Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সংস্কৃতির স্বার্থে একজোট হওয়ার ভাবনা

শহরের প্রেক্ষাগৃহগুলির সংস্কার দাবি করে সরব হওয়া উচিত দলমত নির্বিশেষে। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? প্রথমে জলপাইগুড়ির সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের কথাই ধরা যাক।

দিনের আলো কমে এলে এমনই ভুতুড়ে চেহারা নেয় রবীন্দ্র ভবন। সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

দিনের আলো কমে এলে এমনই ভুতুড়ে চেহারা নেয় রবীন্দ্র ভবন। সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৭
Share: Save:

শহরের প্রেক্ষাগৃহগুলির সংস্কার দাবি করে সরব হওয়া উচিত দলমত নির্বিশেষে। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই?

প্রথমে জলপাইগুড়ির সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের কথাই ধরা যাক। পেশায় সরকারি আধিকারিক হলেও, অন্তত ৪ দশক ধরে নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত শহরের এক বাসিন্দা মাঝেমধ্যেই আক্ষেপ করে বলেন, সার্কিট বেঞ্চের আন্দোলন থেকেও আমরা কিছুই শিখলাম না। নব্বইয়ের দশকে সার্কিট বেঞ্চের দাবিতে আন্দোলনে জলপাইগুড়ির ডান-বাম সব রাজনৈতিক দলের সমথর্ক, সংগঠন একসঙ্গে সামিল হয়েছিলেন। তেমনিই সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে জড়িতরাও সব মতভেদ, গোষ্ঠী, রাজনীতি ভুলে এক হয়ে সওয়াল করলে জলপাইগুড়ির প্রধান অডিটোরিয়াম অথবা অনুষ্ঠান মঞ্চগুলি বেহাল দশায় থাকত না বলেই, ওই সরকারি আধিকারিক তথা নাট্যকর্মীর দাবি।

শহরের নবীন প্রজন্মের নাট্যকর্মী তমোজিত্‌ রায়ের কথায়, “আমার তো মনে পড়ে না, আগে কোনও দিনও শহরের সব সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি শুধুমাত্র সংস্কৃতির জন্য কোনও আন্দোলন বা দাবির প্রস্তুতি নিয়েছেন। গত বছর আর্ট গালারির বেসরকারিকরণের সময়ে অনেক সংগঠন একসঙ্গে জড়ো হয়েছিলাম বটে। তবে নানা কারণে ভুল বোঝার ফলে সে সময়ে আন্দোলন শেষ পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়নি।”

একমত ইতিহাসবিদ প্রবীণ উমেশ শর্মাও। তাঁর কথায়, “উনিশ শতকে কলকাতায় যখন প্রথম থিয়েটার তৈরি হচ্ছে, তার কিছুদিন পরেও জলপাইগুড়িতে শুরু হয়েছে নাট্যচচা। তৈরি হয়েছে রঙ্গমঞ্চ। সে সময় যা কিছু গর্বের ছিল তার অনেক কটিই এখন জীর্ণ। এই শহরে আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম যেটা করে যেতে পেরেছলেন, আমরা তা কেন পারলাম না সেটা সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। হয়তো আমাদের নিজেদের মধ্যে আরও জোটবদ্ধ মানসিকতা থাকলে এমনটা হতো না।”

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শহরের অডিটোরিয়ামগুলি নিয়ে পরিকল্পনার কোনও অভাব নেই। জলপাইগুড়ির রবীন্দ্রভবনের খোলনলচে বদলে সংস্কারের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই অনুমোদিত। প্রথম পর্যায়ের কাজের পরে বরাদ্দ থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ। বান্ধব নাট্য সমাজের তরফে তাদের হল সংস্কারের জন্য সাংসদ তহবিলে ৪২ লক্ষ টাকা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তার প্রাথমিক অনুমোদনও মিলেছে। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম সংস্কার করে অত্যাধুনিক মঞ্চ এবং দর্শক বসার আসন তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। পুরসভার তরফেও শহরে একটি মুক্ত মঞ্চ তৈরির পরিকল্পনা রাজ সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

আর্য নাট্য সমাজের সহ সম্পাদক কিংশুক বসু জানালেন, “সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে থমকে রয়েছে. আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানিয়েছি।” একই কথা জানিয়েছেন, বান্ধবনাট্য সমাজের সম্পাদক সোমনাথ পালও। তিনি বলেন, “আমরা নিজেরা পরিকল্পনা তৈরি করেই সাংসদের উন্নয়ন তহবিলের অর্থ বরাদ্দের আবেদন করেছি। শুনেছি তার অনুমোদনও মিলেছে. আমরা আশায় রয়েছি।”

তবে শহরের সংস্কৃতিপ্রেমীদের সকলেই খুব একটা আশ্বস্ত নন। বামপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মী গৌতম গুহ রায় বললেন, “বাম আমল থেকেই আর্ট গ্যালারি-সহ বেশ কয়েকটি অডিটোরিয়ামকে ঘিরে নানা প্রস্তাব পরিকল্পনার কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর কিছুই তো পূরণ হয়নি। উল্টে অবহেলা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গের মধ্যে সংস্কৃতি চর্চায় জলপাইগুড়ি এগিয়ে থাকলেও এখানে স্পনসরের অভাব রয়েছে। সেখানে সরকারেরই তো এগিয়ে আসা উচিত ছিল।”

শহরের একটি নাটকের দলের কর্ণধার মৌসুমী মজুমদার শোনালেন অন্যরকম সমস্যার কথা। বেসরকারি সংস্থার হাতে যাওয়ার আগে ওই দলটি বছরে অন্তত ২২ দিন আর্ট গ্যালারি ভাড়া করে নিজেদের প্রযোজনা এবং নাট্য উত্‌সবের আয়োজন করত। বেসরকারি হাতে যাওয়ার পরে বছর ঘুরতে চললেও একদিনও আর্ট গালারি ভাড়া নেয়নি দলটি। মৌসুমী মজুমদারের কথায়, “গ্রুপ থিয়েটারকে ভাড়ায় ছাড় দিলেও, নাটকের চূড়ান্ত মঞ্চস্থের আগে মহড়ার জন্য অন্তত দুবার বা দুদিন মঞ্চ ভাড়া করতে হয়। বেসরকারি হাতে যাওয়ার পরে ভাড়া বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আর্ট গ্যালারি আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে।”

আক্ষেপ, সমস্যা, অভিযোগের মধ্যে একটি রূপোলি রেখাও অবশ্য দেখতে পারছেন জলপাইগুড়ির বাসিন্দারা। যেন রূপকথার মতো বদলে গিয়েছে, সেই ছবিটি. সেটিই শহরবাসীর আবেগের অনেকটাই জুড়ে রয়েছে। (চলবে)

জলপাইগুড়ি শহরের প্রেক্ষাগৃহগুলি কী অবস্থায় রয়েছে?
দেখতে হলে অ্যাপ্‌ল অ্যাপ স্টোর (আইফোন/ আইপ্যাড)

অথবা
গুগল প্লে স্টোর থেকে ABP AP Appটি ডাউনলোড করে উপরের ছবিটি স্ক্যান করুন।

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড, শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১।
প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও: www.facebook.com/anandabazar.abp।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE