বন্যা পরিস্থিতি রুখতে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি নদীকে ঘিরে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকার ‘মাস্টার প্ল্যানে’ সরাসরি কেন্দ্রীয় বরাদ্দ মেলার আশ্বাস মিলেছে। এমনটাই দাবি করেছে রাজ্য সেচ দফতর। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় জল সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী উমা ভারতীর সঙ্গে রাজ্যের সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়েক প্রস্থ আলোচনার পরে এই বরাদ্দের ব্যাপারে বরফ গলেছে বলে সূত্রের খবর। অন্তত ৩ বছর আগে উত্তরবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণে গৃহিত প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের জন্য ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল বলে সেচ দফতর জানিয়েছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী ফরাক্কা ব্যারেজ পরিদর্শন আসেন। সে দিনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেতের কথা রাজ্যের সেচমন্ত্রীকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। পরদিন,অর্থাৎ বুধবার শিলিগুড়িতেও উত্তর-পূর্ব ভারতের নদীগুলির জন্য পৃথক ভাবে সরাসরি মন্ত্রক থেকে নজরদারির সিদ্ধান্তের কথা জানান কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী। এর থেকেই সেচ দফতরের কর্তাদের একাংশের ধারণা, ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের থেকে বরাদ্দ আনার জটিলতা অবশেষে কাটতে চলেছে।
রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘদিন আগে উত্তরবঙ্গের নদীগুলির জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল। আশ্বাস মিললেও, এতদিন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। দফতরের আধিকারিকরা বারবার যোগাযোগ করলেও কোনও ফল মেলেনি। এরপরেই কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতীকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পগুলিতে সরাসরি জলসম্পদ মন্ত্রক থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে।”
কী রয়েছে প্রকল্পগুলিতে?
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্যাপ্রবণ এবং আয়তনে বড় এই হিসেবে উত্তরবঙ্গের ৫টি নদীকে বেছে নিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়। তিস্তা, জলঢাকা, রায়ডাক, সঙ্কোশ এবং কালজানি নদীতে বড়-মাঝারি মিলিয়ে অন্তত ৫১টি প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে সঙ্কোশ নদী লাগোয়া ফলিমারি, কালজানি লাগোয়া বক্সিরকুঠি, তিস্তা লাগোয়া মেখলিগঞ্জ, এবং রায়ডাক নদীর বন্যা থেকে বাঁচাতে কুমারগ্রামে নদী বাঁধ তৈরির প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। সব মিলিয়ে ১৩৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ফি বছর উত্তরবঙ্গের কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমি ও বসতবাড়ি রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে দফতরের দাবি।
নদীগুলিতে নতুন বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পগুলি তিন বছর আগে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল। বোর্ডের থেকে সমীক্ষার পর কারিগরি ছাড়পত্রও (টেকনিকাল ভেটিং) দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলিতে যে কোনও ক্রুটি নেই এবং প্রকল্পগুলি যে আদৌ অবাস্তব নয়, বোর্ডের ছাড়পত্র মেলাতেই তা প্রমাণ হয়েছে বলে রাজ্যের সেচ দফতরের দাবি। ছাড়পত্র মিললেও, গত তিন বছরে এই প্রকল্পগুলির জন্য ছিটেফোঁটা অর্থও বরাদ্দ করা হয়নি বলে অভিযোগ ছিল রাজ্যের। অসমের মাজুলি ও বরাক এলাকার নানা নদীর জন্য গত তিন বছরে কয়েকটি পর্যায়ে বরাদ্দ হলেও, পশ্চিমবঙ্গ উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বোর্ডের জলপাইগুড়ি বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার রঞ্জিত শইকিয়া এ দিন টেলিফোনে বলেন, “কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রীর বৈঠকে ছিলাম। বরাদ্দ নিয়ে বিস্তারিত এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। পরে জানাতে পারব। এখন বাইরে রয়েছি।”
প্রকল্পে বরাদ্দ নিয়ে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের সঙ্গে রাজ্যের টানাপড়েন অবশ্য নতুন বিষয় নয়। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নদীগুলির বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নাব্যতা ফেরানো সহ নানা পরিকাঠামোগত কাজের জন্য আশির দশকে কেন্দ্রীয় সরকার ব্রহ্মপুত্র বোর্ড তৈরি করে। বোর্ডের সদর দফতর হয় গুয়াহাটিতে। বোর্ডের প্রয়োজনীয় অর্থ মেলেনা এই অভিযোগ বাম আমলেও ছিল। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান পদ চেয়ে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের কাছে দরবারও করেছিল রাজ্য। দাবি- আদায় করতে সম্প্রতি সেচমন্ত্রীর নেতৃত্বে উত্তরবঙ্গের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি একটি দল দিল্লি পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সরাসরি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক থেকে বরাদ্দ এলে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের সঙ্গে এই টানাপড়েন আর থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy