শুকিয়ে কাঠ পুকুর। বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
চড়া রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারদ চড়তে থাকায় দক্ষিণ দিনাজপুর পানীয় জল ও সেচের জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, নানা ব্লকে পাইপ লাইনে গোলযোগে তপন ব্লকের জলঘরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহ ব্যাহত হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলস্তর নেমে যাওয়ায় মার্ক টু নলকূপগুলি থেকে জল উঠছে না। মেরামতির ব্যবস্থা হচ্ছে না। আরএসপি তপন জোনাল সম্পাদক বিমল তরফদার বলেছেন, “চার দিকে জলের জন্য হাহাকার চলছে। অথচ প্রশাসনের হেলদোল নেই। ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আন্দোলনে নামব।”
মে মাসের প্রথমে এক দিন এই জেলার বালুরঘাট, তপন, হরিরামপুর ও কুমারগঞ্জ ব্লকের একাংশে ঝড় বৃষ্টি হয়। কৃষি দফতর জানায়, ওই দিন বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৩০ মিলিমিটার। তার পর থেকে এ যাবত বৃষ্টির দেখা নেই। গরম বাড়তে থাকায় তপন, গঙ্গারামপুর, হরিরামপুর, বংশীহারি, কুমারগঞ্জ, কুশমন্ডি এলাকায় জলস্তর নেমে গিয়েছে। ছড়াচ্ছে পেটের অসুখ। জমিতে ধান, পাট, সব্জি শুকিয়েছে। বালুরঘাটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঘোরাফেরা করছে। জেলা কৃষি আধিকারিক উৎপল মণ্ডল বলেন, “অবস্থা এমন চললে সমস্যায় পড়বেন চাষিরা। সব্জি চাষও মার খাবে। দ্রুত বৃষ্টি না হলে জেলার পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠবে।”
এলাকার বাসিন্দারা জানান, তপন ব্লকের পাহাড়পুর, সন্ধ্যাপুকুর, লস্কর, ডাংমালঞ্চা, হরিবংশীপুর, নিমগাছি, দৌড়গঞ্জে নলকূপ থেকে জল উঠছে না। সঙ্কটে এলাকার বাসিন্দারা। পুকুর, জলাশয় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। ঘোলা জল খেয়ে বাসিন্দাদের অনেকে পেটের অসুখে ভুগছেন। তৃণমূলের তপন ব্লক সভাপতি আমজাদ মণ্ডল বলেন, “সঙ্কট মোকাবিলায় নলকূপ মেরামতি ও নতুন নলকূপ বসানো হচ্ছে। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক সরবরাহ করা হয়েছে।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা বলেন, “পুরনো নলকূপ সারানো ও নতুন নলকূপ বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। ভোট মিটলে কাজ শুরু হবে।”
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ বছর জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট, ৩৭২৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান এবং ২২০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। সব্জি চাষ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে। বালুরঘাটের ভাটপাড়া অঞ্চলে জলের অভাবে পাটের জমি শুকিয়েছে। কুমারগঞ্জে মোহনা, ডাঙ্গা, বটুনে জলের অভাবে বোরো ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক হারে বনাঞ্চলের গাছ কাটার ফলে এমন পরিস্থিতি বলে পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, জেলার মেহেন্দিপাড়া থেকে হিলি পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় রাস্তা চওড়া করার সময় বহু পুরনো প্রায় ১০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। পরিবর্তে গাছ লাগানো হয়নি। জেলায় বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৭ শতাংশ অথচ পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কমপক্ষে ১৪ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy