আগামী মাস থেকে আলিপুরদুয়ার জেলা আদালতের কাজ শুরু হতে পারে। ইতিমধ্যে জেলা আদালতের পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসকের ভবনের দোতলার পুরোটাই জেলা জজের অফিস এবং আদালত তৈরির জন্য বরাদ্দ করেছেন প্রশাসন। ভবনের সামনে জেলা জজের অফিসের সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। যদিও কবে থেকে জেলা আদালতের কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে সরকারি তরফে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে আইনজীবীদের একাংশের দাবি, আগামী মাসেই নতুন জেলা জজ দায়িত্ব নিতে পারেন।
আলিপুরদুয়ার বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা সরকারি আইনজীবী জহর মজুমদার জানান, “জেলা জজের অফিস এবং এজলাসের পরিকাঠামো দ্রুত গতিতে তৈরি হচ্ছে। আমাদের কাছে খবর রয়েছে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্টের ফুল কোর্ট জেলা জজের নিয়োগের বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তার পরেই আলিপুরদুয়ার নতুন জেলায় আসবেন জেলা জজ।”
আইনজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, জেলা আদালত গঠনের সঙ্গেই তৈরি হবে আরও বেশ কয়েকটি বিশেষ আদালত। যার ফলে নাবালক সংক্রান্ত বিচার, নেশার দ্রব্য, বিদ্যুৎ সংক্রান্ত মামলার বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই মামলাগুলির শুনানির জন্য এতদিন বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীদের জলপাইগুড়িতে যেতে হতো।
জেলাশাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমা শাসকের ভবনের দোতলায় অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালত এবং মহকুমা শাসকের নাজিরখানা রয়েছে। মহকুমা শাসকের চেম্বারকেই সংস্কার করে জেলা জজের চেম্বার করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। চেম্বারের পাশের বড় হলঘরে তৈরি হবে জেলা জজের এজলাস। মহকুমাশাসকের নাজিরখানা অন্য কোনও ভবনে সরানো হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
আলিপুরদুয়ার বার অ্যসোসিয়েশের সাধারণ সম্পাদক সুহৃদ মজুমদার বলেন, “আলিপুরদুয়ার আদালতে ১০টি এজলাশ রয়েছে। জেলার স্বীকৃতি মেলায়, জেলা আদালতের পরিকাঠামো তৈরি হবে। এজলাসের সংখ্যাও বাড়বে। আশা করছি দ্রুত জেলা আদালতের পরিকাঠামো তৈরি হয়ে কাজ শুরু হবে।”
অন্য দিকে, জয়গাঁ ও কালচিনিতে নতুন অতিরিক্ত মহকুমাশাসকের পদ তৈরি করল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক অ্যালিস ভেজ। গত ২০ জুন বিধানসভায় আলিপুরদুয়ার জেলা গঠনের ঘোষণা হতেই বিভিন্ন ব্লক থেকে মহকুমা তৈরির দাবি ওঠে। ইতিমধ্যেই ফালাকাটা, বীরপাড়া-মাদারিহাট, কামাখ্যাগুড়ির বাসিন্দারা মহকুমার দাবিতে সরব হয়েছেন। মহকুমা না হলেও অতিরিক্ত মহকুমা শাসকের দফতর হবে জানতে পেরে খুশি জয়গাঁ ও কালচিনির বাসিন্দারা।
আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক অ্যালিস ভেজ বলেন, “নতুন জেলার পরিকাঠামো তৈরি করতে কয়েক মাস সময় লাগবে। এখনও মহকুমা গঠন নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়নি। তবে ভারত ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ ও কালচিনি থানা এলাকার উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত মহকুমাশাসকের পদ তৈরি করা হয়েছে।” জেলাশাসক জানান, জয়গাঁতে পরিকাঠামো তৈরি হলে অতিরিক্ত মহকুমাশাসক সেখানেই বসবেন। তবে এখনও ওই পদে কেউ যোগ দেননি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে আলিপুরদুয়ারে একজন অতিরিক্ত জেলাশাসক, একজন মহকুমাশাসক এবং পাঁচ জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। দ্রুত আরও দু’জন অতিরিক্ত জেলাশাসক ৪-৫ জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এ দিন সকালে আলিপুরদুয়ারে মহকুমা শাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক ও পূর্ত দফতরে কর্তাদের নিয়ে মহকুমা শাসকের পুরানো ভবনটি ঘুরে দেখেন জেলাশাসক। সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। জয়গাঁ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মিহির গোস্বামী বলেন, “জয়গাঁতে জমি সমস্যা মেটাতে অতিরিক্ত ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক, রাজস্ব আধিকারিকের অফিস তৈরি হবে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। ধীরে ধীরে সব সমস্যাই মেটানো হবে।” প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা পুলিশও তাদের পরিকাঠামো তৈরিতে হাতে দিতে চলেছে।