এক হাজার টাকাতেই চলছে মানুষ পারাপার। আরও হাজার খানেক ফেললে দুদিনের মধ্যে তৈরি হয়ে যাচ্ছে ভোটার কার্ড। সেই কার্ড নিয়ে কেউ পারি দিচ্ছে দিল্লি, কেউবা জয়পুর। মাসের পর মাস শ্রমিকের কাজ করে ফের তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন বাংলাদেশে।
অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে এপারে ঢোকার অবাধ পথ তৈরি হয়ে উঠেছে কোচবিহারের দিনহাটা সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা। ওই পথ ধরেই অবাধে চলছে চোরা কারবার। গরু থেকে শুরু করে সার, লবণ, চিনি সব যাচ্ছে। ওপার থেকে জামাকাপড়ও ঢুকছে। বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা ওই সুযোগ ব্যবহার করছে না, এমন কথাও অস্বীকার করছে না কেউ। দিন দুয়েক আগে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকা নয়ারহাট থেকে দুই বাংলাদেশি সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে নেমে এমনই সব তথ্য উঠে এসেছে বলে পুলিশের দাবি।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জানা গিয়েছে, কাজের খোঁজেই তারা এপারে এসেছে। যে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।” আর বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা সীমান্ত দিয়ে সমস্তরকম বেআইনি যাতায়াত রুখতে সক্রিয়। তার পরেও কিছু ঘটনা ঘটছে।”
কোচবিহার জেলার অধিকাংশ এলাকা বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ঘেরা। জেলার মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, দিনহাটা, সিতাই এবং তুফানগঞ্জের একটি অংশে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত। ওই সীমান্তগুলি দিয়ে গরু পাচার থেকে শুরু করে সমস্তরকমের চোরাচালানের অভিযোগ বহুবার উঠে এসেছে। বিএসএফ তরফেও অভিযান চালিয়ে গরু সহ নানা জিনিস আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছেন অনেকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে নয়ারহাট থেকে শেখ ফরিদ, আব্দুল আলি নামে ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের সঙ্গে ভারতীয় সইফুর রহমান এবং মিজানুর রহমানকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে জাল ভারতীয় ভোটার কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুকারুরকুঠি, গীতালদহকে কেন্দ্র করে মানুষ পারাপারের একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। ওপারেও এই চক্রের সদস্যরা রয়েছে। কারা আসতে চাইছে তার একটি তালিকা তৈরি করে পৌঁছে দেওয়া হয়। তালিকা ধরেই শুরু হয় ভোটার কার্ড তৈরির কাজ। ওই পারেই বাসিন্দাদের কাছে টাকা জমা নিয়ে নেওয়া হয়। চক্রের কিছু সদস্য নজর রাখে সীমান্তে। দলের সদস্যরকা কোন এলাকায় বিএসএফের পাহারা শিথিল রয়েছে, কোন এলাকায় কাটাতার নেই তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সেই মতই ঠিক করা তারিখ দিয়ে দেওয়া হয় বাসিন্দাদের। এর পরেই শুরু হয় পারাপারের কাজ। এপারে বেশ কিছু ঘাঁটি রয়েছে। সীমান্ত টপকানোর পর সেখানেই থাকতে দেওয়া হয় অনুপ্রবেশকারীদের। সেখানেই ছবি তুলে তা ভোটার কার্ড তৈরির কাজ শেষ করা হয়। ওই কার্ড তৈরির জন্য আলাদা ভাবে আরও এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। থাকা, খাওয়ার জন্য নেওয়া হয় আলাদা টাকা।
বিএসএফ এবং পুলিশ সূত্রের খবর, বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলা সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা ওই এলাকা থেকেই মূলত বাসিন্দারা এপারে যাতায়াত করেন। শেখ সিদ্দিক সহ যে ২ জন বাংলাদেশিকে ধরা হয়েছে তারাও কুড়িগ্রাম জেলার। ধৃত দুই ভারতীয় চক্রের সদস্য বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অবৈধ ভাবে সীমান্ত টপকাতে সাহায্য করা এবং আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছে। ভোটার কার্ড দুটি তারাই তৈরি করে দিয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। ওই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত রয়েছে কি না তা দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy