প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেন মহিলারা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের রামঘাট বৈদ্যুতিক চুল্লির প্রকল্পকে ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দিল। বুধবার দুপুরে শিলিগুড়ি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শতাধিক মহিলা রামঘাটে ঢুকে বিক্ষোভ দেখিয়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁদের একাংশ কর্তব্যরত পুলিশ ও নির্মাণকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে আটটি ইটের পিলারও ভেঙে দেন বলে অভিযোগ। ক্রেন জাতীয় বড় মেশিন দিয়ে মাটি খোঁড়ার কাজ আটকে দেন। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ঘেরাও করা রাখা হয় রামঘাটের ভিতরে থাকা পুলিশ ক্যাম্পটিকেও। পুলিশকর্মীরা মহিলাদের বুঝিয়ে রামঘাটের মূল গেটের বাইরে বার করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। শেষে এলাকার নাগরিক মঞ্চেক সদস্যদের অনুরোধে বেরিয়ে যান ওই মহিলারা।
এর পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশ দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ তুলে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। উত্তেজিত মহিলারা জানিয়ে দেন, এই প্রকল্পের কাজ করতে দেওয়া হবে না। জবরদস্তি কাজ করাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলার কোনও সমস্যা হলে তার জন্য মন্ত্রীই দায়ী থাকবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রামঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে দূষণের কথা বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। সেই সময় এলাকার কয়েকজনকে আলোচনার জন্য ডেকে নেন মন্ত্রী। কথা চলাকালীন মন্ত্রী মহানন্দ মণ্ডল নামে এক ফরওয়ার্ড ব্লক সমর্থককে চড়, লাথি মারেন বলে অভিযোগ। পুলিশে অভিযোগও দায়ের করা হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে পাল্টা সরকারি কাজে বাধা, মন্ত্রীকে হেনস্থার অভিযোগ করা হয়। মহানন্দবাবু ছাড়াও এলাকার কংগ্রেস নেতা রাজেশ যাদবকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এর পরেই তৃণমূল বাদে বাম-ডান সব দল একজোট হয়ে নাগরিক মঞ্চ গড়ে আন্দোলনে নামেন। নির্মাণ কাজ শুরু হতেই একাধিকবার রামঘাটে বিক্ষোভ দেখান মঞ্চের সদস্যরা।
এলাকার বাসিন্দা গৌরী মিত্র, কোহিনূর বেগম, বিজলি মণ্ডল, আরতি মিত্র, মমতা বেগমের মত মহিলাদের দাবি, “বৈদ্যুতিক চুল্লি তো দূরের কথা, আমরা এই এলাকায় শ্মশানই চাই না। শ্মশান নদীর পারে নিয়ে যাওয়া হোক।” তাঁদের অভিযোগ, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী এলাকার মানুষের সঙ্গে আলোচনা না করেই এক তরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মানুষকে মারধর করে, গ্রেফতার করে এখন পুলিশ দিয়ে কাজ করাতে চাইছেন। যে কোনও মূল্যে কাজ রোখা হবে। এখানে কোনও কাজ করতে দেওয়া হবে না।”
বুধবারের ঘটনায় এই প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের মত। গৌতমবাবু বলেন, “এখন কিছুই বলব না। যা করণীয় করা হবে।” তিনি জানান, ১০ লক্ষ মানুষের শহরে একটি মাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লিতে সমস্যা বেড়েছে। বাসিন্দাদের স্বার্থেই ওই কাজ করা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, “যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদত দিচ্ছেন। তাঁদের প্রতি করুণা হয়।” মন্ত্রীর দাবি, শিলান্যাস অনুষ্ঠানে সরকারি কাজে বাধা দিয়ে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁরা কাজে বাধা দেবেন না বলে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে এখন আবার আন্দোলন করছেন।
গত শুক্রবারও জলপাইমোড়ে অবস্থান বিক্ষোভ করেন নাগরিক মঞ্চের সদস্যেরা। সেখানে সিপিএম ও কংগ্রেসের নেতারাও যান। তার মধ্যে রামঘাটে শবদাহ করতে আসা দু’টি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এর পরে শ্মশানের ভিতরে বিশ্রামকক্ষে পুলিশ ক্যাম্প বসিয়ে কাজ শুরু করা হয়। সেখানে চার জন রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর চার জন পুলিশকর্মী ছিলেন। গত মঙ্গলবার থেকে মেশিন দিয়ে মাটি খোঁড়া, পাঁচটি গাছ কাটা, বিশ্রামের জন্য নির্ধারিত এলাকাগুলি ভেঙে পুরোদমে কাজ শুরু হয়।
তবে বুধবার সকালে শতাধিক মহিলা মিছিল করে রামঘাটের ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ শুরু করলে ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীদের কাজ থেকে সরে যেতে বলা হয়। পুলিশকর্মী খুব কম থাকায় তাঁরাও কিছুই করতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy