একশো দিনের কাজ প্রকল্পের বকেয়া মজুরি মিলছে না বলে অভিযোগ উঠল মালদহের চাঁচলে। বিশেষ করে অনলাইন পদ্ধতিতে মজুরি দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই চাঁচল মহকুমার ৪৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বেশিরভাগেই ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শাখা ডাকঘরে যে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেই সব শ্রমিকেরা ৯ মাস আগে কাজ করলেও তাঁদের বকেয়া মেলেনি।এই ঘটনায় শ্রমিকদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও। মজুরি না মেলায় শ্রমিকেরাও আর কাজ করতে চাইছেন না। ফলে মহকুমা জুড়েই ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
মালদহের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ডাকঘর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। দ্রুত যাতে সমস্যা মিটে যায় তা দেখছি।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর উপভোক্তাদের মজুরি সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোন প্রকল্পে কতজন উপভোক্তা, তাদের মজুরি ও একাউন্ট নম্বর-সহ সব তথ্য পঞ্চায়েতগুলির তরফে প্রশাসনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ শ্রমিকের অ্যাকাউন্ট রয়েছে ডাকঘরে। গ্রামীণ এলাকার শাখা ডাকঘরগুলিতে ইন্টারনেট না থাকায় শ্রমিকদের বকেয়া মিলছে না বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকা গ্রাহকদের ক্ষেত্রে অবশ্য সেই সমস্যা নেই।
মালদহের সহকারি ডাক অধীক্ষক (সদর) অভিজিত দাস বলেন, “গ্রামীণ এলাকায় শাখা ডাকঘরে ইন্টারনেট নেই। সেক্ষেত্রে যে সব ডাকঘরে ইন্টারনেট রয়েছে, তার অধীনে থাকা শাখা ডাকঘরগুলির মধ্যে সমন্বয় করে উপভোক্তাদের টাকা দেওয়ার কথা। টাকা আমরা পেয়েছি। তারপরেও শ্রমিকরা কেন তা পাচ্ছেন না, কী সমস্যা হচ্ছে, তা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।” এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন পঞ্চায়েত কর্তারাও। ইতিমধ্যে কলিগ্রাম, চাঁচল-সহ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় বকেয়ার দাবিতে ইতিমধ্যে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের কথাই ধরা যাক। ওই পঞ্চায়েতে সাড়ে ছ’হাজার উপভোক্তার মধ্যে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে মাত্র তিনশো জনের। বাকিদের সবারই ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ন’ মাসে ওই পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের প্রকল্পে প্রায় এক কোটি টাকার কাজ হয়েছে। কিন্তু যাদের ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাদের অধিকাংশেরই মজুরি বকেয়া পড়ে রয়েছে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আব্দুল মান্নান বলেন, “চলতি বছরে পঞ্চায়েতে ৯০টি প্রকল্পের মধ্যে ৭০টিতে কাজ হয়েছে। তা বকেয়া থাকায় শ্রমিকরা আর কাজ করতে চাইছেন না। ফলে বাকি ২০টি প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে।”
ওই পঞ্চায়েতের দুই শ্রমিক বিশ্বনাথ শর্মা ও অরবিন্দ শর্মা বলেন, “আড়াই হাজার টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এভাবে চললে আমরা খাব কী?”
ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ওবাইদুর রহমানও বলেন, “৯ মাস আগে বাঁধ সংস্কারে ৭০ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে। অথচ ৯০ শতাংশ শ্রমিক বকেয়া পাননি। বকেয়ার দাবিতে ওরা প্রায় প্রতিদিন হামলা করছে। প্রশাসনকে সব জানিয়েছি।” হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের বিডিও কৌশিক পাল বলেন, “এই সমস্যা নিয়ে নবান্নে বৈঠকও হয়েছে। ডাকঘর কর্তৃপক্ষ সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা মিটল কই?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy