শিলিগুড়ি পুরসভায় মেয়র নির্বাচনের জন্য কোনও দলই প্রার্থী দিল না। সোমবার মেয়র নির্বাচনের জন্য দিন ঠিক করে দিয়েছিল পুর দফতর। কিন্তু, কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বামেরা কারও নামই পেশ করেননি। অবশ্য বামেরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল তারা মেয়র পদে কাউকে দাঁড় করাবে না। কংগ্রেসও কোনও প্রার্থী দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। তৃণমূল শিবির অবশ্য দুভাগ হয়ে গিয়েছিল। একপক্ষ প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকায় ভোটে যেতে রাজি হননি। কিন্তু, তৃণমূল সূত্রের খবর, অন্যপক্ষ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে মেয়র পদে প্রার্থী করাতে চেয়েছিলেন। কংগ্রেস ও বাম শিবিরের দাবি, তৃণমূলের ওই অংশটি তাদের দলে ভাঙন ধরানোর চেষ্টাও করে সফল হয়নি বলেই মেয়র পদে প্রার্থী দেয়নি। তাই আগামী দিনে শিলিগুড়ি পুরসভার ভার প্রশাসকের হাতেই যাওয়া একরকম নিশ্চিত।
বাম ও বিজেপি শিবিরের সন্দেহ, নতুন করে পুরসভা ভোটের পথে না হেঁটে ঘুরপথে পুরবোর্ডে কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল। তাদের যুক্তি, ৬ মাস পরেই পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরোবে। সে কথা মাথায় রেখে নতুন করে পুরভোটের দাবিও জানিয়েছে বাম ও বিজেপি শিবির। এমনকী, কংগ্রেসও চাইছেন, পুরভোট এগিয়ে আনা হোক। তৃণমূল অবশ্য মেয়াদ ফুরানোর আগে ভোট করানোর পক্ষপাতি নয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌতম দেব আগেই দাবি করেছেন, “অনেক কাউন্সিলর অন্য দল থেকে তৃণমূলে আসতে চাইলেও এ ভাবে বোর্ড গড়তে চাইনি আমরা। নতুন করে মানুষের রায় নিতে চাই আমরা।”
দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের বিরুদ্ধে দল ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। একটি আসনে না জিতেও কংগ্রেস এবং সিপিএমের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দলে সামিল করে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল। সে জন্যই পুরবোর্ড দখলের জন্য তৃণমূল অন্য দলের কাউন্সিলরদের টানতে মরিয়া হয় বলে বাম ও কংগ্রেস শিবিরের অভিযোগ। একক ভাবে বোর্ড গড়তে তৃণমূলের আরও ৯ জন কাউন্সিলর দরকার।
৪৮ আসনের শিলিগুড়ি পুরসভায় কংগ্রেস এবং তৃণমূলের কাউন্সিলর রয়েছে ১৪ এবং ১৫ জন। বামেদের ১৮। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় কেউই মেয়র পদের যেতে রাজি নয়। নির্ধারিত ১৪ জুনের মধ্যে মেয়র নির্বাচনের জন্য মনোনয়নও কেউ জমা করেননি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে মেয়র নির্বাচনের বৈঠক। জোটের পুরবোর্ড থেকে তৃণমূল বেরিয়ে যাওয়ার পরে সংখ্যালঘু হয়ে পুরবোর্ড চালাতে হোঁচট খেতে হয়েছে কংগ্রেসকে। রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল কাউন্সিলরদের তরফে অসহযোগিতার অভিযোগে মেয়র ইস্তফা দেন। এই পরিস্থিতিকে পুরবোর্ডের ব্যর্থতা তুলে ধরতে সরব বিরোধী বাম এবং বিজেপি-র নেতৃত্ব।
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “ঘুরপথে পুরবোর্ডের কতৃত্ব চাইছে শাসক দল। দ্রুত নির্বাচন করা হোক।” বিজেপি’র তরফে এ দিন দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে পুর কমিশনারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু এ দিন বলেন, “শহরের নাগরিক পরিষেবা তলানিতে। ভোট না করে প্রশাসক বসিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা হাতে রাখতে চাইছে তৃণমূল।”
জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, তাদের অনেক কাউন্সিলরকে নানা ভাবে প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। তবে তাঁরা রাজনৈতিক সচেতন। কেউ দল ছাড়েননি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “সংখ্যালঘু হয়েও বাসিন্দাদের কথা ভেবে আমরা পরিষেবা দিতে সচেষ্ট হয়েছিলাম। তৃণমূল পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া শুরু করল। রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় চালানো সম্ভব হল না। এই পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরতে চলেছে। নির্বাচন করে নতুন পুরবোর্ড গড়া দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy