Advertisement
E-Paper

ফেরার পথে দুর্ঘটনা, মৃত ৪ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী

জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না। তীব্র গতিতে ছুটে যাওয়া বাস নয়ানজুলিতে উল্টে যাওয়ায় মৃত্যু হল চার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। মৃত্যু হয়েছে বছর বারোর আরেক স্কুল ছাত্রেরও। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। তাদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য ও নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১০
জলপাইগুড়ি হাসপাতালে জখম সোবেন বর্মন। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জলপাইগুড়ি হাসপাতালে জখম সোবেন বর্মন। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না। তীব্র গতিতে ছুটে যাওয়া বাস নয়ানজুলিতে উল্টে যাওয়ায় মৃত্যু হল চার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। মৃত্যু হয়েছে বছর বারোর আরেক স্কুল ছাত্রেরও। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। তাদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে।

সোমবার বিকেলে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থানার জামালদহ লাগোয়া থেলপো মোড় এলাকায় এই দুর্ঘটনার জন্য চালকই দায়ী বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, বাসটি খুব জোরে চালানো হচ্ছিল। এক যাত্রীর দাবি, চালক পিছন ফিরে কথা বলতে বলতে বাস চালাচ্ছিলেন। চালক অবশ্য পলাতক। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানান, দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হবে। চালকের খোঁজও শুরু হয়েছে।

তবে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল না বলেই এই বাসটিতে খুব ভিড় হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ দুর্ঘটনার পরে আহতদের অনেককে মেখলিগঞ্জ ও জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাসের কন্ডাক্টর ও এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম সত্যেন বর্মন (১৭), তাপস রায় ডাকুয়া (১৮), হিরঞ্জয় মণ্ডল (১৮), কাঞ্চন বর্মন (১৯) ও মেঘনাদ মণ্ডল (১২)। প্রথম চার জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তারা চ্যাংরাবান্ধা হাইস্কুলে পরীক্ষা দিয়ে জামালদহে ফিরছিল। সকলেই জামালদহ তুলসিদেবী হাইস্কুলের পড়ুয়া। মেঘনাদ কার সঙ্গে ফিরছিল, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

দুর্ঘটনার পরেই উত্তেজিত জনতা মাথাভাঙ্গা-কোচবিহার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। জামালদহ হাসপাতালেও ভাঙচুর চালান হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দফতরের আধিকারিকদের ওখানে পাঠানো হয়েছে। আহত পরীক্ষার্থীদের বলছি, দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। তারা যাতে আবার পরীক্ষা দিতে পারে, সেই বিকল্প ব্যবস্থা করার দিকটি পর্ষদ খতিয়ে দেখবে।” রাতেই ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়ে যান কোচবিহারের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার।

কোচবিহার জেলা মাধ্যমিক পরীক্ষা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক পার্থপ্রতিম রায় জানান, পরীক্ষার্থীদের কয়েকজনের অভিভাবক ওই বাসটি ভাড়া করেছিলেন। শুধু তাঁদের সন্তানদের নিয়েই বাসটি সকালে নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছয়। তিনি বলেন, “কিন্তু ফেরার সময় আরও অনেক পরীক্ষার্থী বাসটিতে উঠে পড়ে। পরীক্ষার্থী ছাড়াও আরও যাত্রী ছিল। কেউ কেউ ছাদেও গিয়ে বসেছিল।”

জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোবেন বর্মন, সফিয়ার রহমান, কমল অধিকারী জানায়, বাস কম থাকায় খুব ভিড় ছিল। অনেকে ছাদে উঠতে বাধ্য হয়েছিল। বাসের খালাসি সফিকুল মিয়াও আহত। তাঁকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তার ছেলে জয়নুল মিয়াঁ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সেও এই বাসে ছিল। জয়নুল জামালদহ হাসপাতালে ভর্তি। সফিকুল জানান, “বাসে ভিড় থাকায় ছেলেরা সবাই উপরে উঠে পড়েছিল।” ওই বাসেই ছিল রেখা দাস নামে এক পরীক্ষার্থী। তার অভিযোগ, “চালকের পিছনে তাকিয়ে কথা বলার জন্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে।”

বীরভূমের দুবরাজপুর, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ও শিলিগুড়িতেও পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনাতে কয়েকজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জখম হয়েছেন।

biswajyoti bhattacharyay namitesh ghosh jamaldaha soben barman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy