Advertisement
E-Paper

দিল্লি যাওয়ার টাকা জোগাড় করছে নিহত ছাত্রীর পরিবার

বই-খাতা যার, সে নেই। তবু বিছানার একপাশে ভৌতবিজ্ঞান-ইতিহাস-অঙ্কের খাতা-বই গুছিয়ে রাখা আছে। দেওয়াল ঘেঁষে থাকা টেবিলে আগের মতোই রয়েছে স্কুলের ব্যাগ, পেন্সিল বক্স। স্কুল ইউনিফর্মের নীল ওড়না এখনও আলনার একপাশে মেলে রাখা। গত দু’মাসে বই খাতাগুলো কেউ উল্টে পাল্টে দেখেনি, ওড়নাটিও আলনা থেকে নামানো হয়নি।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য ও অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩৪

বই-খাতা যার, সে নেই। তবু বিছানার একপাশে ভৌতবিজ্ঞান-ইতিহাস-অঙ্কের খাতা-বই গুছিয়ে রাখা আছে। দেওয়াল ঘেঁষে থাকা টেবিলে আগের মতোই রয়েছে স্কুলের ব্যাগ, পেন্সিল বক্স। স্কুল ইউনিফর্মের নীল ওড়না এখনও আলনার একপাশে মেলে রাখা। গত দু’মাসে বই খাতাগুলো কেউ উল্টে পাল্টে দেখেনি, ওড়নাটিও আলনা থেকে নামানো হয়নি। সেগুলি নিয়ে মেয়ে আর কোনদিনই স্কুলে যাবে না জেনেও, বই-খাতা, পোশাক অন্যত্র সরিয়ে রাখতে দেননি দশম শ্রেণির ছাত্রীর মা। তাঁর কথায়, “ওড়নার দিকে তাকালেই যেন মেয়েটার গলার স্বর শুনতে পাই। এই তো স্নান সেরে এসে মেয়ে চিত্‌কার করে বলছে, মা স্কুলের জামা-কাপড় এনে দাও।”

ধূপগুড়ি শহরের এক প্রান্তে রেল লাইনের থেকে কিছুটা দূরের ছাত্রীটির দরমা-বেড়ার বাড়ি মাস দেড়েকের বেশি সময় ধরে তালাবন্ধই ছিল। কালীপুজোর দু’দিন আগে ছাত্রীর বাবা-মা-ভাই ফের বাড়ি ফিরে এসেছে। আপাতত দিল্লি যাওয়ার ভাড়া জোগাড়ের প্রস্তুতি শুরু করেছেন ধূপগুড়ির নিহত ছাত্রীর বাবা। মেয়ের হত্যার অভিযোগের সুবিচার চাইতে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হবে পরিবারটি।

ওই পরিবারের অভিযোগ, গত ১ সেপ্টেম্বর রাতের বেলায় এলাকার তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে সালিশি সভায় বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করায় দশম শ্রেণির ছাত্রীকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেওয়া হয়। ছাত্রীকে ‘থুতু চাটানো’ হবে বলেও শাসানো হয়। এরপরেই সালিশি সভা থেকে দৌড়ে অন্ধকারে পালিয়ে যায় ছাত্রীটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সভা থেকেই কয়েকজন ছাত্রীর পিছু ধাওয়া করে। রাতের বেলায় ছাত্রীটির আর খোঁজ মেলেনি। পরদিন সকালে রেল লাইনের পাশ থেকে ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। সে দিনই তৃণমূল নেতা সহ ১৩ জনের নামে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন বাবা।

অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই ছাত্রীর পরিবারকে নানাভাবে হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ প্রত্যাহারের ‘চাপ’ও আসতে থাকে বলে পরিবারের দাবি। নানা চাপ সামলাতে না পেরে, ছাত্রীর শ্রাদ্ধ মেটার পরেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় পরিবারটি। পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ওঠেন ছাত্রীর বাবা। ঘটনাচক্রে গত ১৯ অক্টোবর ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় সব অভিযুক্ত ধরা পড়ার পর দু’দিন পরেই পরিবারটি ফের বাড়িতে ফিরেছে। এ দিন ছাত্রীর বাবা বলেন, “মেয়েটা চলে যাওয়ার পরে বাড়িতে থাকতে আর ভাল লাগত না। অভিযুক্তরা সকলে ধরা পড়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি। বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করেছি। তবে সুবিচারের দাবিতে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”

ঘটনার পরে প্রথম কিছুদিন ভয়ে একা একা বাড়ি থেকে বের হতে চাইনি ছাত্রীর ভাই। ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া ভাইয়ের পড়াশোনার ভারও ছিল দিদির উপর। পুজোর সময়ে ছেলেকে মনমরা হয়ে থাকতে দেখে মাথাভাঙায় দিদির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ছাত্রীর বাবা। গত রবিবার বাড়িতে ফিরেছে ষষ্ঠ শ্রেণির ওই পড়ুয়াও। বাবার কথায়, “মঙ্গলবার স্কুল খুলবে। ছেলেটাকে আবার স্কুলে পাঠাব। স্কুলে গেলে মনটা ভাল থাকবে।”

প্রতিবাদী ছাত্রীকে খুনের অভিযোগ ওঠায় রাজ্য জুড়েই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রীর খাতায় লিখে রাখা নানা কবিতা দেখে অথবা স্কুলেও নানা সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় প্রতিবাদে সরব হওয়ার ঘটনা শুনে কলকাতা থেকে ধূপগুড়িতে এসেছিলেন বিশিষ্টজনেদের একটি দল। তাঁদের পরামর্শেই মেয়ের মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ছাত্রীর বাবা। আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হতে দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন ছাত্রীর বাবা এবং মামা। দিল্লি যাওয়ার খরচের যতটা সম্ভব বাবা নিজেই জোগাড় করছেন বলে জানালেন ছাত্রীর মামা।

মেয়েকে খুন করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরদিন স্থানীয় তৃণমূল নেতার দিতে চাওয়া আর্থিক সাহায্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ছাত্রীর বাবা। এ দিন বললেন, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাতেই মেয়েটাকে মরে যেতে হয়েছে। ওর মৃত্যুর সুবিচারের দাবিতে সকলের কাছে হাত পাতলে ওর প্রতিবাদকে মর্যাদা দেওয়া যাবে না।”

dhupguri rape case family raising money to go to delhi biswajit bhattacharya anirban roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy