Advertisement
E-Paper

সচেতনতা প্রচার শুরুই হল না সেই গ্রামে

পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাসই সার, ডাইনি সন্দেহে এক মহিলাকে পিটিয়ে মারার ২৪ ঘণ্টা পরেও কালিয়াগঞ্জের গ্রামে সচেতনতা প্রচারে কেউ যাননি বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। ফলে, গ্রামের মধ্যে ডাইনি অপবাদ দিয়ে যাঁরা হইচই করেন, তাঁরাও বুক ফুলিয়ে ঘুরছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গৌর আচার্য

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৯

পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাসই সার, ডাইনি সন্দেহে এক মহিলাকে পিটিয়ে মারার ২৪ ঘণ্টা পরেও কালিয়াগঞ্জের গ্রামে সচেতনতা প্রচারে কেউ যাননি বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। ফলে, গ্রামের মধ্যে ডাইনি অপবাদ দিয়ে যাঁরা হইচই করেন, তাঁরাও বুক ফুলিয়ে ঘুরছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার মালগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের বালাবন্ত আদিবাসীপাড়া এলাকায় গিয়ে এমনই ছবি চোখে পড়েছে। কয়েকজন বাসিন্দা বললেন, “সরকারি ভাবে ডাইনি বিরোধী কোনও প্রচার তো হয়নি। আমরা তো ডাইনি, তুকতাকে বিশ্বাস করি। কাউকে ডাইনি গ্রাস করলে তাঁকে জানগুরু ও ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।” ওই বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, “গত পাঁচ বছরে ডাইনি সন্দেহে এলাকার সাত জন মহিলাকে জানগুরুর কাছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাউকেই মেরে ফেলা হয়নি।”

পেশায় দিনমজুর মহিম হেমব্রম, রবি কিস্কু ও কিরিটি পাহানরা বলেন, “গ্রামে ওঝা, জানগুরুর প্রবাব রয়েছে। তা বলে খুনের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। এবার কেন যে এক মহিলাকে ডাইনি সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হল তা বুঝতে পারছি না।”

উল্লেখ্য, এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ রয়েছেন ও গত মঙ্গলবার সুনীল পাহান নামে এক ব্যক্তি বাড়িতেই অসুস্থ হয়ে মারা যান। এর পরে ডাইনি সন্দেহে বালবন্ত আদিবাসীপাড়া এলাকার বাসিন্দা পার্বতী পাহান (৪২) নামে এক মহিলাকে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর মৃতার স্বামী নরেশ পাহানের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই দিন বিকালে ৩১ জন মহিলাকে গ্রেফতার করে। তারা সকলেই মৃতার প্রতিবেশি ও আত্মীয়। কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “জেরায় ধৃতরা ডাইনি সন্দেহে ওই মহিলাকে পিটিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করেছে। ধৃতদের ওইদিন রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।”

এদিন বালাবন্ত আদিবাসীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল এলাকা থমথমে হয়ে রয়েছে। অন্যান দিনের মতো আদিবাসী সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলারা দিনমজুরি বা চাষবাসের কাজ করতে বাইরে কোথাও যাননি। সবাই বাড়িতেই ছিলেন। এলাকায় চাপা উত্তেজনা থাকলেও পুলিশের দেখা মেলেনি। আইসি শ্রীমন্তবাবুর যুক্তি, “গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হলে আরও উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে প্রকাশ্যে পুলিশ ঘোরাঘুরি করেনি। তাঁর দাবি, “নতুন করে গোলমাল যাতে না হয়। তার জন্য বাইরে থেকে পুলিশ ওই গ্রামে নজর রেখেছে।”

নিহত পার্বতী দেবীর স্বামী পেশায় ভ্যানচালক নরেশবাবু ও ছেলে কালিয়াগঞ্জ কলেজের স্নাতক স্তরের কলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সজলের আতঙ্ক এখনও কাটেনি। এদিন দুপুরে বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে সবরকম আইনি সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সরকার। পার্বতীদেবীকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে ধৃতদের পরিবারের লোকজন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাঁদেরকে খুনের হুমকি দিচ্ছেন বলে তাঁরা প্রদীপবাবুর কাছে অভিযোগ জানান। প্রদীপবাবুর পরামর্শেই এরপর সজল এদিন বিকালে চারজন মহিলা সহ ১৭ জন প্রতিবেশির বিরুদ্ধে কালিয়াগঞ্জ থানায় খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন।

নরেশবাবু বলেন, ধৃতদের পরিবারের লোকজনেরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আমাদের খুনের হুমকি দিচ্ছেন। বাড়িতে থাকলেও আমরা আতঙ্কে নিরপত্তার অভাববোধ করছি। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ মৃতার পরিবারের উপর নজর রেখেছে।”

অন্যদিকে, ডাইনি সন্দেহে পার্বতীদেবীকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠার পর নিরক্ষরতা ও সামাজিক সচেতনতার অভাবেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের মধ্যে কুসংস্কার জাকিয়ে বসার জেরে পার্বতীদেবীকে খুন করা হয়েছে বলে মত দিয়েছিল জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। জেলাশাসক স্মিতা পান্ডে দাবি করেছিলেন, প্রশাসনের তরফে খুব শীঘ্রই বালাবন্ত আদিবাসীপাড়া এলাকায় ধারাবাহিকভাবে সেমিনার করে কুসংস্কার বিরোধী প্রচার চালানো হবে। কিন্তু বাস্তবে এদিন প্রশাসনের কোনও কর্তার পা ওই এলাকায় পড়েনি। তবে জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সহকারী সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের সভাপতি হিরু রায়ের নেতৃত্বে বিজ্ঞান মঞ্চের একটি প্রতিনিধি দল এদিন বালাবন্ত আদিবাসীপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ছোট ছোট বৈঠক করে আদিবাসীদের মধ্যে কুসংস্কার বিরোধী প্রচার চালিয়েছেন। তপনবাবুর কথায়, “আদিবাসীদের কুসংস্কারমুক্ত করতে আমরা টানা কাউন্সেলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এই কাজে জেলা প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে।” এই বিষয়ে জেলাশাসক বলেন, “রাতারাতি সেমিনারের মাধ্যমে আদিবাসীদের মধ্যে কুসংস্কার বিরোধী প্রচার চালানো সম্ভব নয়। এর জন্য অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়। খুব শীঘ্রই এই কাজ শুরু হয়ে যাবে।”

gaur acharya kaliaganj awareness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy