দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত পাঁচটি ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত এবং নিষিদ্ধ করল এসজেডিএ। বুধবার শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১২৩ তম বোর্ড মিটিংয়ে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসজেডিএ সূত্রেই জানা গিয়েছে, যে পাঁচটি সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কলকাতার ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরো, শিলিগুড়ির মেসার্স শঙ্কর পাল, মেসার্স নন্দিনী কনস্ট্রাকশন, মেসার্স এম এস অ্যান্ড কোম্পানিস এবং নিউ ইন্ডিয়া কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই ৯টি অভিযোগ করা হয়েছে। সেই অভিযোগেই ওই পাঁচটি সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এ দিন বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি অনুমোদন হয়।”
এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ জানান, ওই সমস্ত মামলা না মেটা পর্যন্ত ওই সংস্থাগুলি এসজেডিএ-র কোনও রকম ‘টেন্ডার’ বা ‘কোটেশন’ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না। কোনও কাজের তদারকিও করবে না।
এসজেডিএ-র বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তত ১০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। খোদ এসজেডিএ-র তরফেই এ পর্যন্ত ৯ টি অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ১৬ মে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসজেডিএ-র তরফে বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো এবং মহানন্দা নিকাশি প্রকল্পে অন্তত ৬০ কোটি টাকা অনিয়মের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ এসজেডিএ-র তিন বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, প্রবীণ কুমার, সপ্তর্ষি পালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত এসজেডিএ-র আধিকারিক, ওই সমস্ত প্রকল্পের কাজে যুক্ত বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার মিলিয়ে অন্তত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা সকলেই এখন জামিনে রয়েছেন।
গোড়ায় তদন্তে নেমে ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর এক কর্মীকে এবং পরবর্তীতে ওই সংস্থার কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শ্মশানে বৈদ্যুতিকচুল্লি বসানো, নিকাশি প্রকল্পের দুর্নীতিতে তারা যুক্ত বলে অভিযোগ। শহরে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোয় অনিয়ম, ই-টেন্ডার প্রক্রিয়াতেও জালনথি তৈরি করে পছন্দের ঠিকাদারকে মাত্রাতিরিক্ত দরে কাজ পাইয়ে দেওয়ার মতো অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আরও ৪টি অভিযোগ পরবর্তীতে এসজেডিএ-র তরফে দায়ের করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে জোড়াপানি নদী সংস্কার প্রকল্পে ৯ কোটি টাকার কাজ করানো নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগও। গ্রেফতার করা হয় ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার শঙ্কর পাল, সুব্রত দত্তর মতো ঠিকাদারকেও। শঙ্করবাবুর নিজের নামেই কোম্পানি রয়েছে। নন্দিনী কনস্ট্রাকশন কোম্পানিটিও তাদের। জোড়াপানি নদীর দুর্নীতিতে ওই সংস্থা দুটি জড়িত। সুব্রতবাবুর এমএস কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো, ত্রিফলা বাতি বসানোর ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর হয়ে প্রকল্পের কাজে যুক্ত শিলিগুড়ির নিউ ইন্ডিয়া কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্ণধার অজয় মৈত্র, তাপস বসুকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ এসজেডিএ’র তত্কালীন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, বোর্ডের সদস্য তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, মাটিগাড়া নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার এবং তত্কালীন তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সভাপতি চন্দন ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গ্রেফতার করা হয় সে সময় মালদহের জেলাশাসক পদে থাকা তথা এক সময় এসজেডিএ সিইও গোদালা কিরণ কুমারকে। ওই ঘটনায় সরিয়ে দেওয়া হয় তত্কালীন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনকে। তা নিয়ে রাজ্য জুড়েই হইচই পড়ে। কয়েক মাস পরেই ওই সমস্ত মামলার তদন্তভার পুলিশের হাত থেকে সিআইডি’র হাতে দেওয়া হয়। তবে তারা এখনও চার্জশিট দিতে পারেনি। সম্প্রতি ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর নামে মহানন্দা নিকাশি প্রকল্পে দুটি পাম্প হাউজ তৈরির ব্যাপারে ৩ কোটি টাকা দুর্নীতির আরও একটি অভিযোগ পুলিশে জানানো হয়। এ সবের পরেও অভিযুক্ত সংস্থাগুলিকে কেন কালো তালিকা ভুক্ত করা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ দিন বোর্ড সভায় অবশেষে ওই সংস্থাগুলিকে কালোতালিকা ভুক্ত করলেন এসজেডিএ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy