Advertisement
E-Paper

পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে অবরোধ হিলকার্ট রোডে

তদন্তে গিয়ে শিলিগুড়ির খালপাড়া ফাঁড়ির ওসি অভিযুক্তের বাড়িতে চা-মিষ্টি খেয়েছেন, এই অভিযোগে আধঘণ্টা অবরোধ চলল শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে হিলকার্ট রোড অবরোধ শুরু করে ডাঙ্গিপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২২
ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।

ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।

তদন্তে গিয়ে শিলিগুড়ির খালপাড়া ফাঁড়ির ওসি অভিযুক্তের বাড়িতে চা-মিষ্টি খেয়েছেন, এই অভিযোগে আধঘণ্টা অবরোধ চলল শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে হিলকার্ট রোড অবরোধ শুরু করে ডাঙ্গিপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছোলে তাঁদের ঘিরে ধরে শুরু হয় বিক্ষোভ। খালপাড়া ফাঁড়ির ওসি সঞ্জয় ঘোষের দিকে তেড়ে যান বিক্ষোভরত মহিলারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওসির সামনে যান অনান্য পুলিশ কর্মীরা। ওসিকে ঘিরে বিক্ষোভকারীরা ধাক্কাধাক্কিও শুরু হয়। সে সময় অনান্য পুলিশ অফিসাররা তাঁকে ভিড়ের পেছন দিকে সরিয়ে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকেও প্রকাশ্যেই পুলিশের ভূমিকায় সরব হতে দেখা যায়। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই বাসিন্দাদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে বলে চিত্‌কার করে ক্ষোভ জানাতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের নেতাদের। বিক্ষোভে দেখা গিয়েছে এলাকার প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলরকেও। সাড়ে ১২টা নাগাদ অবশ্য তৃণমূলের ওই নেতাদের এবং পুলিশের একাংশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে যায়।

এ দিকে, এ দিন আধঘণ্টা ধরে হিলকার্ট রোড অবরোধ থাকলেও পুলিশ এ দিন কোনও মামলা দায়ের করেনি। পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, অবরোধ হলেই নিয়ম অনুয়াযী মামলা দায়ের করার কথা। কিন্তু এ দিন যেহেতু পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে উঠেছিল, তাই বাসিন্দাদের নামে মামলা করে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যেতে পারে ভেবে শুধু পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে ওই অফিসারের দাবি। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ডিসিকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।” ডিসি ওজি পাল বলেন, “দুই পরিবারের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। তদন্তকারীদলের ভূমিকা খতিয়ে দেখব।”

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও বিষয়টি শুনেছেন। গৌতমবাবু বলেন, “কেন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল তা খতিয়ে দেখতে বলেছি। ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ আধিকারিকদের ফোন করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”

খালপাড়া ফাঁড়ির ওসি সঞ্জয় ঘোষকে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে
বলছেন তৃণমূল নেতা মিলন দত্ত। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোলমালের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবারে। ছোটদের খেলা নিয়ে ডাঙ্গিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুর্তজা আলির পরিবারের সঙ্গে পড়শি এক পরিবারের বচসা হয় বলে অভিযোগ। সেই বচসাকে কেন্দ্র করে এলাকার একাংশ বাসিন্দার মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। সে সময় মুর্তজা আলির ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আফতাব আলমনকে ঢিল ছুড়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। তার চোখে আঘাত লেগেছে বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। গুরুতর জখম আফতাবকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাকে মারধরে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মারধরের পাল্টা অভিযোগ ওঠে মুর্তজা আলির পরিবারের বিরুদ্ধেও।

আফতাবের চোখ নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করলেও, অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ কোন উদ্যোগই নেয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে গত বুধবার সকালে অভিযুক্ত পরিবারের বাড়িতে গিয়ে পুলিশের ওসি সহ অন্যরা চা মিষ্টি খেয়েছেন বলে মুর্তজা আলিদের অভিযোগ। ওই ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’র কথা প্রচার করে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে বলে অভিযোগ। এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ মুর্তজা আলির পড়শিরা হিলকার্ট রোডে এসে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করে। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় অবরোধ। একটি রিকশাও উল্টে দেন বাসিন্দারা। পুলিশের দিকে কয়েকজন মহিলা জুতোও দেখান বিক্ষোভরত কয়েকজন মহিলা। খালপাড়া ফাঁড়ির ওসি সঞ্জয় ঘোষের দিকে তেড়ে গিয়ে মহিলারা বলতে থাকেন, “ওই অফিসার শুধু অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে চা-মিষ্টি খান। অভিযুক্তদের ধরার কথা বলে, উল্টে আমাদের ধরে আনতে বলেছেন।” বিক্ষোভে ছিলেন তৃণমূলের জেলা কমিটির নেতা মিলন দত্ত বলেন, “কয়েকজন পুলিশের জন্য অশান্তি হচ্ছে। বাসিন্দারা প্রতিদিনই নানা অভিযোগ করছে। এলাকায় মদ, জুয়ার আসর চলছে বলেও অভিযোগ। খালপাড়া ফাঁড়ির ভূমিকা খতিয়ে দেখা উচিত।” ওসি সঞ্জয়বাবুকে ঘটনাস্থল থেকে দূরে চলে যেতে বারবার ‘নির্দেশ’ দিতে দেখা যায় মিলনবাবুকে। একই অভিযোগ করেছেন এলাকার প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর রুমা নাথও।

খালপাড়া থানার ওসি সঞ্জয় ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, “নিয়ম মেনেই তদন্ত চলছে। অভিযুক্তরা এলাকায় নেই। কোনও অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে চা বা মিষ্টি খাইনি। সকাল বেলায় তদন্তে যাওয়া হয়েছিল। বাড়ির পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনও পুলিশ কর্মী চা খেয়ে থাকবেন।’’

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তরা এলাকায় নেই। অভিযুক্ত পরিবারের তরফে রুবি খাতুন থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন। রুবি খাতুনদের দাবি, মুর্তজা আলির পরিবারের তরফেই প্রথমে হামলা চালানো হয়। রুবি খাতুন সহ অনান্যকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

police blockade agitation hilcart road siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy