Advertisement
E-Paper

দার্জিলিং চায়ের ফুল থেকে তৈরি হচ্ছে প্রসাধনী

অন্য ফুলের মতো চা ফুলের কদর নেই। উল্টে উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ফুল ফোটা মানে চা গাছটি ‘কষ্টে’ আছে। থোকাথোকা সাদা সেই ফুল দু-তিন সপ্তাহ পরে আপনা আপনি ঝরে যায়। এ বার সেই চা ফুল থেকে প্রসাধনী তৈরি করতে শুরু করেছে শিলিগুড়ির একটি চা প্রস্তুতকারী সংস্থা। ইতিমধ্যে ‘পেটেন্ট’ও তাদের হাতে চলে এসেছে বলে সংস্থাটি দাবি করেছে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
ডুয়ার্সের রহিমাবাদ চা বাগানে চায়ের ফুল তুলছেন এক শ্রমিক। ছবি: রাজু সাহা।

ডুয়ার্সের রহিমাবাদ চা বাগানে চায়ের ফুল তুলছেন এক শ্রমিক। ছবি: রাজু সাহা।

অন্য ফুলের মতো চা ফুলের কদর নেই। উল্টে উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ফুল ফোটা মানে চা গাছটি ‘কষ্টে’ আছে। থোকাথোকা সাদা সেই ফুল দু-তিন সপ্তাহ পরে আপনা আপনি ঝরে যায়। এ বার সেই চা ফুল থেকে প্রসাধনী তৈরি করতে শুরু করেছে শিলিগুড়ির একটি চা প্রস্তুতকারী সংস্থা। ইতিমধ্যে ‘পেটেন্ট’ও তাদের হাতে চলে এসেছে বলে সংস্থাটি দাবি করেছে।

বিশ্বজোড়া দার্জিলিং চা পাতার কদর রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চা-ফুল নির্যাস থেকে তৈরি প্রসাধনীর চল রয়েছে বহু দিনই। ত্বকের যত্নে এই ধরনের প্রসাধনী যথেষ্ট জনপ্রিয়ও। সে কারণে দার্জিলিং চায়ের ফুল থেকে তৈরি এই প্রসাধনী সহজেই নিজস্ব বাজার তৈরি করতে পারবে বলে সংস্থা মনে করছে। সংস্থা সূত্রে জানানো হয়, প্রসাধনী বাজারে গোলাপ, জুঁইয়ের মতো ফুলের ‘ফেস প্যাক’ পাওয়া যায়। এ বার সংযোজন চা ফুলের ‘ফেস প্যাক’। চা ফুল সংগ্রহ করে, তাকে শুকিয়ে নেওয়া হবে। শুকনো ফুল গুঁড়ো করে তার সঙ্গে কিছু ভেষজ উপাদান মিলিয়ে সেই প্রসাধনী তৈরি হচ্ছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

চিনের একটি চা বিপণন সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সেই প্রসাধনী দ্রুত বাজারেও আসতেও চলেছে। নাম রাখা হয়েছে ‘টি ব্লসম’। সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে স্থানীয় বাজারে বাণিজ্যিক ভাবে ফেসপ্যাক আনা হবে।

সংস্থাটির দাবি, দার্জিলিঙের চা পাতার মতো ফুলেরও সুগন্ধ রয়েছে। সে সুগন্ধ হবে প্রসাধনীর মূল আকর্ষণ। উত্তরবঙ্গের যে চা শিল্প সংস্থা এই প্রসাধনী তৈরি করেছে, তার সিইও রাজীব লোচনের কথায়, “প্রসাধনী তৈরির পর নানা গবেষণাগারে পরীক্ষা হয়েছে। খুব শীঘ্রই বাজারে বিক্রি শুরু হবে।” রাজীববাবুর দাবি, চা ফুলের ফেসপ্যাক লাগিয়ে রাখার সময় একটি ঠান্ডা অনুভূতি হবে। ফেস প্যাক ধুয়ে উঠিয়ে দেওয়ার পরে ত্বক অনেকটাই ঝলমলে দেখাবে, সতেজ থাকবে।

বাগানগুলিতে শীতকালে পরিচর্যা করার সময়ে চা ফুলের কুঁঁড়ি কেটে ফেলা হলেও, বেশির ভাগ পুরোনো বাগানেই গাছের নীচের দিকে চা ফুল ফোটে। সাদা রঙের এই ফুলে ছোট ছোট পাপড়ি থাকে। যে সব বাগানে গাছের পরিচর্যা হয় না, বিশেষত বন্ধ বাগানে বড় ধরনের চা ফুলও দেখা যায়। রাজীব জানান, “বাণিজ্যিক ভাবে সফল হলে, দু’টি বাগানে বাগিচার একাংশে নিয়মিত ফুল ফোটানোর ব্যবস্থা হবে। পাতা নয় কেবল ফুলের জন্য আলাদা করে গাছ হবে। সেই গাছেও চায়ের মান খারাপ হবে না।”

প্রসাধনী বাজারে এটা কতটা সফল হবে, বা আদৌও এর ব্যবহারে কতটা সুফল মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, চা-ফুল থেকে বাণিজ্যিক ব্যবহার যে অভিনব তা মনে করছেন উত্তরবঙ্গের চা উদ্যোগী এবং গবেষকরা। ক্ষুদ্র চা চাষির সর্বভারতীয় সংগঠন ‘সিস্টা’-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “সাধারণত কোনও চা গাছে ফুল ফুটলে মনে করা হয়, সেই গাছটি কষ্টে রয়েছে। তাই চা গাছের ফুল ফুটতেই দেওয়া হয় না।” বাণিজ্যিক ব্যবহার না হলেও, শ্রমিকদের অনেকেই চা গাছের ফুল ভাজা করে খেয়ে থাকেন। কেন্দ্রীয় সরকারের টি রির্সাচ অ্যাসোসিয়েশনের নাগরাকাটা কেন্দ্রের গবেষক শ্যাম ভার্গিস বলেন, “বসন্তের শুরুতেই চা ফুল ফোটার কথা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফুল ফোটার আগেই চা গাছের ডালপালা কেটে দেওয়া হয়।”

চিনে দীর্ঘদিন ধরেই চা ফুল থেকে নানা বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। সুগন্ধি বাড়াতে চা ফুল শুকিয়ে গুঁড়ো করে চা পাতার মধ্যেই মেশানো হয়। কিছু ওষুধেও চা ফুল ব্যবহার করা হয়। চা ফুল থেকে প্রসাধনী তৈরির কথা জানা যায়নি। সেক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের এ সংস্থাটির উদ্যোগ নতুন ধারা তৈরি করতে পারে কি না সেটাই দেখার। সংস্থাটি জানায়, তারা দার্জিলিঙের দু’টি চা বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করছে। অক্টোবর মাস থেকেই ফুল সংগ্রহের কাজ চলছে। সেই ফুল পাঠানো হয়েছে চিনে। সে দেশের পরীক্ষাগারেই হচ্ছে ‘ফেস প্যাক।’ বাণিজ্যিক ভাবে সফল হলে উত্তরবঙ্গেই চা ফুল থেকে ‘ফেস প্যাক’ তৈরির কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে, দার্জিলিঙের চা পাতার যেহেতু সুগন্ধের জন্য খ্যাতি রয়েছে, সে কারণে দার্জিলিঙের চা ফুলকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।

ফুলের কথা

রং: সাদা।

কখন: ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ফুল ফোটে। ডুয়ার্সের কিছু এলাকায় সারা বছরই চা ফুল ফুটতে দেখা যায়।

থাকে: ফোটার পরে দু’থেকে তিন সপ্তাহ।

ব্যবহার: শ্রমিকেরা চা ফুল ভাজা খান।

বাণিজ্যিক ব্যবহার: চিনে চা পাতার সঙ্গে মেশানো হয়। ওষুধ, বিস্কুট, ফলের রসেও মেশানো হয় শুকনো চা ফুলের গুঁড়ো।

flower of tea plant darjeeling anirban roy siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy