Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বাইরে বদলালেও পিছিয়ে আছে মোহিতনগর

মোবাইলের দোকান, মেরামতির দোকান, এক মিনিটে ডিজিটাল ছবি, ক্যাশ, সিম কার্ড, চাউমিন, পাওভাজি, চিকেন মোমো। হাট বসেছে মঙ্গলবারে। হাটের জামাকাপড়ের দোকানে নামী ব্র্যান্ডের রেডিমেড, হাটের আনাচে কানাচে ডিটিএইচ আর স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপন।

মোহিতনগর স্টেশন।

মোহিতনগর স্টেশন।

অনির্বাণ রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

মোবাইলের দোকান, মেরামতির দোকান, এক মিনিটে ডিজিটাল ছবি, ক্যাশ, সিম কার্ড, চাউমিন, পাওভাজি, চিকেন মোমো। হাট বসেছে মঙ্গলবারে। হাটের জামাকাপড়ের দোকানে নামী ব্র্যান্ডের রেডিমেড, হাটের আনাচে কানাচে ডিটিএইচ আর স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপন। বৈকুন্ঠপুর তথা জলপাইগুড়ির রাজপরিবার হাটের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা যায়। প্রায় ২০০ বছর আগের কথা। সেই প্রাচীন গৌরীহাটের পরিবর্তনের সঙ্গে মোহিতনগরের এই বদলে যাওয়ার ছবিটাও ধরা যায়।

প্রতি মঙ্গলবার গৌরীহাট বসে মোহিতনগরে। অতীতে, এই হাট-ই ছিল জনপদের অর্থনৈতিক লেনদেনের কেন্দ্রস্থল। হাটের ‘ফ্রেশ’ শাক-সব্জি, মাংস কিনতে লাগোয়া জলপাইগুড়ি তো বটেই, শিলিগুড়ি থেকেও নাকি ভোজনরসিকেরা আসতেন। চারপাশের নানা চা বাগানের শ্রমিকরাও ভিড় জমাতেন হাটে। জামাকাপড়, প্রসাধনী থেকে গেরস্থালির যাবতীয় প্রয়োজনে মোহিতনগরের বাসিন্দাদের হাটে যেতেই হত। আলপিন থেকে আমলকি, গবাদি পশু থেকে পেতলের বাসন, মিষ্টি, তেলেভাজা সবই এক চত্বরে।

হাটের বদলে যাওয়ার শুরু বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। দোকানে কাঁচের চুড়ি, চুলের ফিতের জায়গা দখল করেছে নামী রোদচশমা, ব্র্যান্ডেড সুগন্ধি, নেলপালিশ, আই-লাইনার। ছাপানো গামছা, ক্যাটক্যাটে রঙের গেঞ্জির ভিড় সরিয়ে মুখ বের করেছে ডেমিন শার্ট, জিন্সের প্যান্ট, ৬ পকেট ওয়ালা ট্রাউজার, মেয়েদের লো-কাট জিন্সও! চাকতি ছোঁড়ার দোকান আর নেই, আছে রকমারি মোবাইল সম্ভার। ডালের বড়া, ফুলুরিকে লড়তে হচ্ছে ফাস্ট ফুডের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।

একনজরে মোহিতনগর

• হাই স্কুল-২টি

• কলেজ ১টি

• রেল স্টেশন ১টি

• কেন্দ্রীয় কৃষি গবেষণাগার।

সমস্যা

• পানীয় জলের সরবারহ ব্যবস্থা নেই।

• জঞ্জাল অপসারণ হয় না।

• সর্বত্র পথবাতি নেই।

• রাস্তা বেহাল, কিছু এলাকায় কাঁচা রাস্তা।

• করলা নদী ভাঙন।

• পরিকল্পিত নিকাশি নেই।

অন্য সব মাপকাঠি সরিয়ে শুধুমাত্র এলাকার বাজার-চিত্র বলছে, বদলে গিয়েছে মোহিতনগর। একদা জনপদ, শহরতলির তকমা মুছে মোহিতনগর এখন পুরদস্তুর শহর। আধুনিক ‘স্মার্ট’ মোহিতনগর তার উপস্থিতি জানিয়ে দিয়েছে ডিজিটাল দুনিয়াতে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট ‘ফেসবুকে’ মোহিত নগর টাইপ করলে একাধিক ‘পেজ’ বা ‘গ্রুপ’ আসবে। জনপ্রিয় ‘আমাদের মোহিতনগর’, ‘মোহিতনগর রেলগেট।’ নবীন, প্রবীণ বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, চেহারায় বদলালেও, পরিকাঠামো দিক থেকে এখনও যোজন পিছিয়ে রয়েছে এই এলাকা। সুসজ্জিত বাড়ি, আবাসন তৈরি হলেও পরিষেবা নিয়ে জমে উঠেছে বিস্তর অভিযোগ।

১৯৬০-এ কেন্দ্রীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে চাকরি সূত্রে মোহিতনগরে এসেছিলেন কৃষি-বিজ্ঞানী নরেশচন্দ্র সরকার। তার পর জমি কিনে পরিবার নিয়ে পাকাপাকি বাস। নরেশবাবুর কথায়, “যখন প্রথম এসেছিলাম, তখন বিকেল হলেই শেয়ালের ডাক শোনা যেত। দুটি বাড়ির মধ্যে দূরত্ব ছিল অনেক। চার দিকে মাঠ। এখন চারপাশ পুরো বদলে গিয়েছে। কত দোকান, বড় বাড়ি, বাজার, কারখানা, অফিস। কিন্তু পরিষেবা নেই। সে দিক থেকে খুব একটা পার্থক্য হয়নি।”

পাইপলাইনে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা নেই মোহিতনগরে। নেই রাস্তার ধারে ট্যাপকল পরিষেবাও। পানীয় জলের জন্য বাসিন্দাদের ভরসা কুয়ো। পাম্পে জল তুলে পরিস্রুত করতে হয়। এই পদ্ধতি অনেকটাই ব্যয়বহুল বলে কেউবা বেসরকারি সংস্থা থেকে মাসিক জল সরবারহ ব্যবস্থা নিয়েছেন, আবার কারও ভরসা কুয়োর জল। এলাকার বেশির ভাগ বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ থাকলেও মোহিতনগরে সিলিন্ডারের ‘হোম ডেলিভারির’ ব্যবস্থা নেই। পথবাতি বলতে ল্যাম্প পোস্টে ঝোলানো পিএল ল্যাম্প। গলির প্রতিটি রাস্তাই ভাঙাচোরা। কোথাও পিচের প্রলেপ পড়েনি বলে অভিযোগ। নেই নিকাশি ব্যবস্থাও। এলাকার সর্বত্র নর্দমা থাকলেও, সিংহভাগই কাঁচা। জঞ্জাল অপসারণের কোনও ব্যবস্থাও নেই। বাড়ির আবর্জনা জমে কাঁচা নর্দমা কোথাও বুজে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

পুরসভার মর্যাদা ছাড়া এই পরিষেবাগুলি পাওয়া যে সহজ নয় বলেই দাবি বাসিন্দাদের। সে কারণেই বিভিন্ন সময়ে পুরসভার দাবি জোরালো হয়েছে মোহিতনগরে। সেই দাবির যুক্তি অস্বীকার করতে পারেনি প্রশাসনও। তার কারণ, একদিকে যেমন মোহিতনগরের বদলে যাওয়া, অন্যদিকে মোহিতনগরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শিক্ষা, সামাজ এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anirban roy mohitnagar amar shohor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE