Advertisement
E-Paper

না-হারা জেদেই সাফল্য ছিনিয়েছে আব্দুল

এক দিন মুরগি বিক্রি না হলে ভাত জুটবে কী ভাবে, সেই দুশ্চিন্তাতেই দিন কাটে আব্দুলের। সেই বাজার সামলে আব্দুলের অন্য লড়াই শুরু হত রাতে। কুপির আলোয় বই নিয়ে বসে সে। অঙ্ক কষে, রাত বাড়তে থাকে। এর পর একে একে পড়ে নেয় ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা। কঠিন অধ্যবসায় শেষে ফল পেল দিনহাটার পুটিমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের কোয়ালিদহ গ্রামের আব্দুল সামাদ।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০১:৫৪
এ ভাবে মুরগি দোকান সামলে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে আব্দুল সামাদ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

এ ভাবে মুরগি দোকান সামলে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে আব্দুল সামাদ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

এক দিন মুরগি বিক্রি না হলে ভাত জুটবে কী ভাবে, সেই দুশ্চিন্তাতেই দিন কাটে আব্দুলের। সেই বাজার সামলে আব্দুলের অন্য লড়াই শুরু হত রাতে। কুপির আলোয় বই নিয়ে বসে সে। অঙ্ক কষে, রাত বাড়তে থাকে। এর পর একে একে পড়ে নেয় ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা। কঠিন অধ্যবসায় শেষে ফল পেল দিনহাটার পুটিমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের কোয়ালিদহ গ্রামের আব্দুল সামাদ। এ বারের মাধ্যমিকে ৬১৮ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সেই ছেলে। এলাকাবাসীর পাশাপাশি দিনহাটা জড়াবাড়ি হাইস্কুলের এই ছাত্রের ফলে গর্বিত তার শিক্ষকেরাও।

আব্দুল বলে, “গরিব বলে কি ভাল ফল করতে পারব না? এই ব্যাথা আমাকে তাতিয়েছে। তা থেকেই ভাল ফল করার জেদ চেপে যায়। ফল ভাল হয়েছে। তবে আর একটু বেশি নম্বর পাব ভেবেছিলাম।” ভবিষ্যতে আব্দুল গবেষণা করার পাশাপাশি শিক্ষকতাও করতে চায়। সে লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে তার পরবর্তী পড়াশোনা। ইতিমধ্যেই তার জন্য ভর্তি হয়েছে আল আমিন মিশনেও। নিজের ছাত্র সম্বন্ধে জড়াবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলক সাহা বলেন, “ওর মধ্যে পড়াশোনা করার একটা অদম্য ইচ্ছে কাজ করত। কোনও বিষয় বুঝতে না পারলে শিক্ষকদের কাছে ছুটে আসত। আব্দুলের এই গুণই ওকে বাকিদের থেকে আলাদা পরিচিত দিয়েছে। আমরা সব সময় ওর পাশে থাকব।”

স্কুল সূত্রে খবর, সব বিষয়েই লেটার পেয়েছে আব্দুল। বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮৪, অঙ্কে ৯৫, ভৌতবিজ্ঞানে ৯০, জীবনবিজ্ঞানে ৯৩, ইতিহাসে ৮৪ এবং ভূগোলে পেয়েছে ৮২। স্কুল থেকে এক কিলোমিটার দূরে কোয়ালিদহ গ্রামে আব্দুলদের বাড়ি। টিনের বেড়া, টিনের চাল দেওয়া অপেক্ষাকৃত একটি বড় ঘরে আব্দুলরা তিন ভাই (বাকি দু’জন আব্দুলের ছোট) এবং তাঁর মা-বাবা থাকেন। একটি ছোট ঘরে মুরগিদের থাকার জায়গা। আর একটায় রান্না হয়। তাঁর বাবা আবেদ আলি মিঞা দিনমজুরি করেন। আর সন্ধেয় ছেলের সঙ্গে বসে মুরগি বিক্রি করেন। তিনি জানান, প্রায় চার বছর ধরে আব্দুল তাঁর সঙ্গেই ব্যবসার কাজে নেমেছে। যে দিন দিনমজুরির জন্য তিনি দোকানে যেতে পারেন না, সে দিন আব্দুলই একা সব সামলায়। আব্দুলদের বাড়িতে দিন পনেরো আগেও কোনও বিদ্যুৎসংযোগ ছিল না। মাত্র কয়েক দিন আগেই বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে আব্দুলের বাড়িতে। আব্দুলের বাবা বলেন, “ছেলেটার পড়াশোনার খুব ইচ্ছে। এক দিকে কুপির আলো, আর এক দিকে প্রচণ্ড গরম, কেউ তাকে হার মানাতে পারত না।” তিনি বহু বার পঞ্চায়েত, প্রধানদের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রার্থনা করেছেন। অভিযোগ, কোনও সাড়া মেলেনি। “আর কিছু দিন আগে বিদ্যুৎ পেলে ছেলের ফল আরও ভাল হত,” বলছিলেন আবেদ আলি মিঞা।

আব্দুলের এমন রেজাল্টে বেজায় খুশি মহেশের হাটের ব্যবসায়ীরাও। কোয়ালিদহের বাসিন্দা অনিলচন্দ্র বর্মণ, নারায়ণ সরকার, দীনেশ বর্মণরা বলেন, “খুব ভাল লাগছে। আব্দুল খুব শান্ত ছেলে। আগেই ভেবেছিলাম মাধ্যমিকে ভাল করবেই সে। ভবিষ্যতে ও আরও উন্নতি করবে।”

namitesh ghosh cooch behar abdul result
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy