Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কর্মবিরতি পড়ল ১৮ দিনে, আদালতে ভোগান্তি চরমে

নতুন ভবনের শিলান্যাসের পরেও তা অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতি ১৮ দিনে পড়ল। সেই সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে শিলিগুড়িতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তৈরির দাবিতেও সরব।

সংগ্রাম সিংহ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৫
Share: Save:

নতুন ভবনের শিলান্যাসের পরেও তা অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতি ১৮ দিনে পড়ল। সেই সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে শিলিগুড়িতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তৈরির দাবিতেও সরব। দিনের পর দিন আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম না হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। প্রবীণ আইনজীবীদের তেমন সমস্যা না হলেও নবীনদের অনেকে সমস্যায় পড়েছেন বলে বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রেই জানা গিয়েছে। ওই কর্মবিরতিতে সক্রিয়ভাবে সামিল হয়েছেন তৃণমূল মনোভাবাপন্ন আইনজীবীদের অনেকেই। তাঁরাও অনেকে মানছেন, কর্মবিরতির ফলে বিচারপ্রার্থীরা চরম হয়রান হচ্ছেন।

ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব শিলিগুড়ি আদালত লাগোয়া কলেজপাড়া এলাকায় থাকেন। কিন্তু, শহরের বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের সমস্যা, ভোগান্তি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে একদিনের জন্যও গৌতমবাবু আদালতে যাননি কেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা কমিটির কয়েকজন নেতাও মানছেন, তাঁরা বন্ধ, বয়কট, অবরোধের বিরোধী হিসেবে নিজেদের দাবি করার পরেও কেন আদালতের কর্মবিরতি তোলার জন্য মন্ত্রী উদ্যোগী হচ্ছেন না সেটা তাঁরাও বুঝতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সমস্যার কথা শুনে দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সাত দিন আগে জানিয়েছিলেন, তিনি শিলিগুড়ি কার্নিভালের জন্য ব্যস্ত রয়েছেন। ২১ ডিসেম্বর কার্নিভাল শেষ হয়েছে। এখন মন্ত্রী বলছেন, “আমি ২৮ ডিসেম্বরের পর দেখা করব। তবে একটি অনুষ্ঠানে এক আইনজীবীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, সেখানে কথা হয়েছে।”

তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন আইনজীবীদের অনেকেই। শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন দে বলেন, “আমরা এতদিন ধরে আন্দোলনে রয়েছি। সরকারের কোনও প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্‌ করতেও আসেনি। এমনকী, মন্ত্রী গৌতমবাবুও একবারও ফোনেও খোঁজ নেননি। অথচ উনি আমাদের বার অ্যাসোসিয়েশনের একজন সদস্য।” উনি মন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিল বার অ্যাসোসিয়েশনে।

গত ২০১২ সালের ৩১ মার্চ শিলিগুড়ি আদালতের নতুন ভবন উদ্বোধন হবে বলে শিলান্যাস করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের তত্‌কালীন প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল, রাজ্যের তত্‌কালীন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মলয়বাবু সেই সময় জানিয়েছিলেন, ২৬ লক্ষ টাকা এই খাতে বরাদ্দও হয়ে গিয়েছে। শিলান্যাস করার পরে পুরোনো ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। তার পর অজ্ঞাত কারণে সেই কাজ আজও শুরু হয়নি। কেন হয়নি তা জানাতে পারেননি তত্‌কালীন আইনমন্ত্রী থেকে বর্তমান আইনমন্ত্রী। জানেন না উত্তরবঙ্গের মন্ত্রীও। এমনকী বার অ্যাসোসিয়েশনে তৃণমূলের একাধিক প্রাক্তন কাউন্সিলর থেকে পুরসভার মেয়র পারিষদ থাকলেও তাঁরাও এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চান না বলে জানিয়েছেন।

প্রাক্তন আইনমন্ত্রী মলয়বাবু বলেন, “কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কোনও রকম সমস্যা ছিল বলে জানি না। তবে পরে কোনও সমস্যা হলে তা আমার জানা নেই।” বর্তমান আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “আমার দফতরের অফিসাররা বলতে পারবেন। সেটা ওঁদের থেকে জানতে হবে।” শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তথা তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর সমীরণ সূত্রধর জানান, বার অ্যাসোসিয়েশনই যা বলার বলবে। তিনি বলেন, “আমি কোনও কথা বলিনি। যা বলার আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হবে।” অপর সদস্য পেশায় আইনজীবী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা কার্যকরী সভাপতি নান্টু পাল বলেন, “আদালতের ভবন আমরা চাই। আলোচনা করেই এগোতে হবে।”

শিলিগুড়ি আদালতে ৬ টি থানার অন্তত ১৫ টি ফাঁড়ির প্রতিটি থেকে গড়ে ১০ টি করে মামলা রোজ বিচারের জন্য আসে। প্রতিদিন বিভিন্ন আদালতে বিচার হয় প্রায় ২০০ মামলার। তাই জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হলেও আইনজীবী না থাকায় সমস্যা হচ্ছে অনেক বিচারপ্রার্থীর। শিলিগুড়ি সংশোধনাগারেও ভিড় উপচে পড়ছে বলে সরকারি সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri court suspension of work sangram sinha roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE