লোকসভায় স্থল সীমান্ত বিল পাশ হওয়ার আগে রাজনৈতিক অশান্তির আশঙ্কায় ছিটমহল সংলগ্ন এলাকায় রাজনৈতিক সভা না করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে মঙ্গলবারই অনুরোধ করেছিল ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। বুধবার একটি বাংলাদেশি ছিটমহলে এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে জটিলতার পরে সেই দাবি আরও জোরদার করল তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশের ছিটমহল শিবপ্রসাদ মুস্তাফিতে চার কিলোমিটার দূরের স্থানীয় কিশামতদশ গ্রামের কদমতলার বাসিন্দা বিকাশ বর্মনের দেহ ঝুলতে দেখা যায়। সদ্য বিবাহিত ওই যুবক ছ’দিন নিখোঁজ ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা মৃতদেহ পড়ে থাকার পরে বুধবার বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে দিনহাটার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। যা নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ছিটমহল সমস্যা তৈরি হওয়ার পর থেকে সেখানকার বাসিন্দারা আইনের কোনও সুবিধে পাচ্ছেন না। সে দিক ভেবেই আমরা ছিটমহল সংলগ্ন স্থানে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবি জানিয়েছি। একটি দেহ উদ্ধারের ক্ষেত্রেই পুলিশ সেখানে যাচ্ছে না। তা হলে কোনও সংঘর্ষ হলে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা সবাই আঁচ করতে পারছেন।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ছিটমহলে পুলিশ যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধে রয়েছে। আইনের মধ্যে থেকে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ওই দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”
গত বৃহস্পতিবারই ছিটমহল লাগোয়া নয়ারহাটে সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, ১১ ডিসেম্বর মশালডাঙা ছিটমহল সংলগ্ন বড়তলায় সভা রয়েছে বিজেপিরও। সেখানে থাকার কথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের। জোরকদমে চলছে মাইক বাঁধার কাজ। মঙ্গলবার কমিটির তরফে রাজনৈতিক সভা না করার জন্য অনুরোধ নিয়ে কটাক্ষ করেছিল বিজেপি। দলের কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে- বলেছিলেন, “বাসিন্দাদের ওই সভায় যোগ দেওয়ার আবেদন জানাতে মশালডাঙা ছিটে যাই। বাসিন্দারা জানান, দীপ্তিমানবাবু তাঁদের যেতে বারণ করেছেন।” বুধবার তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের বার্তা নিয়ে রাহুল সিংহ আসছেন ছিটমহলের বাসিন্দাদের কাছে। এই সভার গুরুত্ব রয়েছে। তাই আমরা তাঁদের সভায় যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। আশা করছি, ছিটমহলের বাসিন্দারা সভায় যোগ দেবেন।”
ছিটমহল বিনিময় কমিটির বক্তব্য, ছিটমহলে কোনও সমস্যা হলে আইনি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় রকমের অসুবিধে তৈরি হয়। ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে ছিটমহলের সংখ্যা ১৬২টি। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঘেরা ১১১ টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে। ভারতীয় ভূখণ্ড ঘেরা জায়গায় বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ যদি বাংলাদেশি ছিটমহলে আসতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁদের ভারতীয় সীমান্ত পার হতে হবে যা ভারত সরকারের অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয়। একইভাবে, ভারতীয় ছিটমহলে যেতে হলে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি লাগবে। না হলে সীমান্ত পার হতে দেবে না বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষা বাহিনী।
ছিটমহল বিনিময় কমিটির দাবি, ওই সমস্যার জেরে ছিটমহলে ঘটে যাওয়া একাধিক অপরাধমূলক ঘটনারও কোনও তদন্ত হয়নি। বছর চারেক আগে মশালডাঙা ছিটমহলেই এক মহিলার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ওই ছিটেই আগুনে পুড়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ২০০৬ সালে পোয়াতের কুঠি ছিটমহলে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে এক যুবক খুন হয়। ওই ছিটেই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কোনও ঘটনারই তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ। মাস দুয়েক আগে ভারতীয় ছিটমহল ভোটবাড়িতে এক গৃহবধূকে তাঁর স্বামী খুন করে বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার ১৮ দিন ধরে ওই মহিলার দেহ বাংলাদেশের মর্গে পড়ে ছিল। অভিযুক্ত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকে। ছিটমহলে দুই দেশের দূতাবাসের মধ্যে আলোচনার পর ১৮ দিন পর ওই দেহ ময়নাতদন্তের জন্য ভারতের মাথাভাঙা থানায় নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে ওই ছিটমহলে গিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy