Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বেড়ায় ঘেরা কোর্ট ছিল ব্যাডমিন্টনের

১৯৮২ সাল। রায়গঞ্জ স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল ‘রাজ্য ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর। শহরে এমন টুর্নামেন্ট, আর তাতে শহরের কেউ থাকবে না? এই ভাবনা থেকেই উদ্যোগী হলেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। কয়েকজনের উদ্যোগে ব্যাডমিন্টনে উত্‌সাহী স্থানীয় কিছু ছেলেমেয়েকে ডেকে প্রতিযোগিতায় খেলানো হল। ফল যা হওয়ার তাই হল। রাজ্যস্তরে প্রতিযোগীদের সামনে কার্যত দাঁড়াতেই পারলেন না স্থানীয়রা। এই ঘটনাই নাড়া দিয়ে গিয়েছিল স্থানীয় উদ্যোক্তাদের।

রায়গঞ্জ ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ব্যাডমিন্টনের অনুশীলন চলছে।

রায়গঞ্জ ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ব্যাডমিন্টনের অনুশীলন চলছে।

অভ্রনীল রায়
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২২
Share: Save:

১৯৮২ সাল। রায়গঞ্জ স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল ‘রাজ্য ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর। শহরে এমন টুর্নামেন্ট, আর তাতে শহরের কেউ থাকবে না? এই ভাবনা থেকেই উদ্যোগী হলেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।

কয়েকজনের উদ্যোগে ব্যাডমিন্টনে উত্‌সাহী স্থানীয় কিছু ছেলেমেয়েকে ডেকে প্রতিযোগিতায় খেলানো হল। ফল যা হওয়ার তাই হল। রাজ্যস্তরে প্রতিযোগীদের সামনে কার্যত দাঁড়াতেই পারলেন না স্থানীয়রা। এই ঘটনাই নাড়া দিয়ে গিয়েছিল স্থানীয় উদ্যোক্তাদের। “উদ্যোক্তা জেলায় ব্যাডমিন্টনের এমন হাল হবে কেন? ছবিটা বদলাতেই হবে!’ এমনই জেদ চেপে গিয়েছিল ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে।

এর পরেই তোড়জোড় শুরু হয় জেলায় ব্যাডমিন্টনের অগ্রগতি কী ভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনার। সেবার বেঙ্গল ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ওই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল উত্তর দিনাজপুর ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশন-ও তখন নামেই। তাদেরও ছন্নছাড়া অবস্থা। রায়গঞ্জের ওই সংগঠনের কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন প্রশিক্ষণ ছাড়া ভাল কিছু করা সম্ভব নয়। প্রশিক্ষণ না পেলে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগীদের সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না। ব্যাডমিন্টনে নজরকাড়া কিছু করা সম্ভব হবে না।

এই চিন্তাভাবনা থেকেই জেলায় ব্যাডমিন্টনের প্রসারে শুরু হয় উপযুক্ত মাঠ বা কোর্টের ব্যবস্থা করার। শেষ পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন নিয়ে উত্‌সাহী দিলীপ বসু, কার্তিক সেন, রঞ্জন মজুমদারের মতো ব্যক্তিদের উদ্যোগে কোর্টের ব্যবস্থা করা হল। শিক্ষাবিদ কার্তিকবাবু সে সময় রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক ছিলেন। রঞ্জনবাবু চিকিত্‌সক। স্থানীয় রবীন্দ্রভবন সংলগ্ন মাঠে ব্যাডমিন্টনের উপযোগী একটি ইন্ডোর ব্যবস্থা চালু করা হয়। তবে সেই ব্যবস্থা পাকা কোনও ইন্ডোর স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো গড়ে নয়। বরং বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি হয় খেলার ব্যবস্থা। কোচ হিসাবে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেন দিলীপবাবু। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যাডমিন্টনে উত্‌সাহী উঠতি প্রতিভা জেলার বাসিন্দাদের মধ্য থেকে ২০ জনকে বেছে নেওয়া হল। সেই শুরু হল ঘুড়ে দাঁড়ানোর লড়াই। জেলায় ব্যাডমিন্টনকে জনপ্রিয় করা এবং প্রতিভা তুলে আনার চেষ্টা।

প্রশিক্ষক দিলীপ বসু।—নিজস্ব চিত্র।

সমস্যা ছিল অনেক। খেলোয়াড় জোগাড় করা ও তাদের উত্‌সাহ দেওয়া একটা বড় ব্যাপার। জেলার কোনও ক্লাবে তখনও ব্যাডমিন্টনের প্রসার হয়নি। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জায়গায় খেলা হয়। খোঁজখবর করে তাদের ডাকা হল। কংক্রিটের কোর্ট ছিল না তখনও। মাটির কোর্টেই অনুশীলন চলত। বৃষ্টি হলেই কোর্ট জল কাদায় ভরে যেত। তখন অনুশীলন চালানোই মুশকিল হত। কাঠের গুঁড়ো বা তুষ এনে কোর্টে ছড়িয়ে দেওয়া হত। তাতে কোর্টের হাল কিছুটা ফিরত। অনুশীলন চলত এ ভাবেই। ভাল ‘র্যাকেট’, ‘ফেদার’ জোগাড় করতেও সমস্যা হত। তার মধ্যেই এমন করেই চলল চার বছরের লড়াই।

লাগাতার অনুশীলন, চেষ্টার ফলও মিলল। ১৯৮৫ সালে দুর্গাপুরে রাজ্য ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দিয়ে জেলার খেলোয়াড়রা সেমিফাইনালে উঠলেন। তা নিয়েই তখন হইচই পড়ে গেল শহরে। হবেই তো! একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে এই জায়গায় পৌঁছনোর আনন্দই আলাদা। লাগাতার কয়েক বছর চেষ্টা যে ব্যর্থ হয়নি তা বুঝতে পারলেন উত্তর দিনাজপুর ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। রাজ্য ব্যাডমিন্টনের মানচিত্রেও জেলার নাম উঠে এল।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE