শহরের সেবক রোডে দিনভর কড়া রোদে জ্বলছে সোডিয়াম ভেপার। একটি নয়, পরপর একাধিক। শীতের সকালে অনেক সময় কুয়াশায় শহর ঢেকে থাকলে দেরি অবধি পথবাতি জ্বলার চল রয়েছে। গত সপ্তাহেই তা তো ছিল না। এটা ভেবেই পিসি মিত্তাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুপুর অবধি এমন দৃশ্য দেখে অবাক হয়েছেন বহু বাসিন্দাই। শুধু সেবক রোড নয়, তিনবাতি, সুভাষপল্লি, বর্ধমান রোড, মাল্লাগুড়ি, জংশন, প্রধাননগর-সহ শহরের বহু এলাকায় দিনের বেলায় পথবাতি জ্বলে থাকতে দেখেছেন শহরের অনেকেই।
বিদ্যুত্ বন্টন দফতরের হিসাব, ২৫০-৩০০ কিলোওয়াটের একটি ভেপার চার ঘন্টা জ্বললেই বিল উঠে যাবে এক ইউনিট। অন্তত দুপুর ১টা অবধি জ্বললেই বিল ওঠে নামে প্রায় ১৫-২০ টাকা। টিউবলাইটের ক্ষেত্রে প্রায় ১০-১২ টাকা। সেখানে একাধিক পথবাতি এভাবে জ্বললে একদিনে ‘অপচয়ের’র পরিমাণ দাড়িয়ে যায় কয়েকশ টাকা। মাসের হিসাবে হাজার হাজার টাকা। আর সেই বিদ্যুত্ বিল বিনা কারণের বহণ করতে হয় শিলিগুড়ি পুরসভাকে।
এই খরচ পুরসভাকে বহণ করতে হচ্ছে কোনও অবস্থায়?
যখন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি ডিসেম্বর, মোট ১১ মাস বিদ্যুতের কোনও বিলই বিদ্যুত্ বন্টন কোম্পানিকে মেটাতে পারেনি পুরসভা। পুরসভা ও বন্টন কোম্পানি সূত্রের খব, পথবাতি, জলের পাম্পিং স্টেশন, পাম্প এবং সিকিউরিটি বাবদ পুরসভার বিদ্যুত্ বিল বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা। বিল দেওয়ার সময় যাতে কম্পিউটারের হিসাবে যোগ হয়ে যাবে আরও ফাইনের টাকাও। ইতিমধ্যে বন্টন কোম্পানির তরফে একাধিকবার পুরসভাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বিদ্যুত্ বন্টন কোম্পানির জোনাল ম্যানেজার সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বকেয়া থাকলেও নাগরিক পরিষেবার স্বার্থে আমরা বিদ্যুত্ সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছি। পুরসভাকে বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মিটিয়ে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।” এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবে’র দাবি, “বিদ্যুতের বকেয়া বিল তো বাম আমল থেকে চলে আসছে। কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডও ঠিকঠাক কিছু করেনি। বিষয়টি আমরা দেখছি।”
পুরসভা সূত্রের খবর, গত ২১ নভেম্বর পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের বৈঠকে শুধুমাত্র বকেয়া প্রায় ৩ কোটি টাকার পথবাতির বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানানোর কথা ঠিক হয়েছে। বন্টন কোম্পানির হিসাব বলছে, প্রতিমাসে পুরসভার বিদ্যুত্ বিল তৈরি হয় হয়। ২০০৯ সাল নাগাদ মাসে বিল ৩০ লক্ষ টাকা বিল হলেও বর্তমানে এর পরিমাণ ৭০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। যারমধ্যে পথবাতির বিল হয় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা।
পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গত পাঁচ বছরের লোকসংখ্যা এবং চাহিদার সঙ্গে তালমিলিয়ে শহরের অলিগলি, বড়-ছোট রাস্তা, মাঠ, পার্কে বাতি লাগানোর সংখ্যা বেড়েছে। জলের জন্যও খরচ বেড়েছে। শহরের প্রায় ২৫ হাজার বিভিন্ন রকমের বাতিস্তম্ভে সন্ধ্যা ৫টা থেকে ভোর ৫টা অবধি বাতি জ্বলছে। এরসঙ্গে পুরসভার ঘাড়ে রয়েছে জলপ্রকল্প এবং শ্মশানঘাটের বিদ্যুতের বিলও।
প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “তৃণমূল সরকার অর্থনৈতিক অবরোধ করেছিল। নিজেদের আয় থেকে সাধ্যমত বিল মেটানোর চেষ্টা হয়েছে।” আবার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (বিদ্যুত্) তথা বর্তমানে বিজেপি নেত্রী সবিতা অগ্রবাল বলেন, “বাম আমলে রাজ্য সরকার বিদ্যুতের বিল মেটানোর ব্যবস্থা করত। আমাদের সময় সরকার কিছুই করেনি।” আরেক প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (বিদ্যুত্) ও কংগ্রেস নেতা স্বপন চন্দ বলেন, “বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বেই। রাজ্য সরকার কোনও সাহায্য করেনি।”
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মে মাসে সপার্ষদ পদত্যাগ করেন মেয়র গঙ্গোত্রী দেবী। জুলাই মাসে ভেঙে দেওয়া হয় শিলিগুড়ি বোর্ড। দায়িত্বে আসে প্রশাসক বোর্ড। ছয় মাস হতেই চললেও রাজ্য সরকারের প্রশাসক বোর্ড এই নিয়ে ব্যবস্থা নেয়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের নুরুল ইসলাম বলেন, “সরকারের তো এসব নিয়ে মাথাব্যাথাই নেই। আমাদের সময় সরকারের পুরসভার বরাদ্দের মধ্যে বিদ্যুতের বিলের টাকা থাকত। উল্টে, উত্সব বা কার্নিভালের নামে পুরসভার গচ্ছিত টাকাই তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
একনজরে বকেয়া আনুমানিক বিল
(ফ্রেব্রুয়ারি- ডিসেম্বর-২০১৪)
• পথবাতি- প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ।
• শিলিগুড়ি পাম্প হাউস ও শ্মশানঘাট- প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ।
• জলপাইগুড়ি ইউনিটের জলপ্রকল্প- প্রায় ১ কোটি।
• সিকিউরিটি বাবদ- ৪০ লক্ষ।
সূত্র-বিদ্যুত্ বণ্টন কোম্পানি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy