হিমঘরে আলু মজুতের বন্ড না পেয়ে ক্ষুব্ধ চাষিরা রবিবার জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন। ধূপগুড়ির ঠাকুরপাট এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। সকাল নটা থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা চাষিদের অবরোধ আন্দোলনের জেরে ধূপগুড়ি-গয়েরকাটা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়। জানযজে জেরবার হয়ে পড়ে জলপাইগুড়ি লাগোয়া জাতীয় সড়কও। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশের তরফে জাতীয় সড়ক অবরোধের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে।
জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে কথা বলে কেন আলুর বন্ড নিয়ে সমস্যা হলে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় ২৬টি হিমঘর রয়েছে। সেখানে ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত করা সম্ভব। যদিও কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, দুই জেলায় এবার উৎপাদিত আলুর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১০ লক্ষ মেট্রিক টন। এর আগে ২০০৮ সালে একই রকম পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপণন দফতরকে নাজেহাল হতে হয় বলে জানা গিয়েছে। এবার তাই আগাম ব্যবস্থা নিতে হিমঘর মালিকদের নিয়ে দফতরের কর্তারা আলোচনায় বসে ঠিক করেন কিসাণ বিকাশ পত্র, এপিক কার্ড অথবা জন প্রতিনিধিদের শংসাপত্র দেখিয়ে চাষিরা ‘আগে এলে আগে পাবে’ নিয়ম মেনে মাথাপিছু ২০ প্যাকেট থেকে দুশো প্যাকেট আলু মজুতের বন্ড সংগ্রহের সুযোগ পাবে। জেলা কৃষি বিপণন আধিকারিক সুব্রত দে বলেন, “এবার আলুর উৎপাদন অনেক বেশি। ভিন রাজ্যে কিছু যাচ্ছে সব আলু মজুত করা সম্ভব হবে না। ওই কারণে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। ঠাকুরপাটের ঘটনা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”
চাষিদের অভিযোগ, ঠাকুরপাট এলাকার হিমঘর কর্তৃপক্ষ কয়েকদিন আগে জানায়, ৮ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত আলু মজুতের জন্য চাষিদের মধ্যে বন্ড বিলি করবে। এদিন সকালে পরিচয়পত্র নিয়ে অন্তত দেড়শো চাষি হিমঘরের সামনে যায়। ওই সময় সেখানকার ম্যানেজার বন্ড বিলি সম্ভব নয় জানালে ক্ষোভে চাষিরা জাতীয় সড়কে বসে পড়েন। ভয়ে হিমঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় ম্যানেজার ও কর্মীরা। কৃষক গোপাল দত্ত, বিশ্বজিৎ রায় অভিযোগ করে বলেন, “হিমঘরে আলু মজুতের জায়গা থাকতেও মালিক চাষিদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছেন।”
কেন বন্ড দেওয়া হবে না জানতে গিয়ে কাউকে না পেয়ে চাষিদের একাংশ হিমঘর প্রহরীর ঘরে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। যদিও কৃষক উদয় বর্মণ দাবি করেন, “বন্ড লুকিয়ে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে চাষিদের ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। হিমঘরে যথেষ্ট জায়গা থাকতেও চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন সকাল নটা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পথ অবরোধ করে বন্ড বিলির দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ চলে। যদিও হিমঘর মালিক দিলীপ রাম বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে ইতিমধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার বন্ড চাষিদের দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আর বন্ড দেওয়া যে সম্ভব নয় সেটা গত শনিবার নোটিশ দিয়ে জানানো হয়। এর পরেও কেন বন্ড বিলির দাবি উঠছে বুঝতে পারছি না।”
ধূপগুড়ি থানার আইসি যুগলচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “জাতীয় সড়ক অবরোধের অভিযোগে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy