Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ধর্ষণ, ফের সালিশি সভা তৃণমূল নেতৃত্বের

এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরে সালিশি সভা ডেকেছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা তথা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী মনোরঞ্জন পাল। তবে ফালাকাটা থানা এলাকার জটেশ্বর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডালিমপুর গ্রামে সেই সালিশি না মেনে পুলিশের দ্বারস্থ হল নির্যাতিতার পরিবার। ওই পরিবারের দাবি, নির্যাতিতা মানসিক ভারসাম্যহীন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৬
Share: Save:

এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরে সালিশি সভা ডেকেছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা তথা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী মনোরঞ্জন পাল। তবে ফালাকাটা থানা এলাকার জটেশ্বর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডালিমপুর গ্রামে সেই সালিশি না মেনে পুলিশের দ্বারস্থ হল নির্যাতিতার পরিবার। ওই পরিবারের দাবি, নির্যাতিতা মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে অভিযুক্ত যুবকের দাবি, তিনি কোনও রকম অত্যাচার করেননি।

মাস তিনেক আগে কোচবিহারে এক সালিসি সভাকে কেন্দ্র করে এক তৃণমূল নেতা খুন হওয়ার পরে সালিশিতে দলের নেতা ও কর্মীদের না যাবার নির্দেশ দেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। তবে ওই ঘটনার পরে ধূপগুড়িতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিবাদ মেটাতে তৃণমূলের ওয়ার্ড কাউন্সিলারের স্বামী ও এলাকার তৃণমূল নেতারা সালিশি সভা বসিয়েছিলেন। সেখান থেকে নিখোঁজ হয় এক স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী। সালিশি সভায় নেতারা তাকে থুতু চাটবার ‘ফরমান’ জারি করেছিল বলে অভিযোগ। তারপর থেকে ওই কিশোরীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন ভোরে রেল লাইনেরর ধারে ওই কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়।

তারপরেও কেন ফের ফালাকাটায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের উদ্যোগেই সালিশি সভা বসানো হল? ফালাকাটার তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারী বলেছেন, “ধূপগুড়ির ঘটনার পর আমরা সকলকে সালিশি সভা করতে মানা করে দিয়েছিলাম। তা জানা সত্ত্বেও প্রধানের স্বামী কেন সালিশি সভা করতে গেলেন, তা বুঝতে পারছি না।” মনোরঞ্জনবাবুর যুক্তি, “স্ত্রী যখন একটি দায়িত্বে রয়েছেন এবং আমি যখন দল করি তখন আমার কর্তব্য গ্রামে গণ্ডগোল হলে এগিয়ে যাওয়া। সবাই আইনের পথে যেতে চান না বলে এমন সভায় যেতে বাধ্য হই।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডালিমপুর গ্রামের দিনমজুর পরিবারের মেয়ে ওই কিশোরী শনিবার রাতে পাড়ার পুজোতে আরতি দেখতে গিয়েছিল। তাঁর পরিবারের দাবি, সে ছোট থেকেই মানসিক ভাবে অসুস্থ। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রতিবেশী এক ভ্যানচালক তার হাতে ২০ টাকা দিয়ে একটি ঝোপে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। কিশোরীর চিৎকার শুনে এক প্রতিবেশী ওই যুবকের পিছু ধাওয়া করে। ওই কিশোরীও জানায় যে, ওই যুবক তার উপরে অত্যাচার করেছে। পাড়ার লোকজনের দাবি, এর আগেও ওই যুবক একই ভাবে প্রতিবেশী এক গৃহবধূর শ্লীলতাহানি করেছিল বলে অভিযোগ। সে সময় বিষয়টি সালিশি সভায় মিটমাট হয়ে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

রবিবার বিকালে কিশোরীর বাবা ফালাকাটা থানায় প্রতিবেশী ভ্যানচালক যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর জন্য ফালাকাটা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেছেন, “ওই ঘটনায় ধৃতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে সালিশি সভা নিয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।”

এই বিষয়টি নিয়েও রবিবার সকালে পাড়ায় সালিশি সভা ডাকেন এলাকার তৃণমূল প্রধানের স্বামী তথা এলাকার তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পাল। সে সময় বেঁকে বসেন নির্যাতিতার বাবা। তাঁর কথায়, “ওই যুবক আগেও অন্যায় করে পার পেয়েছে। এ ভাবে সালিশি করে ছাড়া হলে সে আবার অন্যায় করবে। ওর উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারে আইন। সে জন্য আমি সালিশি মানব না বলে জানিয়ে দিয়েছি।” দুপুরে এলাকার যুবকরা অভিযুক্তকে বাড়ি থেকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন বাবুর কথায়, “পাড়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাই গ্রামবাসীরা আমায় খবর দিয়েছিল। তাই গিয়েছিলাম। স্ত্রী বাড়ির বাইরে তাই আমাকে যেতে হয়েছে। অন্য দলের লোকেরাও সেখানে ছিলেন। কিশোরীর পরিবার আইনের রাস্তায় যাবে বলে জানালে আমরা তা মেনে নিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

falakata rape tmc leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE