Advertisement
০৬ মে ২০২৪

মোদীর প্রতিশ্রুতি ঘিরে আশা চা-শিল্প মহলে

চায়ের জেলায় পৌঁছে চা-শিল্পকে ঘিরে নানা স্বপ্ন দেখিয়ে পাহাড়-সমতলের মন জয়ের চেষ্টা করলেন এক সময়ের ‘চা-ওয়ালা!’ তিনি হলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী।

খাপরাইলে নরেন্দ্র মোদীর সভায় তিন কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীরা। (বাঁ দিক থেকে) সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, সত্যলাল সরকার ও বীরেন্দ্র বরা ওরাঁও। (ডান দিকে) সভায় ভিড়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

খাপরাইলে নরেন্দ্র মোদীর সভায় তিন কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীরা। (বাঁ দিক থেকে) সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, সত্যলাল সরকার ও বীরেন্দ্র বরা ওরাঁও। (ডান দিকে) সভায় ভিড়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০২:০২
Share: Save:

চায়ের জেলায় পৌঁছে চা-শিল্পকে ঘিরে নানা স্বপ্ন দেখিয়ে পাহাড়-সমতলের মন জয়ের চেষ্টা করলেন এক সময়ের ‘চা-ওয়ালা!’ তিনি হলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার খাপরাইলে দলীয় জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, তাঁরা কেন্দ্রে ক্ষমতায় গেলে পাহাড় ও সমতলের চা বলয়ে চায়ের প্যাকেজিং কারখানা গড়ার উপরে জোর দেবেন। তিনি বলেন, “দার্জিলিঙের চা দুনিয়ায় বিখ্যাত। সে চায়ের নানা প্যাকেজিং হতে পারে। প্যাকেজিং কারখানা গড়তে তেমন কিছু লাগে না। এটা সহজেই করা যেতে পারে। দুঃখের বিষয়, এখানে সেটার উপরে জোর দেওয়া হয়নি। আমরা চায়ের প্যাকেজিং কারখানার উপরে জোর দেব। একানে যাতে প্রচুর প্যাকেজিং কারখানা হয় সেই চেষ্টা করব।”

শুধু তা-ই নয়, চা ছাড়া যে তাঁর এক পা চলে না সে কথাও বলেছেন তিনি। তাঁর তাঁর কথায়, “দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে চা বলয়। আপনারাও চা-ওয়ালা। আমিও একজন চা-ওয়ালা। আমাদের বন্ধ অটুট হবে না তো কী হবে!” এর পরে তাঁর সংযোজন, “চা যদি না থাকত তা হলে আমি চা-ওয়ালা হতাম কী ভাবে? আর চা-ওয়ালা না হলে এই জায়গায় পৌঁছতাম কেমন করে?”

চায়ের প্যাকেজিং কারখানার হাল কী তা নিয়ে বিশদে তথ্য-পরিসংখ্যান জেনেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন বলে চা শিল্প মহলের অনেকেরই ধারণা। চা বাগান মালিকদের সংগঠন সূত্রের খবর, এখন মূলত সরকারি সাহায্য ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় অন্তত একশোটি প্যাকেজিং শিল্প গড়ে উঠেছে। সেখানে প্যাকেটজাত কয়েকটি ব্র্যান্ডের চা রাজ্যের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি পরিকল্পনা না থাকায় প্যাকেজিং শিল্পের বিকাশ ঘটেনি বলে তাদের অভিযোগ। শিলিগুড়ির একটি চা প্যাকেজিং শিল্প সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শ্রাবণ চৌধুরী বলেন, “টি পার্ক তৈরির পরে আমরা আশা করেছিলাম, প্যাকেজিং শিল্প বিকাশের জন্য সরকার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসবে। সেটা হয়নি। জানি না আদৌ হবে কি না?”

জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, যথেষ্ট প্যাকেজিং ব্যবস্থা না থাকায় উত্তরবঙ্গে মোট উৎপাদিত চায়ের প্রায় ৮০ শতাংশ গুজরাত, হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে। তাই সংস্থার কর্তারা মোদীর দাবিকে নিছক রাজনৈতিক তরজা হিসেবে দেখতে নারাজ। সংস্থার সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “উত্তরবঙ্গে ছোট চা বাগানের সংখ্যা ৫০ হাজার। শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলায় রয়েছে ২০ হাজার বাগান। উত্তরবঙ্গের ছোট বাগানের পাতা থেকে বছরে ১৩ কোটি কেজি চা উপাদন হচ্ছে। এখানে যে খুব সহজে প্যাকেজিং ইউনিট গড়ে উঠতে পারে। সম্ভাবনা থাকলে কী হবে! কেউ তো দেখছেন না। তাই আমাদের থলে বোঝাই করে তৈরি চা গুজরাত না হলে মহারাষ্ট্রে পাঠাতে হচ্ছে।”

চা শিল্পে যুক্ত উদ্যোগীদের অনেকেই প্যাকেজিং শিল্প বিকাশের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা, বাজারের সুযোগকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করেন। তাঁদের দাবি, “ওই কারণে গুজরাত, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র চা প্যাকেজিং শিল্পে এগিয়েছে।” সেই সঙ্গে তাঁরা জানান, পূর্বাঞ্চলের বাজারের জন্য শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় ওই শিল্প বিকাশ সহজে সম্ভব। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনোজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “প্যাকেজিং শিল্প বিকাশের জন্য অনেকগুলি শর্ত রয়েছে। কিন্তু পূর্বাঞ্চলের বাজারের জন্য শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় ওই শিল্প গড়ে তোলা যেতে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

khaprail modi election campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE