নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়ায় এক রাতের বৃষ্টিতে জলে ভাসল শিলিগুড়ি। শহরের হাকিমপাড়া, কুরেশি মহল্লা, ডাঙিপাড়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালাপট্টি, মহারাজ কলোনি, টিউমলপাড়া, জ্যোতিনগর, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সন্তোষীনগর, গঙ্গানগর, ২৫, ৩১, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। অনেক বাড়ির ভিতরে ভোর রাত থেকেই জল ঢুকে যায়। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের পাড়াতেই অনেক জায়গায় নিকাশি উপচে রাস্তা জলে ভাসে। ৪ এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানায় মহারাজ কলোনিতে নির্মীয়মান একটি বহুতলের জায়গায় জমে থাকা জলের চাপে দেওয়াল ধসে ৩ জন জখম হয়েছেন। ওই কলোনি এবং লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা সকাল ৮ টা নাগাদ ঝঙ্কার মোড়ে অবরোধ করেন। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ যায়। ঘন্টাখানেক অবরোধের পর পুলিশ লাঠি চালিয়ে অবরোধকারীদের তোলে। তাতে কয়েকজন জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ।
কলকাতায় একটি বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। সাতসকালে শিলিগুড়ি শহর জলমগ্ন হওয়ার খবর পেয়ে মন্ত্রী পুরসবা ও প্রশাসনের অপিসারদের দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করানোর নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, “বর্ষায় বৃষ্টি হবে। তাতে জল যাতে না জমে সে জন্য পুরসভার তরফে আগাম প্রস্তুপতি নেওয়া দরকার। সেটা অতীতের পুরবোর্ড করলে বাসিন্দাদের দুর্দশায় পড়তে হতো না। আমরা জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি।”
মহকুমায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা সেলের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হীরক রায় বলেন, “নিকাশি ঠিক না থাকার জন্যই বিভিন্ন এলাকায় জল জমেছে বলেই মনে হচ্ছে। কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে একটি রিপোর্ট পুর কর্তৃপক্ষের কাছেপাঠানো হবে। এ দিন অবশ্য ত্রাণের জন্য কোনও দাবি আসেনি। তবে দুর্ভোগ মোকাবিলায় প্রশাসন তৈরি। শুকনো খাবার, ত্রিপল সমস্ত মজুত রয়েছে।” মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, বর্ষা পরিস্থিতি জন্য কনট্রোল রুম রয়েছে। সেখানকার ফোন নম্বর ০৩৫৩-২৪৩০৮০০।
রাতভর বৃষ্টির জেরে মাঝরাত থেকেই শহরের রেলগেটের অপরপ্রান্তের পুরানো শিলিগুড়ি বলে পরিচিত এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শক্তিগড়, মিলনপল্লি, দেশবন্ধুপাড়া, বিদ্যাসাগরপল্লি, ঘোষপাড়া, ডাঙিপাড়া, বাবুপাড়া, জ্যোতিনগর, মহারাজ কলোনি, টিউমলপাড়া, মহানন্দাপাড়া, খালপাড়া, নয়াবাজারের মত এলাকার বাসিন্দারা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কার্যত চমকে উঠেন। কোথাও হাঁটু জল, কোথাও আবার কোমর জল। সেই সঙ্গে চলছে অঝোরে বৃষ্টি। সাত সকালে স্কুল-কলেজে যেতে সমস্যা পড়ে যায় শিশু থেকে কচিকাঁচারা।
নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রেল লাইন লাগোয়া আন্ডারপাসে জল জমে যায়। এলাকার সদস্য প্রাক্তন কংগ্রেসের কাউন্সিলর স্বপন চন্দ বলেন, ‘‘১০ বছর ধরে আন্ডারপাসের কাজ চলছে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জল মহানন্দা নদীতে যাওয়ার একটি নিকাশি নালা ঢেকে দেওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। পুরসভার গিয়ে কোনও উচ্চ পদস্ত অফিসারদের দেখা মেলেনি। বাসিন্দাদের ক্ষোভ হওয়াটা স্বাভাবিক।”
ঘন্টা খানেক অবরোধের পরে পুলিশ লাঠি চালালে অবরোধ ওঠে। সেই সময় কয়েকজন পড়েও হাতে পায়ে চোট পান বলে অভিযোগ। যদিও লাঠিচার্জের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন। তিনি বলেন, “লাঠি চার্জ হয়নি। লাঠি উঁচিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র। ওই অবরোধের জেরে শহরের একাংশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছিল।”
এদিন ওই এলাকায় যায় প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “ওই দেওয়াল পুরটাই ভেঙে ফেলা দরকার বলে জানিয়েছি। এলাকার নিকাশি বেহাল হয়ে রয়েছে। তাই এই পরিস্থিতি।” এ দিন বেলার দিকে পুরসভার তরফে অন্তত ১০০ মিটার লম্বা, ১৫ ফুট উচু ওই দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়। নির্মীয়মান ভবনের এলাকায় জমে থাকা জল বার করে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে যান তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল-সহ দলের অন্যান্য নেতারা। পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে জ্যোতিনগর, অম্বেডকর কলোনির প্রচুর বাড়িতে জল ঝুকে পড়েছে। ঘরের জিনিসপত্র খাটের উপর তুলেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা মিটছে না। ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের চম্পাসারি, রাজীবনগর এলাকায় জল জমেছে। কাওয়াখালির বিজেপি নেতা হরাধন বিশ্বাস, নিরঞ্জন রায়রা বলেন, “এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল। তা নিয়ে বারবার প্রশাসনকে জানালেও কাজ হয়নি। বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করে সমস্যা মেটানোর দাবি তুলেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy