অফিসে ঢুকলেই চোখে পড়বে হোর্ডিংয়ে বড় হরফে লেখা রয়েছে লাইসেন্সের জন্য দফতর থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু তা কোথায় পাওয়া যাবে, এই প্রশ্ন করলেই দফতরের কর্মীদের জবাব, “আবেদনপত্রের জন্য কোনও বিভাগও নেই, তাই আবেদনপত্রও নেই।” সটান দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে অফিসের সামনে থাকা একটি জেরক্স এবং ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রের দোকান।
সেখান থেকে ছ’টাকাতে বিক্রি হচ্ছে এক একটি আবেদনপত্র। লাইন দিয়ে তাই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ বাসিন্দারা। বছরের পর বছর ধরে কোচবিহারে পরিবহণ দফতরে এমন ভাবেই আবেদনপত্র বিক্রি নিয়ে অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ। বিনামূল্যে যে আবেদনপত্র মেলার কথা, তা চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারে মোটরবাইক, গাড়ি মিলিয়ে লক্ষাধিক যানবাহন চলাচল করে। প্রতিদিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। অফিসে যে আবেদনপত্র নেই, সে কথা স্বীকার করেছেন কোচবিহার পরিবহণ দফতরের আধিকারিক অ্যাবরেন ভুটিয়া। সামনের একটি দোকান থেকে যে আবেদনপত্র বিক্রি করা হয়, সে কথাও তাঁর অজানা নয়। তিনি বলেন, “ফর্ম সঙ্কট থাকার জন্য মাঝে মধ্যে আমরা দিতে পারি না। একটি দোকানে ফর্ম জেরক্সের জন্য টাকা নেওয়া হয় বলে জানি।”
কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন অবশ্য সাফ জানাচ্ছেন, বিনামূল্যে পরিবহন দফতরের অফিস থেকে ওই আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমি বিশদে খোঁজ নেব। ওই ফর্ম অফিস থেকেই দিতে হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিবহণ দফতরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। দালাল চক্র থেকে শুরু করে একাধিকবার বেআইনি ভাবে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। কয়েক মাস আগে গাড়িতে ‘নম্বর প্লেট’ লাগাতেও বেআইনি ভাবে টাকা তোলার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় কোচবিহারের জেলাশাসক ছিলেন মোহন গাঁধী। ওই বেআইনি কাজ বন্ধে তিনি পদক্ষেপ করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
এ বারে আবেদনপত্র নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে সাধারণ বাসিন্দারা নিজেরা গিয়ে কাজ করতে পারেন না বলেও অভিযোগ। লাইন্সেস বানানোর যে কাজ ২৮০ টাকাতেই হয়, তা করতে ১০০০ টাকা দাবি করে দালালরা। গাড়ির মালিকানা বদল থেকে শুরু করে সব কাজেই চক্র সক্রিয় বলে দাবি। জেলাশাসক থেকে পরিবহণ আধিকারিক, বিধায়ক সবাই ওই চক্রের কথা স্বীকার করেছেন।
জেলাশাসক বলেন, “আমরা দালাল চক্র বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিয়েছি। বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষ অফিসে ঢুকে কাজ করবেন। কোনও সমস্যা হলে জানান।”
জেলা পরিবহণ দফতরের তিন সদস্যের কমিটির মধ্যে রয়েছেন তুফানগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূল নেতা অর্ঘ্য রায়প্রধান। তিনি বলেন, “ওই বিষয় নিয়ে আমাকে কেউ কখনও অভিযোগ জানায়নি। কেন অফিস থেকে আবেদনপত্র পাওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে খোঁজ নেব।”
বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে অভিযোগ করেন, “পরিবহণ দফতরে সাধারণ মানুষ সঠিক পরিষেবা পায় না বলেই দাদালদের খপ্পরে পড়ে। প্রকাশ্যে যে ভাবে আবেদনপত্র বিক্রি করা হয়, তা নিয়েই কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না। এতে বোঝা যায়, চক্রের শিকড় কতটা গভীরে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy