Advertisement
০১ মে ২০২৪
উৎপাদন কমার আশঙ্কা উত্তরবঙ্গের দুই শিল্পে

বৃষ্টির দেখা নেই, সেচেও উদ্বেগ কাটছে না চায়ে

শুকিয়ে গিয়েছে মাটি। সবুজ বাগানে শুরু হয়েছে পোকার উপদ্রব। কৃত্রিম সেচ দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মরসুমের শুরুতে এমন সুখা পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত পড়েছে উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র চা চাষিদের।

শুকিয়েছে চা বাগান। ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।

শুকিয়েছে চা বাগান। ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

শুকিয়ে গিয়েছে মাটি। সবুজ বাগানে শুরু হয়েছে পোকার উপদ্রব। কৃত্রিম সেচ দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মরসুমের শুরুতে এমন সুখা পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত পড়েছে উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র চা চাষিদের। চা গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ এবং চা বণিক সভার কর্তাদের আশঙ্কা, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে এ বার ডুয়ার্স-সহ উত্তরবঙ্গে চা পাতার উৎপাদন কমবে। যে পাতা পাওয়া যাবে, তার গুণগত মানও ঠিক রাখা সম্ভব হবে না।

বিভিন্ন চা বণিকসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র ও বড় বাগান থেকে প্রায় ৩১৫ মিলিয়ন কেজি পাতা উৎপাদন হয়েছে। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলায় হয়েছে প্রায় ২৩৫ মিলিয়ন কেজি। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কয়েক পশলা বৃষ্টির ফলে মার্চ মাসে মরসুমের শুরুতে বছরের মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩০ মিলিয়ন কেজি উঠে আসে। এ বার জানুয়ারি মাস থেকেই বৃষ্টির দেখা নেই। মার্চ মাসে মরসুমের শুরুতে বাগানে কচি দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেখা মিলছে না, যতটুকু পাতা বেরিয়েছে, তারও সবুজ অংশ খেয়ে সাফ করছে ‘লুপার’, ‘রেড স্পাইডার’-এ মতো কীটপতঙ্গ। কৃত্রিম সেচ করে, ওষুধ ছড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে মালিক সংগঠনগুলি জানিয়েছে।

ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতি বছর এই সময়টায় কয়েক দফায় বৃষ্টি হয়ে থাকে। এ বার অধিকাংশ জায়গাতেই বৃষ্টি নেই। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মার্চ মাসে প্রতি বছর যে পাতা পেয়ে থাকি তার ৫০ শতাংশ মিলবে কি না সন্দেহ আছে।” গত দু’য়েক দিনে উত্তরবঙ্গে পাহাড় ও লাগোয়া এলাকায় বৃ্ষ্টি হলেও ডুয়ার্সে বিস্তীর্ণ এলাকা শুকনোই থেকে যাওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে।

গত এক দশকে উত্তরবঙ্গে সবুজ চা পাতা উৎপাদনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ছোট বাগান। ইতিমধ্যে উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কোচবিহার জেলায় প্রায় ৪০ হাজার বাগান গড়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি ছোট বাগান রয়েছে উত্তর দিনাজপুরে, প্রায় ১৫ হাজার। ২০০১ সালের আগে সেখানে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার বাগান ছিল। একই ভাবে ২০০১ সালে জলপাইগুড়ি জেলায় ছোট বাগানের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার। সেটা বেড়ে বর্তমানে হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর উত্তরবঙ্গের ছোট বাগান থেকে ১৪০ মিলিয়ন কেজি কাঁচা পাতা উৎপাদিত হয়েছে।

জলপাইগুড়ি ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “বৃষ্টির অভাবে গাছে তেমন পাতার দেখা মিলছে না। কৃত্রিম সেচ দিয়েও পরিস্থিতি সামল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।” উদ্বিগ্ন চা গবেষক মহলও। তাঁদের আশঙ্কা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে জলের অভাবে চা গাছ দুর্বল হয়ে পড়বে। পরের মাসগুলিতে পাতা উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গ শাখার মুখ্য উপদেষ্টা শ্যাম বরগিস বলেন, “আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সামান্য হলেও বৃষ্টি না হলে সমস্যা বাড়বে। পাতার উৎপাদন যেমন কমবে, একই ভাবে বাগানের গাছ পরিচর্যার খরচও বাড়তে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tea production rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE