Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আর্থিক অনটনে ধুঁকছে শহরের ক্লাব

জলপাইগুড়ি ক্লাব কোনওদিনই জেলা ক্রীড়া সংস্থার নথিভুক্ত ছিল না। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থার পূর্ণ নথিভুক্ত ক্লাব ছিল ১২টি। তার মধ্যে ৬টি ক্লাব এখন আর নেই। পুরনো ক্লাবগুলির মধ্যে ছিল হোয়াইট বর্ডার। খেলাধুলায় আর এই ক্লাবের কোনও ভুমিকা আর নেই। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় বতর্মানে পূর্ণ নথিভুক্ত ক্লাবের সংখ্যা এখন ২০টি। আংশিক নথিভুক্ত ক্লাবের সংখ্যা ২৫টি।

মিলন সঙ্ঘ ক্লাবের বাস্কেটবলের প্রশিক্ষণ বন্ধ দীর্ঘ দিন।—নিজস্ব চিত্র।

মিলন সঙ্ঘ ক্লাবের বাস্কেটবলের প্রশিক্ষণ বন্ধ দীর্ঘ দিন।—নিজস্ব চিত্র।

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৭
Share: Save:

জলপাইগুড়ি ক্লাব কোনওদিনই জেলা ক্রীড়া সংস্থার নথিভুক্ত ছিল না। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থার পূর্ণ নথিভুক্ত ক্লাব ছিল ১২টি। তার মধ্যে ৬টি ক্লাব এখন আর নেই।

পুরনো ক্লাবগুলির মধ্যে ছিল হোয়াইট বর্ডার। খেলাধুলায় আর এই ক্লাবের কোনও ভুমিকা আর নেই। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় বতর্মানে পূর্ণ নথিভুক্ত ক্লাবের সংখ্যা এখন ২০টি। আংশিক নথিভুক্ত ক্লাবের সংখ্যা ২৫টি। তার মধ্যে শহর বাদে পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকটি ক্লাব আছে। পূর্ণ নথিভুক্ত ক্লাবগুলি একাধিক খেলায় অংশ নেয়। আংশিক নথিভুক্ত ক্লাবগুলি একটিমাত্র খেলায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে রাজ্য সরকার প্রদত্ত সরকারি অনুদান পেয়েছে মাত্র দু’টো পূর্ণ নথিভুক্ত ক্লাব। বাকি সবই আংশিক নধিভুক্ত এবং অন্যান্য ক্লাব পেয়েছে।

জলপাইগুড়ি জেলার দ্বিতীয় প্রাচীন ক্লাব জলপাইগুড়ি টাউন ক্লাব। ১৮৯৮ সালে স্থাপিত জলপাইগুড়ি শহরে তখন মুষ্টিমেয় সরকারি কর্মচারী, পুরসভার কর্মী এবং চা শিল্পপতি এবং তাদের হেড অফিসের কর্মচারীরা বাস করতেন। তাঁরা নিজেদের খেলাধুলার তাগিদে এই ক্লাবটি গঠন করেন। পরে সন্তোষকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সত্যেন্দ্রপ্রসাদ রায় এই দুই ক্রীড়া প্রেমিক চা শিল্পপতির চেষ্টায় ১৯৩০ সালের পর ক্লাবটি বড় হয়।

তখন অন্য কোনও ক্লাব না থাকায় পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের মধ্যে লিগ প্রথায় ফুটবল খেলা হত। সমস্ত খেলা সেই সময় এবং এখনও কোন বড় টুর্নামেন্ট এই ক্লাবের মাঠেই হয়ে থাকে। ফুটবলে এই ক্লাবটি দু’জন নামি ফুটবলার উপহার দিয়েছে। তাঁরা হলেন রুনুু গুহঠাকুরতা এবং মনিলাল ঘটক। রুনুু গুহঠাকুরতা পরে মোহনবাগান ক্লাবে খেলেন এবং হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন মণিলাল ঘটক। পরে ইস্টবেঙ্গলে খেলেন এবং ভারতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। এই ক্লাবটি ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল এবং অ্যাথলেটিকে নিয়মিত অংশ নিত। এখন তার সঙ্গে ব্যাডমিন্টন এবং টেবিল টেনিস যোগ হয়েছে। ষাটের দশকে এই ক্লাবে উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম একটি ছোট স্টেডিয়াম তৈরি হয়। পরে সেই স্টেডিয়ামটি বাড়ানো হয়।

এখন জলপাইগুড়ির ক্লাবগুলির আর্থিক অবস্থা ভাল না। টাউন ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক তাপস দত্ত বলেন, “আমাদের রোজকার খরচ মেটাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দু’টি অ্যাকাডেমি আছে। টেবিল টেনিসের অ্যাকাডেমি করারও পরিকল্পনা আছে। সমস্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের টাকা জোগাড় করতে এখন সমস্যা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকার যে সমস্ত ক্লাবের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছেন তার কোনও টাকা এই ক্লাবের ভাগ্যে জোটেনি। মুখ্যমন্ত্রী এই ক্লাবটির উন্নয়নে জন্য আর্থিক অনুদান ঘোষণা করেছেন। সেই টাকা এখনও আসেনি।

উনিশ শতকের শেষে জলপাইগুড়ি ক্লাব এবং জলপাইগুড়ি টাউন ক্লাব গঠিত হওয়ার বিয়াল্লিশ বছর পরে জলপাইগুড়ির বাকি ক্লাবগুলি গঠিত হয়। সেগুলির এখন কেমন অবস্থা?

১৮৯৬ সালে ইংরেজদের তৈরি জলপাইগুড়ি ক্লাবের পাল্টা হিসেবে জলপাইগুড়ি ইন্সটিটিউট তৈরি করেন স্বদেশীরা। পরবর্তীকালে নাম হয় জলপাইগুড়ি ইয়ং মেন্স অ্যাসোসিয়েশন। ক্লাবের নিজস্ব মাঠে ১৯৪০ সালে খেলাধুলা শুরু হয়। চা শিল্পপতি এবং ক্লাব সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় একসময় ক্লাব চললেও এখন তার দিন গিয়েছে। সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় কোনও রকমে ক্লাব চলছে। এই ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক সুবীর মল্লিক বলেন, আমাদের ফুটবল, ক্রিকেট এবং অ্যাথেলেটিকে বছরভর কোচিং ক্যাম্প করার পরিকল্পনা আছে। সচ্ছ্বল ক্লাব সদস্যদের কাছ থেকে বেশি করে টাকা নিয়ে ক্লাব চালানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া দু’লাখ টাকা এই ক্লাবটি পেয়েছে। সেই টাকা দিয়ে ক্লাবটির কিছুটা সংস্কার করা হবে।

চা-শিল্পের সঙ্গে জড়িত রাউথ পরিবারের ছেলেরা ১৯৪৪ সালে ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবের পত্তন করেন। তখন থেকে এই ক্লাবটি একইভাবে চলছে। ক্লাবে একসময়ে টেনিস খেলা হত। ব্যাডমিন্টনের জন্য ঢাকা কোর্ট (কভার্ড কোর্ট) ছিল। ১৯৬৮ সালে বন্যায় সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়। তারপর আর তা গড়ে ওঠেনি। এখন ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় এই ক্লাব যোগ দেয়।

জলপাইগুড়ি শহরের কদমতলার মিষ্টিমুখ দোকানে কয়েক জন মিলে ১৯৪৬ সালে কদমতলা বয়েজ ক্লাব তৈরি করেন। দিনটা ছিল ১৯৪৬ সালের ১লা বৈশাখ। ১৯৪৭ সালে ক্লাবটির নতুন নামকরণ হয় জলপাইগুড়ি ইয়ং কালচারাল ক্লাব। ১৯৫১ সালে বর্তমান আশ্রমপাড়া এলাকায় ক্লাবটি উঠে আসে। ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যাদের নাম জড়িত, তাঁরা হলেন নসু নিয়োগী, অলোক মুখোপাধ্যায়, ইন্দর সিং তেওয়াড়ি, ষষ্ঠি বসু প্রমুখ। চা-শিল্পপতিদের আর্থিক সহায়তায় ক্লাবটি আগে চলত। এখন সদস্যদের চাঁদার ওপর ভরসা করে চলছে।

১৯৪৩ সালে জলপাইগুড়ি শহরের শিল্পসমিতিপাড়ারা বাসিন্দা অনুপম সেন, বিমল মিত্র প্রমুখ ব্যাক্তিরা তৈরি করেছিলেন মিলন সঙ্ঘ। এই ক্লাবে বাস্কেটবল খেলা শেখানোর জন্য একটি পাকা কোর্ট গঠন করা হয়। পাঁচ বছর ধরে চলে কোচিং। তারপর আর্থিক অনটনের জন্য বাস্কেটবলের কোচিং বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৬ সালে রায়কতপাড়া এলাকার কিছু ছেলে তৈরি করেছিলেন কিশোর সঙ্ঘ। এখনও ক্লাবটির কোনও নিজস্ব মাঠ পর্যন্ত নেই।

এছাড়াও রায়কতপাড়া স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশন, নেতাজি মডার্ন ক্লাব, সঙ্ঘমিত্রা ক্লাব, অগ্রগামী সঙ্ঘ, বিবেকানন্দ স্পোর্টিং অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব, উদয় সঙ্ঘ, জাগ্রত সঙ্ঘ আর্থিক সমস্যায় ধুঁকছে। ক্লাবকর্তারা ব্যবসার দিকে ঝুঁকেছেন। জলপাইগুড়ি শহরের প্রাক্তন খেলোয়াড় সন্তু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “খেলাধুলার প্রসারে আগ্রহী ক্লাবগুলির কথা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ভাবা হচ্ছে না। এমন সব ক্লাবকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যারা খেলাধুলাই করে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amar shohor raja bandopadhay jalpaiguri club
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE