Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মেয়ের প্রথম পুজোতে সঙ্গে নেই কৃষ্ণ

দশ মাসের মেয়ের প্রথম পুজো। তাকে কোলে করেই পুজো দেখার কথা ছিল কৃষ্ণ মোদকের। তা আর হল না চণ্ডীশালের ওই বাসিন্দার। কোচবিহারের টাপুরহাটে গরু পাচারের মদতের অভিযোগে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তৃণমূলকর্মী কৃষ্ণবাবু। মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে মৃত্যু হল বছর পঁচিশের ওই যুবকের।

কৃষ্ণ মোদক।

কৃষ্ণ মোদক।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৯
Share: Save:

দশ মাসের মেয়ের প্রথম পুজো। তাকে কোলে করেই পুজো দেখার কথা ছিল কৃষ্ণ মোদকের। তা আর হল না চণ্ডীশালের ওই বাসিন্দার।

কোচবিহারের টাপুরহাটে গরু পাচারের মদতের অভিযোগে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তৃণমূলকর্মী কৃষ্ণবাবু। মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে মৃত্যু হল বছর পঁচিশের ওই যুবকের।

টাপুরহাটে একটি সারের দোকানে কাজ করতেন কৃষ্ণবাবু। এক সপ্তাহ আগে টাপুরহাটে দোকানের সামনেই আচমকা গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সেই সময়ে তিনি দোকান খুলতে গিয়েছিলেন বলে বাড়ির লোকজনের দাবি। তখনই গুলি চলে। একটি গুলি কৃষ্ণবাবুর মুখ ভেদ করে চলে যায়। প্রথমে কোচবিহারে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। পরে শিলিগুড়ির খালপাড়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। দেখতে যান তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। নার্সিংহোম সূত্রে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পরেও তাঁর প্রাণ বাঁচাতে নানা চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে কৃষ্ণকে বাঁচাতে পারেনননি চিকিত্‌সকেরা।

এ দিন মৃত্যুর খবর পৌঁছতে চণ্ডীশালে শোকের ছায়া নামে। তাঁর স্ত্রী প্রতিমাদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “সেদিন যে টাপুরহাটে গণ্ডগোল হচ্ছে ও জানত না। প্রতিদিনের মতো দোকান খুলতে বেরিয়েছিল। আর ফিরল না। কয়েকদিন পরেই পুজো। মেয়েটা এবার প্রথম পুজো দেখবে। নতুন জামা কিনে দেবে বলেছিল। আমি কী করে বেঁচে থাকব?” কৃষ্ণবাবুর মেয়ে দশ মাসের অন্বেষা যেন এ সব কিছুই বুঝছে না। তার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়েই কান্না থামছিল না প্রতিমাদেবীর।

খুদে অন্বেষা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দে।

চণ্ডীশালের কৃষক অনিলবাবুর পাঁচ ছেলের মধ্যে কৃষ্ণবাবু ছিলেন মেজ। গরিব পরিবারের ছেলে হয়েও পড়াশোনায় তিনি ছিলেন মেধাবী। মাধ্যমিকে স্টার নিয়ে পাশ করেছিলেন তিনি। কলেজে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু শেষ করতে পারেননি। সংসারের হাল ধরতে বছর খানেক আগে টাপুরহাটের পুলিশ ক্যাম্প লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা রামকুমার মাহেশ্বরীর কৃষিজ ওষুধ ও সার বিক্রির দোকানে থেকে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। একান্নবর্তী পরিবারে তাঁর অন্য ভাইয়েরা কৃষিকাজ করতেন। সব মিলিয়ে যা আয় হত তা দিয়েই চলত সংসার।

কী হয়েছিল ওই দিন? ওই গ্রাম লাগোয়া পুরান টাপুরহাটে পুলিশের বিরুদ্ধে গরু পাচারকারীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে টাপুরহাট ক্যাম্পের ছয় পুলিশকর্মীকে রাতভর ঘেরাও করে রাখে ক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশের জিপ ভাঙচুর করা হয়। একটি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। কোতোয়ালি থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনে ওই পুলিশ কর্মীদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। অভিযোগ, এর পরে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালায়। পুলিশ কর্মীদের মারধর করে একটি জিপ মানসাই নদীতে ফেলে দেয় জনতা। আরেকটি পুলিশ ভ্যান ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালায়। সে সময়ই পুলিশ ক্যাম্পের পাশে দোকানের সামনে একটি জায়গায় বসেছিলেন কৃষ্ণ। একটি গুলি তাঁর চোয়াল ভেদ করে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কৃষ্ণবাবু।

কৃষ্ণবাবুর মা জ্যোত্‌স্নাদেবী বারেবারে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, “আমার ছেলেটা তো কোনও অপরাধ করেনি। তা হলে মরতে হল কেন?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE