Advertisement
০২ মে ২০২৪

লম্বা ছুটি চাইলেন মন্ত্রীর সহায়ক, বিতর্ক

প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরেই বিধি ভেঙে ১৫ মাস ছুটি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কার্যনির্বাহী সহায়ক অমিত দত্তের বিরুদ্ধে। শিলিগুড়ির শিক্ষক মহলে এ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। তৃণমূলের অন্দরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অমিতবাবু খড়িবাড়ির যে দিলসারাম জোত স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে ছুটি নিয়েছেন, সেখানে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। শিক্ষকের অভাবে ওই স্কুলে পড়ুয়াদের ক্লাস বন্ধ হয়ে থাকছে বলে দাবি করা হয়েছে। অমিতবাবু স্কুল পরিদর্শকের কাছে ছুটির আবেদনের প্রতিলিপি স্কুলেও জমা দিয়েছেন।

বাগডোগরা বিমানবন্দরে গৌতম দেবের সঙ্গে অমিত দত্ত। —ফাইল চিত্র।

বাগডোগরা বিমানবন্দরে গৌতম দেবের সঙ্গে অমিত দত্ত। —ফাইল চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০১:২১
Share: Save:

প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরেই বিধি ভেঙে ১৫ মাস ছুটি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কার্যনির্বাহী সহায়ক অমিত দত্তের বিরুদ্ধে। শিলিগুড়ির শিক্ষক মহলে এ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। তৃণমূলের অন্দরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অমিতবাবু খড়িবাড়ির যে দিলসারাম জোত স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে ছুটি নিয়েছেন, সেখানে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। শিক্ষকের অভাবে ওই স্কুলে পড়ুয়াদের ক্লাস বন্ধ হয়ে থাকছে বলে দাবি করা হয়েছে। অমিতবাবু স্কুল পরিদর্শকের কাছে ছুটির আবেদনের প্রতিলিপি স্কুলেও জমা দিয়েছেন।

অমিতবাবু যেখানে যোগ দিয়েছেন সেই স্কুলে ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী। প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৪টি ক্লাস। তা ছাড়া প্রি প্রাইমারির একটি ক্লাস রয়েছে। অমিতবাবুকে নিয়ে শিক্ষক ৫ জন। তার মধ্যে এক জন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ১ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক। স্কুলে মিড ডে মিল এবং অন্য কাজে প্রধান শিক্ষককে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে তিনি সব সময় ক্লাসে যেতে পারেন না। অমিতবাবু স্কুলে না যাওয়ায় তিন জন শিক্ষক ৩ টি ক্লাসে গেলেও বাকি ক্লাসগুলিতে শিক্ষক থাকছেন না। কখনও ১ জন শিক্ষককে দু’টি ক্লাস সামলাতে হচ্ছে। তাতে পড়াশোনা ঠিক মতো করাতেও পারছেন না তাঁরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরাও।

চাকরি পাওয়ার আগে অমিতবাবু গৌতমবাবুর আপ্ত সহায়ক ছিলেন। গত ২৭ জানুয়ারি শিক্ষকতার চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে তিনি ওই পদ ছাড়েন। ৮ ফেব্রুয়ারি ৩ মাসের ছুটির আবেদন করেন। তা মঞ্জুরও হয়। ২২ দিন স্কুলে যাওয়ার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বিনা বেতনে ১৮ মে পর্যন্ত ছুটি চেয়েছেন। ছুটির আবেদনে অমিতবাবু জানান, তিনি মন্ত্রীর কার্যনির্বাহী সহায়ক হিসাবে যোগ দিচ্ছেন। সেই থেকে তিনি স্কুলেও যাচ্ছেন না। ৩ মাসের ছুটি শেষ না হতেই গত ২৯ এপ্রিল অমিতবাবু ফের ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। এ বার ১৬ মে থেকে তিনি আগামী ২০১৫ সালের ১৮ মে পর্যন্ত এক বছর ছুটি চেয়েছেন।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের পরে অন্তত ১ বছর না গেলে টানা ১৬ দিনের বেশি ছুটি মেলে না। তা হলে কী ভাবে অমিত ছুটি পেলেন?

অমিতবাবুর দাবি, “অনিয়ম করে ছুটি নিইনি। ছুটির আবেদন করেছি। এ ব্যাপারে স্কুল পরিদর্শক বা শিক্ষা দফতর থেকে যা জানানো হবে সেই মতোই চলব।” তাঁর দাবি, শিলিগুড়ির কয়েকটি স্কুলে আগেও এ ভাবে দু’এক জন ছুটি নিয়েছেন। তা ছাড়া চাকরি জীবনে তিনি ২ বছর ছুটি যে কোনও সময় নিতে পারেন বলে তাঁর দাবি। মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “ছুটির নিয়ম কানুন আমার বিস্তারিত জানা নেই। বিষয়টি শিক্ষা দফতর থেকেই দেখা হবে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেই মতো চলতে হবে।”

এ ভাবে ছুটি নেওয়া যায় কি না সে ব্যাপারে স্কুল পরিদর্শক সঞ্জীব কুমার ঘোষ জানান, সাধারণত কোনও শিক্ষক আবেদন করে ছুটি নেন। তিনি ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার পর তা অনুমোদন করার বিষয়টি দেখা হয়। তিনি বলেন, “বিনা বেতনে অমিতবাবু যখন ৩ মাস ছুটি চান তখন তা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে অনুমোদন করা হয়। পরে ১ বছর ছুটির মেয়াদ বাড়াতে যে আবেদন করেছেন সে ক্ষেত্রে কি হবে পরিষ্কার নয়। আমরা এ ভাবে ছুটি দিতে পারি না। ওই আবেদন শিক্ষা অধিকতার্র কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।” বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলার শিক্ষকদের একাংশ। মন্ত্রীর সহায়ক নিয়মের ঊর্ধ্বে কি না প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE