লোহার রড, বাঁশ, ইট নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর আক্রমণ পরস্পরকে। জখম ৪০ জন ছাত্র। গুরুতর আহত ১৬ জন। মাথায় আঘাত পেয়ে সংজ্ঞাহীন এক ছাত্র ভর্তি মালদহ মেডিক্যালে। বৃহস্পতিবার বালুরঘাট হাসপাতালে আহতদের ছবি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।
শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাবে তাণ্ডব চলল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো থেকে আড়াইটে পর্যন্ত উত্তাল হয়ে রইল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের আইন কলেজ প্রাঙ্গণ। কম করেও ৪০ জন ছাত্র এই ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাঁরা সকলেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র সদস্য-সমর্থক। আহতদের মধ্যে ১৬ জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঠানো হয়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। বালুরঘাট হাসপাতাল সুপার তপন বিশ্বাস বলেন, ‘‘অভিজিৎ সাহা নামে ওই ছাত্রের মাথায় মারাত্মক জখম রয়েছে। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মালদহে রেফার করা হয়েছে। প্রায় ২৪ জন পড়ুয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে হয়।’’
কলেজের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র। কিন্তু তাদের একটি গোষ্ঠী দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাদের হাতেই এখন ছাত্র সংসদ।
অন্য গোষ্ঠীটি মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর অনুগামী আইনজীবী সুভাষ চাকির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। টিএমসিপি সূত্রেই খবর, এ দিনে জখম ছাত্রদের মধ্যে বিপ্লব মিত্র অনুগামী ৭ জন এবং সুভাষবাবুর অনুগামী ৯ জন গুরুতর আহত। শঙ্করবাবু এবং বিপ্লববাবু অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করেন। তবে সুভাষবাবুর দাবি, ‘‘বিপ্লববাবুর অনুগামীরা কলেজের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে মরিয়া। তাই এই গণ্ডগোল।’’
এই আইন কলেজটির ছাত্র সংসদের কর্তৃত্ব নিয়ে সারা বছরই এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল লেগে থাকে। এ দিন সংঘর্ষ ছাত্র সংসদের ঘর থেকে শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে কলেজ প্রাঙ্গণে। কয়েক মিনিটের মধ্যে সারা কলেজ রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। লোহার রড, লোহার পাইপ, বাঁশের লাঠি নিয়ে মারধর শুরু হয়। চলে ইটবৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ র্যাফ নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এক দল ছাত্র কলেজের ফটক আটকে পুলিশ ঢুকতে দেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ভাঙচুরের পরে। বালুরঘাট আইন কলেজে তোলা নিজস্ব চিত্র।
তবে এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করেনি কোনও পক্ষ। জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘অভিযোগ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
কেন এই তীব্র সংঘর্ষ? তৃণমূল সূত্রে খবর, এই কলেজের ছাত্র সংসদ এখন বিপ্লববাবুর অনুগামীদের হাতে। এই গোষ্ঠীর হাতে আছে কলেজের দ্বিতীয় ও প্রথম বর্ষের অধিকাংশ টিএমসিপি সদস্য সমর্থকের সমর্থন। উল্টো দিকে, সুভাষবাবুর অনুগামীদের প্রতি কলেজের জুনিয়র ছাত্রদের সমর্থন তেমন নেই । শাসক দল সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিন সুভাষবাবুর অনুগামী গোষ্ঠীর সিনিয়র ছাত্রদের সঙ্গে বিপ্লববাবুর অনুগামী জুনিয়র ছাত্রদের সংঘর্ষ লাগে।
ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমরনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘সুভাষবাবুর ছেলে শাশ্বতর নেতৃত্বে এক দল ছেলে গন্ডগোল করার চেষ্টা করে। আমাদের সমর্থক জুনিয়ার ছাত্ররা তা রুখে দিয়েছে।’’ শাশ্বতের পাল্টা দাবি, ‘‘সিনিয়রদের মারধর করেছে জুনিয়াররা।’’ বিপ্লববাবু আইন কলেজটির পরিচালন সমিতিরও সভাপতি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কোনও একটা মহল থেকে আইন কলেজটির দুর্নাম করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
কলেজ কর্তৃপক্ষ কী করেছেন? এ দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দুর্জয় চাকি অনুপস্থিত ছিলেন। টিচার ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন সন্তোষ তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘মৌখিক পরীক্ষার পরে শিক্ষকেরা অফিস ঘরে ছিলাম। হঠাৎ করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ এলে উত্তেজনা কমে।’’
কিন্তু কী কারণে সংঘর্ষ লাগে, তা সন্তোষবাবু জানেন না বলে দাবি করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy