Advertisement
০১ মে ২০২৪

টোকাটুকিতে বাধা, চাঁচলে তাণ্ডবে অভিযুক্ত তৃণমূল

টোকাটুকি করায় ৩৫ জন ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা বাতিল করা নিয়ে মঙ্গলবার তুলকালাম হয়ে গেল মালদহের চাঁচল কলেজে। নকল করায় বাধা দেওয়া যাবে না দাবি তুলে এ দিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ কলেজের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে সাড়ে তিনশো ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা ভণ্ডুল করে দেয় বহিরাগতেরা। আধ ঘণ্টা ধরে তাদের তাণ্ডব চলে। অভিযোগের তির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকে। তারা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

চাঁচল কলেজে তাণ্ডবের পর।  ছবি: বাপি মজুমদার।

চাঁচল কলেজে তাণ্ডবের পর। ছবি: বাপি মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০২:৪১
Share: Save:

টোকাটুকি করায় ৩৫ জন ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা বাতিল করা নিয়ে মঙ্গলবার তুলকালাম হয়ে গেল মালদহের চাঁচল কলেজে। নকল করায় বাধা দেওয়া যাবে না দাবি তুলে এ দিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ কলেজের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে সাড়ে তিনশো ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা ভণ্ডুল করে দেয় বহিরাগতেরা। আধ ঘণ্টা ধরে তাদের তাণ্ডব চলে। অভিযোগের তির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকে। তারা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তবে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গাহুল আমিন বলেন, “আমার সামনেই কলেজের ৩ প্রাক্তন ছাত্রের নেতৃত্বে আমার ঘর সহ অফিস ভাঙচুর হয়েছে। কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে সবই রয়েছে।” এ দিন বিকেলে তিনি চাঁচল থানায় জাকির হোসেন, আমানত সরকার ও শুভময় শাটিয়ার-সহ চার জনের নাম করে অভিযোগ করেন। জাকির ও শুভময় চাঁচল-১ ব্লক টিএমসিপি-র সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য। আমানত চাঁচল-২ ব্লক টিএমসিপি-র সভাপতি। তাঁদের কাউকে কলেজে কিংবা বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ফোনও ধরেননি তাঁরা। তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডা বলেন, “তৃণমূলের লোকজন এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। ছাত্র পরিষদের ছেলেরা এর সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।” ছাত্র পরিষদ জানিয়েছে এই ঘটনার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বক্তব্য, “উপাচার্য ও পুলিশ সুপারকে বলেছি রিপোর্ট পাঠাতে। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে ওঁদের।”

মঙ্গলবার চাঁচল কলেজে পরীক্ষায় টোকাটুকি বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে অভিযুক্ত
পরীক্ষার্থীদের বন্ধুবান্ধব ও পরিজনেরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ছিঁড়ে দেওয়া হয়
অন্য পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র। হামলা চালানো হয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঘরে। পড়ে রয়েছে উত্তরপত্র।

চাঁচল কলেজে এ দিন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ইতিহাসের পরীক্ষা ছিল। সকাল দশটায় পরীক্ষা শুরু হয়। হরিশ্চন্দ্রপুর ও সামসি কলেজের ৪৮৮ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিতে বসেছিলেন মোট দশটি ঘরে। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন ঘরের ৩৫ জন ছাত্রছাত্রীকে টোকাটুকি করার অভিযোগে খাতা কেড়ে নিয়ে ক্লাস থেকে বার করে দেওয়া হয়। তাঁরা একে একে বাইরে জমা হন। কিছুক্ষণ বাদেই কলেজের লোহার মূল ফটকের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে জনা পঁচিশেক বহিরাগত। ৭টি ঘরে গিয়ে তারা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে খাতা কেড়ে নেয়। অনেকের উত্তরপত্র ছিঁড়েও ফেলেছে তারা। সে সময়ে কয়েকজন ছাত্র ও দু’জন শিক্ষক ওই বহিরাগতদের বাধা দেন। তাঁদের মারধর করা হয়। গৌরগোপাল বর্মন নামে এক শিক্ষককে চাঁচল হাসপাতালে চিকিৎসাও করানো হয়। তাণ্ডব চলার সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেন। তবে পুলিশ আসার আগেই বহিরাগতেরা কলেজ ছেড়ে চলে যায়। গৌরগোপালবাবু বলেন, “আমার ঘরে ঢুকে ওরা পরীক্ষার্থীদের বলে যে, আর পরীক্ষা হবে না। আমাদের কাছে উত্তরপত্র জমা দিয়ে চলে যাও। আমি বাধা দিতেই ওরা আমাকে মারধর শুরু করে।” গাহুল আমিন বলেন, “মোট ৩৬০ জন পরীক্ষার্থীর খাতা সংগ্রহ করা যায়নি।”

ভাঙচুর হওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঘর।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ১৩৯০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে টুকলি করার অভিযোগে ধরা হয়েছিল। উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের মেঘনাদ সাহা কলেজে ৭১ জন ছাত্র-ছাত্রী টুকলির অভিযোগে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কৃত হন। টুকলি রুখতে গিয়ে আক্রান্ত হন খোদ পরীক্ষা নিয়ামকও। সেখানেও অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের দিকেই। জেলা তৃণমূলের এক নেতার স্ত্রীকে টোকাটুকি করার অভিযোগে বহিষ্কার করার পরেই কলেজে তাণ্ডব শুরু হয়। তারপরেই কলেজ থেকে হোম সেন্টার তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়।

কিন্তু টুকলি রুখতে সেই কড়া পদক্ষেপ নিতেই এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। উপাচার্য গোপাল মিশ্র বলেন, “চাঁচলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রতিনিধিকে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chanchal chanchal college examinaion copying
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE