Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে তোপ বহিষ্কৃত নেতার

যিনি দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন বহিষ্কৃত নেতা। রীতিমতো সভা করে শাসক দলের দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক বিপ্লব মিত্রের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ তুললেন বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শুভাশিস পাল ওরফে সোনা। সোমবার বিকেলে তৃণমূল জেলা সভাপতির নির্বাচনী কেন্দ্রের খাসতালুক হরিরামপুরে ‘তৃণমূলের ব্যানারে’ই প্রকাশ্য কর্মিসভা করেন সোনাবাবু।

হরিরামপুরের সভায় সোনা চৌধুরী। সোমবার। ছবি: অমিত মোহান্ত।

হরিরামপুরের সভায় সোনা চৌধুরী। সোমবার। ছবি: অমিত মোহান্ত।

অনুপরতন মোহান্ত
হরিরামপুর শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
Share: Save:

যিনি দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন বহিষ্কৃত নেতা।

রীতিমতো সভা করে শাসক দলের দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক বিপ্লব মিত্রের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ তুললেন বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শুভাশিস পাল ওরফে সোনা। সোমবার বিকেলে তৃণমূল জেলা সভাপতির নির্বাচনী কেন্দ্রের খাসতালুক হরিরামপুরে ‘তৃণমূলের ব্যানারে’ই প্রকাশ্য কর্মিসভা করেন সোনাবাবু। সেখানে তিনি বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট চালানোর মতো অভিযোগ তুলে সরব হন। পুরভোটের আগে জেলায় গোষ্ঠীকোন্দল এ ভাবে প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলে।

যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু বলেছেন, “বহিষ্কৃত কেউ কী বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না। একের পর এক দলবিরোধী কাজের অভিযোগে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুল রায়ের নির্দেশে কোর কমিটির সভা করে সোনা পালকে বহিষ্কার করা হয়েছে।” তাঁর কথায়, “আমি ওকে বহিষ্কার করেছি, এটা তাই ঠিক নয়।”

রবিবার হরিরামপুর রাইস মিলের মাঠে তৃণমূলের ব্যানারেই প্রকাশ্য কর্মিসভার ডাক দেন সদ্য বহিষ্কৃত তৃণমূল জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোনাবাবু। গত ৩ ডিসেম্বর দলবিরোধী কাজের অভিযোগে তাঁকে দল থেকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু। সেই সঙ্গেই তাঁকে সমস্ত পদ থেকেও অপসারণ করার কথা দলের তরফে জানানো হয়।

এ দিন দুপুর থেকেই সোনাবাবুর অনুগামীরা দলে দলে রাইস মিলের সভায় যোগ দেন। বক্তৃতা করতে গিয়ে সোনাবাবু বলেন, “আমাকে বহিষ্কারের এক্তিয়ার বিপ্লব মিত্রের নেই। দলের জেলা পর্যবেক্ষক পূর্ণেন্দু বসুর নির্দেশে তৃণমূলে থেকেই কর্মসূচি ও আন্দোলন চালিয়ে যাব।” তবে পূর্ণেন্দু বসুর নাম করে সোনা দাবি করলেও পূর্ণেন্দুবাবুর বক্তব্য, “আমি তো শুনিনি উনি কী বলেছেন। তাছাড়া সোনা পালের বিষয়টি দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।”

তাঁর দাবি, সারদা কাণ্ডে রাজ্যকে অপদস্ত করার কেন্দ্রের চক্রান্তের বিরুদ্ধে এ দিনের সভা ডাকা হয়েছিল। তবে জেলা তৃণমূলের নেতাদের অনেকেরই মতে, সভাটি যে দলের জেলা সভাপতিকে চ্যালেঞ্জ করার সভা ছিল তা সোনা পালের প্রতিটি কথা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বহিষ্কৃত নেতার ডাকেও এ দিন জড়ো হয়েছিল হাজার দু’য়েকেরও বেশি সমর্থক। সভায় জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে সোনা যত কথা বলেছেন, ততই উচ্ছ্বসিত সমর্থকেরা হাতহাতি দিয়ে উঠেছেন।

সোনা পালের অভিযোগ, “জেলায় সরকারি ৩২টি পদের মধ্যে ২৮টি পদই বিপ্লব মিত্র ও তাঁর ভাইয়েরা দখল করে রেখেছেন। হিলি থেকে গঙ্গারামপুর সর্বত্র সিন্ডিকেট গড়ে তিনি দল চালাচ্ছেন।” এর পরে তাঁর প্রশ্ন, “এই অবস্থায় বাকি কর্মীদের জেলায় জায়গা কোথায়? তৃণমূল কী জেলা সভাপতির পারিবারিক দলে পরিণত হয়েছে?” এ দিন তিনি জানান, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হরিরামপুর কেন্দ্রে গঙ্গারামপুরের (বিপ্লববাবুর বাড়ি) কোনও নেতার জায়গা হবে না। এখানে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে প্রার্থী করতে হবে। না হলে নির্দল হয়ে ভোটে লড়ব।

এ প্রসঙ্গে বিপ্লববাবুর বক্তব্য, “ওকে জেলার মানুষ ভাল করেই চেনেন। আমাকেও সকলে চেনেন। বহিষ্কারের জেরে রাগ ও ক্ষোভ থেকে ওই এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছেন। দলের বা মানুষের কাছে এ সবের কোনও প্রভাব নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE