Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বকেয়া ইপিএফ না দিলে আইনি ব্যবস্থা

একেই আর্থিক সংকটে জেরবার শিলিগুড়ি পুরসভা। বিদ্যুৎ বিল থেকে জল সরবরাহের পাম্পের বিল, ভাড়া গাড়ির বিল বকেয়া পড়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের দেড় কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়ে রয়েছে কয়েক বছর ধরে। ১৮০০ অস্থায়ী কর্মীর বেতন থেকে কাটা ৭৬ লক্ষ টাকা ইপিএফ তহবিলে জমা পড়ার কথা। কিন্তু তা কর্তৃপক্ষ জমা দেননি। এই অবস্থায়, দ্রুত পুর কর্মীদের বকেয়া ইপিএফ’এর টাকা না মেটানো হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন ইপিএফ কর্তৃপক্ষ।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

একেই আর্থিক সংকটে জেরবার শিলিগুড়ি পুরসভা। বিদ্যুৎ বিল থেকে জল সরবরাহের পাম্পের বিল, ভাড়া গাড়ির বিল বকেয়া পড়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের দেড় কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়ে রয়েছে কয়েক বছর ধরে। ১৮০০ অস্থায়ী কর্মীর বেতন থেকে কাটা ৭৬ লক্ষ টাকা ইপিএফ তহবিলে জমা পড়ার কথা। কিন্তু তা কর্তৃপক্ষ জমা দেননি। এই অবস্থায়, দ্রুত পুর কর্মীদের বকেয়া ইপিএফ’এর টাকা না মেটানো হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন ইপিএফ কর্তৃপক্ষ।

নিয়ম মতো কর্মচারীরা যে টাকা দেবেন কর্তৃপক্ষকেও সমপরিমাণ টাকা ওই তহবিলে জমা দিতে হবে। সেই বাবদ আরও ৭৬ লক্ষ টাকা শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ দেবেন কর্মীদের ইপিএফ তহবিলে। তা ছাড়া কয়েক বছর ধরে ওই টাকা বকেয়া থাকায় তার সুদও রয়েছে। সব মিলিয়ে সুদে-আসলে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিতে হবে পুরসভাকে।

পুরসভা সূত্রের খবর, প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতর থেকে সে ব্যাপারে সম্প্রতি পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই টাকা না-মেটানোয় কর্মীদের ইপিএফ অ্যাকাউন্ট কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি। তাতে কেউ ওই কর্মীদের কেউ ওই অ্যাকাউন্টের টাকা থেকে ঋণ বা অন্যান্য সুবিধা পাবেন না। ২০১১-২০১২ সালের ওই ইপিএফের টাকা বকেয়া থাকায় উদ্বিগ্ন কর্মীরাও। দ্রুত পুর কর্মীদের বকেয়া ইপিএফ’এর টাকা না মেটানো হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন ইপিএফ কর্তৃপক্ষ।

যে সময়ের ওই ইপিএফের টাকা বকেয়া রয়েছে সে সময় পুরসভায় ক্ষমতাসীন ছিল কংগ্রেস-তৃণমূল। বিরোধী বাম কর্মী সংগঠনের অভিযোগ, কর্মীদের স্বার্থের এই ব্যাপারে উদাসীনতার দায় বর্তায় তৎকালীন পুরবোর্ডের ওপরেও। তৎকালীন পুরবোর্ডের মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “কর্মীদের স্বার্থে ইপিএফ যাতে বকেয়া না থাকে সেটা আমরা চাই। আধিকারিকদের সে ভাবেই বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই টাকা যে জমা পড়েনি তারা সময় মতো আমাদের কিছু জানানি। আমি সব সময়ি বলেছি কর্মীদের বেতন পিএফ, ইপিএফ, পাওনা টাকা যাতে কোনও ভাবেই বকেয়া না থাকে। আধিকারিকদের একাংশের গাফিলতিতেই এটা ঘটেছে।”

জোট বেঁধে নির্বাচনে জিতে ২০০৯ সালের অক্টোবরে তারা ক্ষমতায় আসে। মেয়র পদ নিয়ে গোলমালের জেরে কংগ্রেস একভাবে ক্ষমতায় বসে। পরে তৃণমূলের সঙ্গে তারা যৌথ পুরবোর্ড গড়ে। কিন্তু কর্মীদের বকেয়া ইপিএফের টাকা মেটাতে সে সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কর্মী ইউনিয়নগুলিও বারবার কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জানালেও সমস্যা না মেটায় তারাও ক্ষুব্ধ। শিলিগুড়িতে দায়িত্বে থাকা রিজিওনাল পিএফ কমিশনার মংথুং নুল্লি বলেন, “কর্মীদের বকেয়া ইপিএফ কয়েক বছর ধরে বকেয়া পড়ে থাকায় শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দ্রুত তা মেটাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় দফতরের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া জানান, পুরনো ইপিএফের টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

পুরসভা এবং পিএফ দফতরের বিভিন্ন সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের ইপিএফের ওই টাকা বকেয়া রয়েছে। ওই বছর থেকেই কর্মীদের ইপিএফ চালু করা হয়। কিন্তু শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ কর্মীদের ওই টাকা জমা দিতে উদাসীন ছিল। পরে ১০১২ থেকে অবশ্য তারা নিয়ম মেনে ইপিএফ জমা করছেন। কিন্তু শুরুতে এক বছর ওই টাকা জমা না করায় ইপিএফের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কর্মীরা। পুরকর্তৃপক্ষ জানান, বিষয়টি নিয়ে ইপিএফ দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রথম বছরের ইপিএফের ওই বিষয়টি ছাড় দেওয়ার আবেদন করা হলেও তা খারিজ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পরে সুদের বিষয়ে ছাড় দেওয়ার এবং কয়েক দফায় ওই টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ইপিএফ দফতর থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুদ সহ পুরো টাকাটাই পুর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

বাম সমর্থিত শিলিগুড়ি মিউনিসিপ্যাল এমপ্লয়িজ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জীবণ নাথের অভিযোগ, তৃণমূল এবং কংগ্রেসের পুরবোর্ড যে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ তা স্পষ্ট। পুর কতৃ৪পক্ষকে দ্রুত ওই টাকা মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।” শ্রমিকদের এই সমস্যার বিষয়টি মেটানোর পক্ষে অবশ্য কংগ্রেস বা তৃণমূলের কর্মী সংগঠনও। তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত শিলিগুড়ি পুর কর্মচারী সমিতির সম্পাদক মিলি সিংহ জানান, তারাও ওই বকেয়া মেটানোর জন্য পুর কর্তৃপক্ষকে বারবার বলছেন। একই সুরে কংগ্রেসের শিলিগুড়ি পুর কর্মচারী কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন দাস রায় জানান, শুরু থেকেই কর্মীদের োই ইপিএফ জমা করতে তারা বলে আসছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

epf siliguri municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE