Advertisement
E-Paper

দুষ্কৃতীরা অ্যাসিড পেল কোথায়, জানে না পুলিশ

পানশালার দুই তরুণী গায়িকাকে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েছে। অথচ দুষ্কৃতীদের হাতে কোথা থেকে অ্যাসিড এল তার কোনও সূত্র পুলিশ পায়নি। প্রাথমিক তদন্তে একটি কালো রঙের বাইকে চেপে আসা দুই দুষ্কৃতী গাড়ির ভিতরে থাকা পানশালার গায়িকাদের দিকে অ্যাসিড ছুঁড়ে দিয়েছে বলে পুলিশ জেনেছে। যদিও সেই বাইকটি কার, বাইকে কারা ছিল, ঘটনার পরে তারা কোনদিকে পালিয়েছে তার কিছুই জানাতে পারেনি পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৬

পানশালার দুই তরুণী গায়িকাকে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েছে। অথচ দুষ্কৃতীদের হাতে কোথা থেকে অ্যাসিড এল তার কোনও সূত্র পুলিশ পায়নি।

প্রাথমিক তদন্তে একটি কালো রঙের বাইকে চেপে আসা দুই দুষ্কৃতী গাড়ির ভিতরে থাকা পানশালার গায়িকাদের দিকে অ্যাসিড ছুঁড়ে দিয়েছে বলে পুলিশ জেনেছে। যদিও সেই বাইকটি কার, বাইকে কারা ছিল, ঘটনার পরে তারা কোনদিকে পালিয়েছে তার কিছুই জানাতে পারেনি পুলিশ। সে কারণেই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির ব্যস্ত সেবক রোডে গাড়িতে থাকা দুই তরুণীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শিলিগুড়ি শহরে এমন ধরণের ঘটনা প্রথম বলে দাবি করেছেন শাসক-বিরোধী সব দলের নেতারা। ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। দু’জনকে আটক করে জেরা করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবরয়

পানশালা কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, জখমদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ তাঁরা দেবেন। পানশালার তরফে পুলিশের কাছেও দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন। পানশালা মালিক সংগঠনের এক কর্তা জানান, না হলে এলাকায় আতঙ্ক বেড়ে যাবে। এতদসত্ত্বেও দুষ্কৃতীদের ধরতে তার পরে পুলিশের কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিলিগুড়ির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন এ দিন বলেছেন, “তদন্ত চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শাসক দলের অন্দরেও। শুক্রবার সকালে নার্সিংহোমে ভর্তি জখমদের দেখতে গিয়েছিলেন শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। পেশায় চিকিৎসক রুদ্রনাথবাবুর কথায়, “ভয়ঙ্কর ঘটনা। প্রাণঘাতী অ্যাসিড ছোঁড়া হয়েছিল। আমার ধারণা, হাইড্রোক্লোরিক অথবা সালফিউরিক অ্যাসিড হতে পারে। যে ভাবে তিনজন জখম হয়েছেন, গাড়ির দরজা, সিটেও অ্যাসিড পড়েছে, তাতে বোঝাই যােচ্ছে অনেকটা পরিমাণ অ্যাসিড ব্যবহার হয়েছে। অ্যাসিড বিক্রির নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। তারপরেও এতপরিমাণ অ্যাসিড কোথা থেকে এবং কীভাবে দুষ্কৃতীদের হাতে এল তা পুলিশকে দ্রুত জানতে হবে। না হলে আশঙ্কা থেকেই যাবে।”

পুলিশকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে বিধায়ক দাবি করেছেন। এ দিন নার্সিংহোমে গিয়েছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। জখম তরুণীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসায় সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। অশোকবাবু বলেন, “শিলিগুড়িতে এখন দুষ্কৃতীরা হাতে অ্যাসিড নিয়ে ঘুরছে। এমন দিন আসতে পারে, তা কোনও দিন কল্পনাতে ছিল না। দোষীদের গ্রেফতার তো করতেই হবে, তবে তার আগে কোথা থেকে অ্যাসিড এল তা জানতে হবে।” যদিও, প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর কটাক্ষ, “অবশ্য পুলিশ এখন কার্নিভাল নিয়ে ব্যস্ত। এসব তদন্তে কতটা সময় পাবে জানি না।” বিকেলে নার্সিংহোমে যান জেলা কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারও। তিনি অভিযোগ করেন, “পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে।” তিনি জানান, অবিলম্বে দোষীরা ধরা না পড়লে মহিলা কংগ্রেস কমিশনারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাবে।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যাসিড বিক্রির জন্য বিশেষ লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। সেই দোকান থেকে কোনও সাধারণ ব্যক্তি অ্যাসিড কিনতে পারেন না। কোনও গবেষণাগার, স্কুল কর্তৃপক্ষ অথবা বিভিন্ন ছোট বড় শিল্প সংস্থা, কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিজেদের লাইসেন্স দেখিয়ে অ্যাসিড সংগ্রহ করতে হয়। এবং অ্যাসিড কী কাজে কতটা ব্যবহার হয়েছে, তার হিসেবও দাখিল করতে হয়। সে কারণেই অ্যাসিড যে চোরাপথে দুষ্কৃতীদের হাতে এসেছে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই বলে বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ। সে ক্ষেত্রে এই চোরাপথ বন্ধ করতে না পারলে আগামী দিনে শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দারা বিশেষত মহিলারা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে বলে সংগঠনগুলির দাবি।

গত বৃহস্পতিবার সেবক রোডের একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে ধীর গতিতে থাকা গাড়িতে বসা পানশালার দুই তরুণী গায়িকাকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছুঁড়ে দেয় বাইক আরোগী দুই দুষ্কৃতী। অ্যাসিড লেগে দুই তরুণীর সঙ্গে জখম হন গাড়ির চালকও। পুলিশের দাবি, জখম দুই তরুণীর একজন লুধিয়ানার বাসিন্দা হলেও, অন্যজন স্থানীয় কোনও এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনিও ইসকন রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। যদিও, স্থানীয় গায়িকার বাড়ির ঠিকানার ‘খোঁজ’ চলছে বলে ভক্তিনগর থানা সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

দার্জিলিং জেলা লিগাল এইড ফোরামের তরফে অমিত সরকারের এ দিন ভক্তিনগর থানায় গিয়েছিলেন। অমিতবাবুর দাবি, “পুলিশ কোনও সূত্রই জানাতে পারছে না। শুধুমাত্র খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনাটি এত সহজ নয়। কোথা থেকে কী ভাবে অ্যাসিড এল তা জানলে মূলে পৌঁছনো যাবে না।” শুক্রবার শিলিগুড়িতে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর দাবি, রাজ্যের কোথাও আর মহিলারা নিরাপদ নয়। বিজেপির তরফে এ দিন সন্ধ্যায় ভক্তিনগর থানায় স্মারকলিপি দিয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করতে পারলে, সোমবার থানা ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছে বিজেপি।

নারী শক্তি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এ দিন সকালে নার্সিংহোম এলাকায় বিক্ষোভ দেখায়। ভক্তিনগর থানাতেও তারা গিয়েছিলেন। সংগঠনের মুখপাত্র প্রতিমা যোশীর কথায়, “যে মেয়ের মুখ অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছে, সেই শুধু এর যন্ত্রণা বোঝে। সবার আগে দুষ্কৃতীদের হাতে অ্যাসিড পৌঁছন বন্ধ করতে হবে। কী ভাবে অ্যাসিড দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছল তা জানতে চেয়েছিলাম, পুলিশ কোনও উত্তর দিতে পারেনি।”

বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

siliguri acid attack bar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy