুভাষপল্লি, হাকিমপাড়ায় প্রতিবন্ধী স্কুল আছে। শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন ছেলেমেয়েরা আসে। তেমনিই শহরের ছেলেমেয়েরাও দক্ষিণবঙ্গে যাতায়াত করে। বাসে, ট্রেনে রোজ তাদের এই সমস্ত সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে চলতে হচ্ছে। জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক এসডি নামচু বলেন, “জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই নিয়ে প্রতিবন্ধীদের নানা অভিযোগ আসছে। বিষয়গুলি দেখছি। সংগঠনের তরফে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দার্জিলিং জেলাশাসক পুনীত যাদব বলেছেন, “ঠিক কী কী সমস্যা হচ্ছে তা জেনে ব্যবস্থা নেব।” শিলিগুড়ি মিনিবাস সিন্ডিকেট সম্পাদক মৃণালকান্তি সরকার বলেন, “অনেক বাসেই প্রতিবন্ধী আসন নেই ঠিকই। একাধিক প্রতিবন্ধী উঠতে চাইলে সমস্যা হচ্ছে। বাস মালিকদের বিষয়টি দেখতে বলেছি।” পরিবহণ অফিসারদের বাস নিয়ম মানছে কি না তা দেখতে বলা হয়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সিপিআরও সুগত লাহিড়িও।

physically challenged students' parents agitation kaushik choudhury siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy