ডিজেল নয়, কেরোসিন দিয়ে বাস চালানো হচ্ছে বিভিন্ন রুটে, এমনই অভিযোগ উঠেছে কোচবিহারে। জেলার স্থানীয় রুট তো বটেই, এমনকি দূরপাল্লার রুটেও বহু বাসে কেরোসিন তেল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর থেকে প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, কেরোসিনে বাস চালানো হচ্ছে বলে জানেন না তাঁরা। কোচবিহারের ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসার অ্যাবনের ভুটিয়া বলেন, “কেরোসিন দিয়ে জেলায় বাস চালানো হচ্ছে বলে তো জানি না। খোঁজখবর নিচ্ছি।” জেলাশাসক পি উল্গানাথন অবশ্য বলেন, “পরিবহণ দফতরের নিয়ম অনুযায়ী কেরোসিন দিয়ে বাস চালানো যায় না। পরিবহণ, পরিবেশ দফতর, বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলব।”
এর জেরে পরিবেশ দূষণ যেমন হচ্ছে, তেমনই শহরের খোলা বাজারে কেরোসিনের দামও বাড়ছে। যার জন্য ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। একাধিক সংগঠন ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোচবিহার জেলা সদর থেকে জঁয়গা, দিনহাটা, মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ রুটে বেশ কিছু বাস কেরোসিন দিয়ে চালানো হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন পকেট রুটে ওই প্রবণতা বেশি। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িগামী দূরপাল্লার অন্তত ১০টি বাসে কেরোসিন ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলায় অন্তত ১০০টি বাস ডিজেলের বদলে কেরোসিনে চলছে।
কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রাজু রায় বলেন, “কেরোসিন দিয়ে জেলার বেশ কিছু রুটে বাস চালানোর ঘটনা নজরেও এসেছে। কেরোসিনের দাম বাড়ছে। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কারও হেলদোল নেই।” জেলার পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাসগ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “বাস মালিকদের একাংশ বাড়তি লাভের আশায় এমন করছেন। ডিজেল ইঞ্জিনের নির্দিষ্ট বাসে কেরোসিন ব্যবহার করায় ধোঁয়া ছড়াচ্ছে, দূষণের মাত্রাও বেড়েছে।”
বাস মালিক সংগঠনের কর্তারা সরাসরি অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। মিনিবাস মালিক সমিতির জেলা সম্পাদক অনুপ অধিকারী বলেন, “কে কী ব্যবহার করে বাস চালাচ্ছেন তা দেখা আমাদের সাংগঠনিক কাজের মধ্যে পড়ে না। এমন অভিযোগ বা খবর আমাদের কাছে নেই।” কোচবিহার আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সম্পাদক তপন গুহ রায়ের বক্তব্য, “আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ নেই। প্রশাসন দেখুক, কে কী করছেন।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সদস্য জানান, ডিজেলের দাম, যন্ত্রাংশ, টায়ার, চালক, কর্মীদের বেতন গড়ে প্রতি বছর বাড়ছে। সেই তুলনায় যাত্রীভাড়া বাড়েনি। সেই ‘ক্ষতি’ পুষিয়ে দিতেই কেরোসিনের ব্যবহারের সূত্রপাত। বাস কর্মীদের কয়েকজন জানান, ১ লিটার ডিজেলে সাধারণ বাস গড়ে সাড়ে ৩ কিলোমিটার যায়। দাম পড়বে ৫৫ টাকা। ওই রাস্তা যেতে ১ লিটার কেরোসিন দরকার। যার সর্বোচ্চ দাম পড়ে প্রায় ৪০ টাকা। যেমন কোচবিহার-তুফানগঞ্জ প্রায় ৫০ কিলোমিটারের জন্য দরকার হয় প্রায় ১৪ লিটার ডিজেল। এ জন্য ডিজেলের খরচ হয় ৭৭০ টাকা। কেরোসিন তেল হলে তা ৫৬০ টাকায় হয়ে যায়। দিনে তিন বার যাতায়াতে সাশ্রয় হয় ৬৩০ টাকা। প্রতি মাসে ওই হিসাবে প্রায় ১৯ হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়।
বাস মালিকেরা জানাচ্ছেন, কেরোসিন তেলে বাস চালানো সম্ভব। কিন্তু তাতে ইঞ্জিনের আয়ু অনেকটাই কমে। দু’মাস পর ‘ফুয়েল পাম্প’ বদলও করতে হয়। এর জন্য হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হয়। তাও বাড়তি টাকার আশায় অনেকেই কেরোসিন ব্যবহার করছেন বলে দাবি তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy