ঢাকঢোল পিটিয়ে গরিব মৎস্যজীবীদের আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও প্রয়োজনীয় অর্থ না মেলায় তা থমকে রয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলায় এই প্রকল্প খাতে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা। অথচ জেলা মৎস্য দফতরে পৌঁছেছে ৪ কোটি টাকা। ঘর তৈরির জন্য ওই টাকা ২৩৮ জন মৎস্যজীবী পরিবারের হাতে তুলে দিয়েও দফতরের কর্তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না। যাঁরা টাকা পাননি, তাঁদের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।
জলপাইগুড়ি জেলা মৎস্য আধিকারিক পার্থসারথি দাস বলেন, “অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে আছি। কিছু মৎস্যজীবী টাকা পেয়েছেন ফলে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। বাকিরা প্রশ্ন তুলেছেন, ওঁরা পেলে তাঁরা পাবেন না কেন?” তিনি বলেন, “যে মৎস্যজীবীরা টাকা পাননি, তাঁদের সন্দেহ আমরা ইচ্ছাকৃত ভাবে টাকা আটকে রেখেছি। প্রকল্পের পুরো টাকা যে আসেনি, সেটা কেউ শুনতে চাইছে না।” জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গরিব মৎস্যজীবী পরিবারের জন্য রাজ্য সরকার ২০১২-২০১৩ আর্থিক বছরে ‘গীতাঞ্জলি’ নামে আবাসন প্রকল্প চালু করে সরকার। তাতে এক একজন মৎস্যজীবী প্রায় ১ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা করে পাবেন এমন আশ্বাস দেওয়া হয়। সেই মতো জলপাইগুড়ি জেলা মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে ৪৭৭ জন গরিব মৎস্যজীবীর নামের তালিকা তৈরি করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়। এজন্য প্রায় পৌনে ৮ কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দ হিসেবে আসে ৩ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা জেলা মৎস্য দফতরের কর্তারা জানান, গত জানুয়ারি মাসে টাকা হাতে পাওয়া মাত্র ২৩৮ জন উপভোক্তাকে ভাগ করে দেওয়া হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি মালবাজারের একটি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী চেক তুলে দেন।
ওই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। দফতরের কর্তা থেকে উপভোক্তা গরিব মৎস্যজীবী প্রত্যেকে মনে করেছিলেন, মালবাজারের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস মতো দ্রুত বাকি উপভোক্তারা ঘর তৈরির টাকা পেয়ে যাবেন। কিন্তু এর পরে মাস গড়ালেও প্রকল্পের বকেয়া টাকা বরাদ্দ নিয়ে কোনও সাড়া না পেয়ে দফতরের কর্তারা হতাশ হয়ে পড়েন। কয়েক দফায় চিঠি পাঠিয়েও কোন লাভ হয়নি। এখন তাঁরা বুঝতে পারছেন না, কী করবেন। এদিকে মৎস্যজীবী মহলেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সারা ভারত মৎস্যজীবী ও মৎস্য শ্রমিক ফেডারেশনের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক শিবেন পৈত বলেন, “নাম তালিকাভূক্ত করা হল। কিছু মানুষ টাকাও পেলেন বাকিদের কেন দেওয়া হবে না? দ্রুত ঘরের টাকা দেওয়ার দাবিতে আমরা প্রয়োজনে মৎস্য দফতর ঘেরাও করব।”
জেলা মৎস্য আধিকারিক জানান, একই প্রশ্ন তুলে প্রতিদিন মৎস্যজীবীরা দফতরে ভিড় করছেন, ওঁদের কেউ কোনও যুক্তি মানতে চাইছেন না। মৎস্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই তালিকায় প্রথমে যে ২৩৮ জনের নাম ছিল, তাঁরাই ওই টাকা পেয়ে গিয়েছেন। যাঁরা টাকা পাননি এমন মৎস্যজীবীদের দাবি, কারা আগে টাকা পাবেন, তার মানদণ্ড তালিকায় কার নাম আগে রয়েছেএটা হতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy