ভিটেমাটি গ্রাস করেছে নদী। শূন্য দৃষ্টিই সম্বল বীরনগরের অনেক পরিবারে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
পুনর্বাসন ও ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরুর দাবিতে রেল অবরোধ করলেন সর্বস্বান্ত হওয়া পরিবারগুলি। সোমবার সকাল ১০টা থেকে চামাগ্রাম স্টেশনের কাছে রেল অবরোধ করেন সরকারটোলা, চিনাবাজার, বীরনগর ১ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। কিছুক্ষণ পরে তাঁরা পাশেই থাকা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরোধ করেন। স্বপন মণ্ডল, রাজশ্রী মণ্ডল, অনিল রবিদাস, রামপ্রসাদ রবিদাসেরা বলেন, ‘‘আমাদের ঘরবাড়ি-সহ সমস্ত কিছুই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও হেলদোলই নেই। ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ চিনাবাজার এলাকায় কিছুটা ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু করলেও সরকারটোলায় কোনও পদক্ষেপ করছে না।’’
অবরোধের জেরে ওই চামাগ্রাম স্টেশনের দুপাশে দাঁড়িয়ে পড়ে আপ ও ডাউনের দুটি মালগাড়ি। অবরোধের জেরে সাহেবগঞ্জ প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে ফরাক্কা ও ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্রেনটিকে মালদহে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ দিকে জাতীয় সড়কেরও দুপাশে যাত্রীবোঝাই বাস-সহ ছোট-বড় বিভিন্ন গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে। একদিকে লাইন পৌঁছয় ফরাক্কা ব্যারাজ পার করে ফরাক্কা বাজার পর্যন্ত। অন্য দিকে চামাগ্রাম থেকে বৈষ্ণবনগরের ১৬ মাইল পর্যন্ত গাড়ির লাইন পড়ে। বিপাকে পড়েন কয়েকশো যাত্রী। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মালদহ সদর মহকুমা শাসক সন্দীপ নাগ, কালিয়াচক ৩ ব্লকের বিডিও থেকে শুরু করে ডেপুটি পুলিশ সুপার, জিআরপি ও রেল পুলিশ এবং রেলের আধিকারিকরা গিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করলেও আন্দোলনকারীরা অনড় থাকায় অবরোধ চলতে থাকে। ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু ও পুনর্বাসনের দাবিতে এ দিন জেলাশাসকের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছে মালদহ জেলা বামফ্রন্ট।
বৃহস্পতিবার রাতে মার্জিনাল বাঁধ ভেঙে গঙ্গা নদীর জল ঢুকে পড়ে বীরনগর ১ পঞ্চায়েতের সরকারটোলা ও চিনাবাজার গ্রামে। ভয়াল ভাঙনের জেরে দুই গ্রামের অন্তত ১১০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। দুশোর বেশি পরিবার ভাঙনের আশঙ্কায় ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক স্বাধীন সরকারও। পরিদর্শনে এসে দ্রুত ত্রাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তবে ত্রাণ বিলি নিয়ে এখনও ক্ষোভ রয়েছে। অভিযোগ, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কিটগুলি যাদের বাড়ি ভেঙেছে তাদের না দিয়ে যাদের বাড়ি এখনও অটুট রয়েছে তাদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে। যদিও পরে সংশোধিত তালিকা তৈরি করে সেই কিট বিলি হয়। এ ছাড়া বীরনগর স্কুলের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলিকে রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে। শনিবার আরও ২০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়।
ভাঙনে সর্বস্বান্ত কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে চামাগ্রাম স্টেশন সংলগ্ন রেলের পরিত্যক্ত জমিতে। এ দিন সকাল ১০টা থেকে মূলত সেই বাসিন্দারাই চামাগ্রাম স্টেশনের কাছে রেল অবরোধ করেন। অনেকেই রেললাইনের উপরে শুয়ে পড়েন। ওই পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রাজকুমার মণ্ডল, আনিকুল আলম, শঙ্কর রবিদাসরা বলেন, ‘‘যেভাবে নদী এগোচ্ছে তাতে আরও এক কিলোমিটার জুড়ে কোনও বাড়িঘরই থাকবে না। তাই ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই যেন কাজ শুরু করেন। না হলে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ চলবেই।’’ জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, ‘‘পুর্নবাসনের জন্য জমির ব্যবস্থা হচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরুর ব্যাপারে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy