এই চাদর দেখিয়েই ট্রেন থামান গোপাল সিংহ। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
সকালের শীতে কাজে বেরোনোর সময়ে লাল চাদরটা গায়ে জড়িয়েছিলেন ইংরেজবাজারের কৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা গোপাল সিংহ। সেই চাদরটি তুলে ধরেই বড়সর দুর্ঘটনা রুখলেন তিনি।
রবিবার সকালে কাজে যাওয়ার পথে পেশায় রাজমিস্ত্রি গোপালবাবু রেল লাইনের ধারে আটকে পড়েন। আপ লাইন দিয়ে হাওড়া-পটনাগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস যাচ্ছিল। তখনই লাইনে একটি ফাটল চোখে পড়ে তাঁর। ইন্টারসিটি চলে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে ওই লাইনেই একটি মালগাড়ি আসতে দেখে বিপদের আশঙ্কা করে গোপালবাবু চাদরটা তুলে লাইনের ধার ধরে ইঞ্জিনের দিকে দৌড়তে শুরু করেন। তা দেখে এলাকার বাসিন্দাদের কয়েক জনও ওই লাইন ধরে ছুটতে শুরু করেন। তা দেখে মালগাড়ির ইঞ্জিনচালক ট্রেন থামিয়ে দেন।
লাইনের ওই ফাটলের উপর দিয়ে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস নির্বিঘ্নে চলে গেলেও, দুর্ঘটনার হতে পারত বলেই রেল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা। গোপালবাবুর তৎপরতায় দুর্ঘটনা থেকে মালগাড়ি রক্ষা পেয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। রেল কর্তৃপক্ষও জানান, গোপালবাবুকে পুরস্কৃত করার ভাবনাচিন্তা চলছে।
ঘটনার পরে ঘণ্টাখানেক লাইন মেরামতি চলে। তার পরে মালগাড়িটি যায়। ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়মিত লাইন পরীক্ষা করা হয় না বলে ফাটল তৈরি হয়েছে। যেখানে ফাটল তৈরি হয়েছে, তার উল্টো দিকেও লাইনের কিছুটা অংশ বসে গিয়েছে বলে তাঁদের দাবি। মালদহের ডিআরএম রাজেশ আরগাল বলেন, “লাইনের কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছিল। ঘটনাটি জানার পরেই দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু হয়। পরে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।”
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসটি যাওয়ার সময়েই কৃষ্ণপল্লির সাবওয়ের লাইনে ফাটল তৈরি হয়। প্রায় ২ ইঞ্চি ফাটল দেখা যায়। সে সময় লাইন পার হওয়ার জন্য ধারে থাকা গোপালবাবু লাইনে ধাতব কিছু ভাঙার শব্দও শুনতে পান। ইন্টারসিটি চলে যাওয়ার পরে ফাটলটি ভাল ভাবে দেখে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই লাইনে ফের একটি মালগাড়ি আসতে দেখেন গোপালবাবু। গোপালবাবু জানান, মালগাড়িটিকে আসতে দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। তখনই লাল চাদর উড়িয়ে চালকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
গোপালবাবুর অবশ্য দাবি, তাঁর জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও একই কাজ করতেন। তিনি বলেন, “মালগাড়ি আসতে দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আশেপাশে বসতি আছে, ট্রেন উল্টে গেলে বড়সড় ক্ষতি হতে পারত। তাই কিছু না ভেবেই ইঞ্জিন থামাতে চাদর উঁচিয়ে দৌড়ে যাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy