শিলিগুড়ি বিধান রোডের সেই ভবন এবং সামনে রাস্তা।—নিজস্ব চিত্র।
বিধান রোডের গা ঘেঁষে বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ার যে প্রকল্প বাম আমলে শুরু হয়েছে তা পুনর্বিবেচনার ব্যাপারে শহরবাসীর মতামত জানতে নাগরিক কনভেনশন ডাকছে শিলিগুড়ি নাগরিক সমিতি। সংগঠন সূত্রের খবর, দুর্গাপুজোর পরেই শিলিগুড়িতে ওই কনভেনশন করার কথা ভাবছে সংগঠন। সংগঠনের তরফে অন্যতম কর্মকর্তা দুর্গা সাহা জানান, তাঁরা সংস্থার প্রবীণ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে দিনক্ষণ ঠিক করবেন।
ঘটনাচক্রে, এখন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) পক্ষ থেকেও ওই প্রকল্প নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। বাম আমলে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান থাকার সময়ে একটি বেসরকারি নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে জায়গাটি পার্কিং প্লাজা ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ার জন্য সমঝোতাপত্রে সই করেন। সার্থী বিল্ডার্স নামের ওই বেসরকারি সংস্থার অন্যতম কর্ণধার নিরঞ্জন মিত্তল ও তাঁর সহযোগীরা কাজ শুরুও করেন। কিন্তু, আচমকা নির্মাণের কিছুটা অংশ ভেঙে পড়লে বিতর্ক দানা বাঁধে। এর পরে বিধান রোড চওড়া করার জন্য দাবি ওঠে। তখন ওই নির্মাণ ভেঙে পিছনে সরাতে হয়। এখন ফের বিধান রোডের গা ঘেঁষে বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি তৈরির কাজ চলায় রোজই সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা। সে জন্য শহরের স্বার্থে ওই প্রকল্পটি নিয়ে পুনর্বিবেচনার আর্জিও পৌঁছেছে এসজেডিএ-এর কাছে। সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ‘জনস্বার্থ সুরক্ষিত’ রাখার জন্য সব রকম চেষ্টা করার আশ্বাস দেওয়ায় বাড়তি মনোবল পেয়েছে শিলিগুড়ি নাগরিক সমিতি।
এই অবস্থায় প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের অন্দরেও। কারণ, বছর দেড়েক আগে দুই রাস্তার সংযোগস্থলকে চওড়া করে ফাঁকা করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। মূলত পূর্ত দফতরের তরফে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা করা হয়। শিলিগুড়ি পুলিশ এবং পূর্ত দফতরের তরফে পুরসভাকে বিষয়টি জানানোও হয়। ওই দুই রাস্তার সংযোগস্থল বা হাসমি চক অবধি ভবন তৈরি হচ্ছে। স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু করেই পূর্ত দফতর ওই পরিকল্পনা নেয়। পুলিশও জানিয়ে দেয়, হাসমি চকে থাকা ট্রাফিক গার্ডটিকেও সরিয়ে আরও পিছিয়ে আনা হবে। এতে হাসমি চকও অনেক প্রশস্ত হবে। বাসিন্দা সহজেই গাড়ি, বাইক নিয়ে তো বটেই হেঁটে হিলকার্ট রোড থেকে বাঁ দিকে ঘুরে বিধান রোডে ঢুকতে পারবেন। এতে শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় অনেকটাই যানজট মুক্ত হয়ে যাবে।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত এলাকাটি মাটি ফেলে সমান করানো হয়। ট্রাফিক গার্ডটিকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে পুলিশ পুরসভাকে ট্রাফিকের সুষ্ঠু ব্যবস্থার জন্য এলাকাটি দরকার বলেও তত্কালীন পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, ওই সময়ে হিলকার্ট রোড ও বিধান রোডের ওই সংযোগস্থল পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। যদিও জমিটির ওই অংশে এখনও কোনও নির্মাণ কাজ করা হয়নি। এতে এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তার দিকে দেখে গাড়ি ঘোরানো প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। এ ছাড়া পাঁচিল তুলে দেওয়ার পর ভবনটির বিধানরোডের দিকে ঘোরার মোড়ের সামনেই অটো স্ট্যান্ড গড়ে ওঠে। যাতে রাস্তাটি আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়ে।
বিধান রোডের ওই রাস্তাটি পূর্ত দফতরের দার্জিলিং ডিভিশনের আওতায় থাকলেও বর্তমানে তা দফতরের নর্থ বেঙ্গল কনস্ট্রাকশন ডিভিশনের আওতায় গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে পূর্ত দফতরের শিলিগুড়ি সাব ডিভিশনের সহকারি বাস্তুকার সুভাষ দাস বলেছেন, “আমরা ওই গুরুত্বপূর্ণ মোড়টি চওড়া করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম ঠিকই। তবে ওই মোড়ের জমি বেসরকারি সংস্থার হাতে রয়েছে বলে জেনেছি। সরকারিভাবে আমাদের কোনও নির্দেশ না আসায় কাজ হয়নি।” আর শিলিগুড়ির বর্তমান পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেছেন, “শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সব সময় চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল জানা নেই। আমি নিশ্চয়ই খোঁজ নিয়ে দেখব।”
শহরের বাসিন্দারা জানান, হাসমি চক চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সংযোগস্থল। একদিকে কাছারি রোড, বিধান রোড। অন্যদিকে হিলকার্ট রোড এবং মহাবীরস্থান উড়ালপুলের রাস্তা রয়েছে। এ ছাড়া একাধিক বাই লেন রয়েছে। সেই সঙ্গে ওই মোড়েই রেলের সিটি বুকিং অফিসটি রয়েছে। ফলে, ওই এলাকায় রাস্তার গা ঘেঁঁষে কোনও বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণ হলে সমস্যা হবে বলে রেলের ইঞ্জিনিয়র, কর্মীদের অনেকেই মানছেন। রেল সূত্রের খবর, রেলের জমিটি জনস্বার্থে ব্যবহার করা হবে বলে এসজেডিএ সেই সময়ে জানিয়েছিল। রেলের এক কর্তা জানান, ওই জমির কতটা জনস্বার্থে ব্যবহার হবে ও কী পরিমাণ বাণিজ্যিক প্রয়োজনে লাগানো হবে সেটা জনসমক্ষে আসা জরুরি। সার্থী বিল্ডার্সের তরফে রতন কুমার বেণিপুরী বলেছেন, “আমরা পুরসভার অনুমোদন নিয়ে কাজ করছি। যখন যেমন নকশায় পরিবর্তন করার জন্য বলা হয়েছে সেটা করেছি। এখন যদি কোনও প্রশ্ন ওঠে তা হলে পুরসভা এসজেডিএকে জানাক। আমরা কিছু বলতে পারি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy