সারদা কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী মদন মিত্রের সমর্থনে দল পথে নামায় ক্ষুব্ধ তৃণমূলের জলপাইগুড়ি শহর ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি জ্যোতিপ্রসাদ রায়। এ দিনই তিনি ব্লক সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দলত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তিনি দলের সঙ্গে ছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “আইন স্বতন্ত্র ভাবে চালিত হবে, এটাই তো হওয়া উচিত। কিন্তু মদনবাবুর ক্ষেত্রে দল পথে নামল কেন?” তা ছাড়া, তাঁর কথায়, “আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবীদের কথা বলতে দিলেন না সরকার পক্ষের আইনজীবীরা। এটাও আমার ভাল লাগেনি।”
জ্যোতিপ্রসাদবাবুর অভিযোগ, দল বিরোধী আসনে থাকার সময়ে যাঁরা সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন, শাসকের ভূমিকায় আসার পরে দলে তাঁরাই কোনঠাসা। সংগঠনের নিয়ন্ত্রণের রাশ এখন দলে ‘সদ্য আগত’দের হাতে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক জ্যোতিপ্রসাদবাবু কংগ্রেসের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের ভাই। ২০১২ সালে জ্যোতিপ্রসাদবাবুকে শহর ব্লক তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি বছরে মে মাসে দলের জেলা সভাপতি পরিবর্তন করা হয়। নতুন জেলা সভাপতি এসে দলের সব কমিটিই নতুন করে গঠন করার কথা ঘোষণা করেন। সে কারণে পুরোনো কোনও কমিটি এখন কার্যকরও নেই বলে জানানো হয়েছে। রবিবার শহরের কামারপাড়ার বাড়িতে বসে দল ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন এই প্রবীণ নেতা। পুরোনো কর্মীদের মর্যাদা না দেওয়া সহ সারদা কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী মদন মিত্রের সমর্থনে দল যে ভাবে পথে নেমেছে তাও জ্যোতিপ্রসাদবাবু মেনে নিতে পারেনি বলে দাবি করেছেন।
জ্যোতিপ্রসাদবাবু এ দিন অভিযোগ করেন, দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীতে তিনি একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। এসএমএস পাঠিয়েও উত্তর পাননি। সে কারণেই মৌখিকভাবে জলপাইগুড়ির সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন এবং জেলায় দলের এক বিধায়ককে তাঁর পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন। কেন মৌখিক ভাবে দল ছাড়ার কথা জানিয়েছেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই প্রবীণ নেতা। জ্যোতিপ্রসাদবাবু বলেন, “তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলে ছিলাম। ২০১২ সালে মৌখিক ভাবে দলের টাউন ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই কারণে পদত্যাগ পত্র না পাঠিয়ে সাংসদ ও বিধায়ককে ফোনে দলত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানাই।”
অন্য কোনও দলে যোগদানের বিষয়ে তিনি এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। তবে জেলার শাসক দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলে থেকেও প্রতিবাদের রাস্তা খোলা ছিল। যদিও, জ্যোতিপ্রসাদবাবুর অভিযোগ, “যাঁরা কয়েকদিন আগে অন্য দল থেকে এসেছেন, তাঁদের গুরুত্ব দিয়ে পুরনো কর্মীদের ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে। এটা ষড়যন্ত্র। কিছুদিন আগেও কংগ্রেস ও সিপিএমে থেকে যারা তৃণমূলকে আক্রমণ করতেন, তাঁদেরই ধরে এনে দলের বিভিন্ন পদে বসানো হচ্ছে।”
অভিযোগ নিয়ে অবশ্য জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “দলনেত্রীর নির্দেশে দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছি। কৈফিয়ত দিলে দলনেত্রীকেই দেব। উনি (জ্যোতিপ্রসাদবাবু) সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলে দল বিরোধী কাজ করেছেন।” জেলা নেতৃত্ব জ্যোতিপ্রসাদবাবুর দলত্যাগের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও, ঘটনাকে ঘিরে জেলা তৃণমূলের অন্দরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দলের প্রদেশ কমিটির অন্যতম সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, “জন্মলগ্ন থেকে জ্যোতিপ্রসাদবাবু তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন। এর থেকে বেশি কী বলব। সাংসদকে আলোচনা করার অনুরোধ করেছি।” সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন জানিয়েছেন, তিনি জ্যোতিপ্রসাদবাবুর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করবেন। যদিও দল ছাড়ার জ্যোতিপ্রসাদবাবু এ দিন বিকেলে বলেন, “সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। অনেকদিন পরে নিজেকে বেশ ভারমুক্ত মনে হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy