Advertisement
০১ মে ২০২৪

দার্জিলিঙে বিশ্বকাপের রং, সামিল পর্যটকও

ভোট প্রচারে লাগানো বিভিন্ন দলের পতাকা রং বিবর্ণ হতে শুরু করেছে। ইংল্যান্ড, স্পেন, ব্রাজিলের উজ্জ্বল রঙের পতাকায় ভরে গিয়েছে দার্জিলিং। বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে যে এখনও দু’সপ্তাহের বেশি সময় রয়েছে তা পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে ওঠা রাস্তা, গলি দেখে বোঝার উপায় নেই। যেন বিশ্বকাপ শুরুই হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি দর্জির দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা দেশগুলির পতাকা। পতাকা, মাথার ব্যান্ড মিলছে মুদি দোকানেও। রাস্তার মোড়ে, বাড়ির কার্নিশে তো বটেই, গাড়ির সামনেও পতপত করে উড়ছে দেখা যাচ্ছে সেই পতাকা।

নানা দেশের পতাকায় ছয়লাপ পাহাড়ের পথঘাট। ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।

নানা দেশের পতাকায় ছয়লাপ পাহাড়ের পথঘাট। ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।

রেজা প্রধান
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০১:১৭
Share: Save:

ভোট প্রচারে লাগানো বিভিন্ন দলের পতাকা রং বিবর্ণ হতে শুরু করেছে। ইংল্যান্ড, স্পেন, ব্রাজিলের উজ্জ্বল রঙের পতাকায় ভরে গিয়েছে দার্জিলিং। বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে যে এখনও দু’সপ্তাহের বেশি সময় রয়েছে তা পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে ওঠা রাস্তা, গলি দেখে বোঝার উপায় নেই। যেন বিশ্বকাপ শুরুই হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি দর্জির দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা দেশগুলির পতাকা। পতাকা, মাথার ব্যান্ড মিলছে মুদি দোকানেও। রাস্তার মোড়ে, বাড়ির কার্নিশে তো বটেই, গাড়ির সামনেও পতপত করে উড়ছে দেখা যাচ্ছে সেই পতাকা। শৈল শহরের এই বিশ্বকাপ-জ্বরে বাদ নেই পর্যটকেরাও। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে পতাকা কিনে বের হতে দেখা যাচ্ছে কিছু পর্যটকদেরও।

হিলকার্ট রোডে দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে দর্জির দোকান চালাচ্ছেন ৫২ বছরের সুরেন ত্রিখাত্রি। তিনি বললেন, “প্রতিদিন অন্তত ১৫টি করে পতাকা বিক্রি হচ্ছে। সব বয়সের ক্রেতারাই আসছেন। কিশোরী বা যুবতীরাও পতাকা কিনতে আসছেন। দোকান খোলার পরে চারটে বিশ্বকাপ পার হয়েছে। প্রতিবারই যেন পতাকার চাহিদা বেড়েই চলেছে। খেলা শুরু হলে বিক্রি আরও বাড়বে বলেই আশা করছি।” হিলকার্ট রোডেই অন্তত ১৩টি দর্জির দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানেই পতাকা বিক্রি হচ্ছে, যার চাহিদা তুঙ্গে। দার্জিলিঙের ক্রীড়াপ্রেমীরা জানিয়েছেন, ১৯৮৬ সালে মারাদোনার নেতৃত্বে আজের্ন্টিনার বিশ্বজয়ের বছর, পতাকার চাহিদা ছিল তুঙ্গে। তবে এ বছর ব্রাজিল বিশ্বকাপের উন্মাদনা অতীতের সব বছরকে ছাপিয়ে যাবে বলেই তাঁদের অনুমান।

হিলকার্ট রোডেরই আরেকটি দর্জির দোকানের প্রবীণ ব্যবসায়ী সুরজ বিত্রাখোতি বললেন, “একসময়ে ক্রীড়াপ্রেমীরা এসে নিজেরা পতাকার নকশা দিতেন। এখন আমরাই তৈরি করি। জার্সিও বানানো হয়, সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের পতাকার আদলে পোশাক তৈরি করার প্রবণতাও বাড়ছে। পতাকা আর জামা যতই তৈরি করছি ততই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।” শুধু দার্জিলিং শহরেই নয়, কার্শিয়াং এবং কালিম্পং মহকুমাতেও একই উন্মাদনার ছবি। পখরিবঙ, বিজনবাড়ি, কাগে-সহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা প্রতি দিন গড়ে ১০০ পতাকার বরাত নিয়ে যাচ্ছেন বলে হিলকার্ট রোডের দর্জির দোকানগুলি থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে।

হুগলির বাসিন্দা প্রীতম সরকার দার্জিলিঙে বিশ্বকাপের উন্মাদনায় অভিভূত। তাঁর কথায়, “এই প্রথম দার্জিলিঙে আসা। এমন রং বেরঙের দার্জিলিং দেখব আশাই করিনি। এখন হচ্ছে খেলা চলাকালীন আসলে আরও ভাল হত।” ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার পতাকার চাহিদাই সবচেয়ে বেশি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। যদিও, স্পেন, ইতালি, জার্মানি, ইংল্যান্ডের পতাকারও চাহিদা যথেষ্টই। দেশভেদে পতাকার দামেরও রকমফের রয়েছে। ইংল্যান্ড এবং ব্রাজিলের পতাকার দাম তুলনামুলক ভাবে বেশি বলে জানা গেল। বিকাশ বিত্রাখোতির কথায়, “ইংল্যান্ড বা ব্রাজিলের পতাকা তৈরি করতে বিভিন্ন রঙের কাপড় বেশি লাগে, খাটনিও বেশি। তাই এই দুই দেশের পতাকার দাম খানিকটা বেশি। তবুও চাহিদার কোনও বিরাম নেই। গড়পরতা ছোট পতাকার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা।” তবে এশিয়ার দেশগুলির পতাকার চাহিদা কিছুটা কম বলেই ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। জার্সি বা পতাকা ছাড়াও বিভিন্ন দেশের পতাকার রঙের কাপ এবং ব্যাজও মিলছে দার্জিলিঙে।

কলকাতা থেকে ব্যবসায়ী রাজীব মাহেশ্বরী সপরিবারে দার্জিলিং গিয়েছেন। মঙ্গলবার ম্যালে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “রাস্তায় গলিতে তো পতাকা দেখলামই। সেই সঙ্গে তরুণ-তরুণীদের জার্সি পরেও দেখলাম। এতটাই উদ্বুদ্ধ হয়েছি যে নিজেই একটা আর্জেন্টিনার জার্সি কিনে ফেলেছি। এটাকেই বোধ হয় ফুটবল জ্বর বলে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tourist fifa world cup darjeeling reja pradhan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE