Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে পুলিশি পক্ষপাতের নালিশ

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ত্বের অভিযোগ উঠেছে। দলের অন্দরেই দাবি করা হয়েছে, এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের একদিকে রয়েছেন পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী, অন্য দিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। বালুরঘাটের পুরপ্রধান চয়নিকা লাহা শঙ্করবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৫১

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ত্বের অভিযোগ উঠেছে। দলের অন্দরেই দাবি করা হয়েছে, এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের একদিকে রয়েছেন পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী, অন্য দিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। বালুরঘাটের পুরপ্রধান চয়নিকা লাহা শঙ্করবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাঁর স্বামী সম্প্রতি হুমকি দিয়ে ফোন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করায় পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল। তিনি এ দিন জামিন পেয়েছেন। চয়নিকাদেবীর স্বামী শ্যামল লাহার দাবি, “১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ব্রতময় সরকারই এই হুমকি ফোনের পিছনে রয়েছেন।” ব্রতময়বাবু বিপ্লববাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনি শনিবার শ্যামলবাবু ও তৃণমূলের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পল্লব মালাকারের বিরুদ্ধে ৩ হাজার টাকা ও সোনার চেন ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছেন। ব্রতময়বাবুর বক্তব্য, “চয়নিকাদেবীর স্বামী তাঁকে হুমকি ফোন দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করার পরেই এক তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু আমি চয়নিকাদেবীর স্বামীর বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ করার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ এ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়। পুলিশ আসলে পক্ষপাতিত্ত্ব করছে।” তবে এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার সহ পুলিশের কোনও কর্তাই মুখ খুলতে চাননি।

ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়েছে। এদিন বালুরঘাটে এসে পূর্তমন্ত্রী শঙ্করবাবু পুলিশ প্রহরায় সার্কিট হাউসে যান। তারপরে খেলার মাঠে যান। মন্ত্রীর সঙ্গে চেয়ারপার্সন চয়নিকাদেবী ও তাঁর অনুগামী কয়েকজনকে দেখা গেলেও পুরসভার বাকি ১৩ জন কাউন্সিলারের একজনকেও দেখা যায়নি। তাঁরা শনিবারই চয়নিকাদেবীর বিরুদ্ধে পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। তাঁদের দাবি, চয়নিকাদেবী একক সিদ্ধান্তেই পুরসভা চালাচ্ছেন।

এ দিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত পুলিশ পাহারায় স্থানীয় টাউন ক্লাবের ইন্ডোরে স্টেডিয়ামে বসে মন্ত্রীকে ক্যারাটে প্রতিযোগিতা দেখতে দেখা যায়। সে সময় মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “পুরসভার বিষয় নিয়ে কেন, কোনও বিষয়েই আমি কোনও কথা বলব না। আমি স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। যাঁরা এ সব করছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।”

দলের সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র বলেন, “দলের সঙ্গে আলোচনা না করে দু’পক্ষ যা করছেন, তা দলীয় স্বার্থের পরিপন্থী।” বিপ্লববাবুর বক্তব্য, “বালুরঘাট পুরসভা দেখার দায়িত্ব শঙ্করবাবুর উপর ছিল। ফলে দল এতদিন এ বিষয়টি দেখেনি। তা ছাড়া শঙ্করবাবু এতদিন পুরসভার সমস্যা বা এ সংক্রান্ত কোনও বিষয় নিয়ে দলকেও কোনও রিপোর্ট দেননি। কিন্তু একে অপরের বিরুদ্ধে থানা পুলিশ মামলা দায়ের নিয়ে যা শুরু হয়েছে, তাতে এখন দলীয়ভাবে হস্তক্ষেপ করার সময় এসেছে।” দলের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে শীঘ্রই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তিনি দেখবেন বলে তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু জানিয়েছেন।

ব্রতময়বাবুর অভিযোগ শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ি ফেরার সময় ওই দু’জন রাস্তায় ধরে হুমকি দেন। তিনি বলেন, “আমি প্রতিবাদ করলে ধস্তাধস্তি হওয়ার সময় পকেট থেকে নগদ তিন হাজার টাকা এবং গলার সোনার চেন ছিঁড়ে নেন।” পরের দিন তিনি অভিযোগ দায়ের করেন।

ব্রতময়বাবুর ওই অভিযোগের পর পুলিশ কেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে মামলাটি আদালতে পাঠিয়েছে, তা নিয়ে দলীয় কাউন্সিলারেরা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, মন্ত্রীর অনুগামী বলেই কী চেয়ারপার্সনের অভিযুক্ত স্বামীকে পুলিশ গ্রেফতার করল না? যদিও এদিন চেয়ারপার্সনের স্বামী শ্যামলবাবু বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে টাকা ও হার ছিনতাইয়ের হাস্যকর অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার সময় আমি ও পল্লব বাড়িতেই ছিলাম। আমাদের হুমকি দিয়ে ফোন করানোর পিছনে রয়েছে ওই কাউন্সিলর। এখন বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে মামলা করেছেন তিনি। পুলিশি তদন্তে সত্য প্রমাণ হবে।”

এদিকে ব্রতময়বাবু অভিযোগ করেন, পুলিশের কাছে চেয়ারপার্সনের স্বামীর অভিযোগ গুরুত্ব পাচ্ছে অথচ জনপ্রতিনিধির অভিযোগের কোনও গুরুত্ব নেই। টাকা ও সোনার চেন ছিনতাইয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ করার ২৪ ঘন্টা পরেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করলো না। এদিন দিনভর পুলিশ সুপার শীসরাম ঝাঝারিয়াকে ফোন করে গেলেও তিনি ফোন ধরেননি। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি আইসি এবং ওসি-রাও।

এদিন মন্ত্রী শঙ্করবাবু কলকাতা থেকে বালুরঘাটের সার্কিট হাউসে উঠে অনুগামী, কর্মীদের সার্কিট হাউস ও খেলার মাঠে জড়ো হতে বলেন। বৃষ্টি মাথায় করে টোটো এবং গাড়ি ভাড়া করে চেয়ারপার্সনের ওয়ার্ড থেকে দলীয় সমর্থক মহিলাদের জড়ো করা হয়। এরপর খেলা দেখে রাতে তিনি কলকাতায় ফিরে যাওয়ায় একাংশ কর্মী হতাশ। সার্কিট হাউসে চয়নিকা লাহা ও তাঁর অনুগামী কর্মী নেতাদের মন্ত্রী ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পুরসভা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও বৈঠক হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।

tmc party clash balurghat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy